ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সৌম্য-সাকিবের জোড়া অর্ধশতকের পরও প্রথম ইনিংস শেষ ২৮৯ রানে

ক্রাইস্টচার্চে একদিনেই থেমে গেল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২১ জানুয়ারি ২০১৭

ক্রাইস্টচার্চে একদিনেই থেমে গেল বাংলাদেশ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ প্রথম টেস্ট ছিল অনেক ঘটনাবহুল। টানা চারদিন পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের জন্য সুখকর গেলেও বেসিন রিজার্ভের শেষদিন ছিল ভয়ানক দুঃস্বপ্নের। কিন্তু ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের প্রথম দিনটাই সুবিধার হলো না সফরকারী বাংলাদেশের জন্য। প্রথম ইনিংসে ২৮৯ রান করে গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশের ইনিংস। সৌম্য সরকার ও সাকিব আল হাসান অর্ধশতক হাঁকিয়েছিলেন বলে রক্ষা। ইনজুরির করাল থাবায় অপরিহার্য তিন ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েস, মুশফিকুর রহীম ও মুমিনুল হক এ টেস্টে খেলছেন না। সে সুযোগে আরও উজ্জীবিত হয়ে হ্যাগলি ওভালের উইকেটে ঝড় তুলেছেন নিউজিল্যান্ডের পেসাররা। তাদের দাপটেই আত্মসমর্পণ করেছে বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানরা। ক্যারিয়ারে ষষ্ঠবারের মতো ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার করেছেন টিম সাউদি, আর তার দীর্ঘদিনের সতীর্থ ট্রেন্ট বোল্ট নেন ৪ উইকেট। এমন পরিস্থিতিতেও দীর্ঘদিন পর টেস্টে মুশফিক, মুমিনুল ও ইমরুলÑ এ তিনজনকে ছাড়াই একেবারে বিধ্বস্ত পরিস্থিতি হয়নি দলের। স্বপ্ন দেখিয়েছিল ওয়েলিংটন, প্রথম ও দ্বিতীয়দিন ব্যাট করে ৮ উইকেটে ৫৯৫ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়ে ইনিংস ঘোষণা করে সেই স্বপ্নের শুরু হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যের সূত্রপাত চতুর্থদিন থেকেই। মারাত্মক ইনজুরিতে পড়েন মুশফিক ও ইমরুল। এ দু’জনকে দ্বিতীয় টেস্টের দল থেকে আগেই বাদ রাখা হয়েছিল। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন টপঅর্ডারের অন্যতম নির্ভরতা মুমিনুল। শেষ পর্যন্ত এ তিন পরীক্ষিত ও নিয়মিত ব্যাটসম্যানকে ছাড়াই শুক্রবার ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে মাঠে নামতে হয়েছে বাংলাদেশকে। এ সুযোগে টেস্ট ক্যাপ পরেছেন তরুণ ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্ত এবং উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহান। আর ইমরুলের জায়গায় সুযোগ করে নেন সৌম্য। টি২০ সিরিজে রানে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন এ বাঁহাতি। কিন্তু শুরুটা ভাল হলো না টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামার পর। হ্যাগলি ওভাল দিয়ে এবার সিরিজ শুরু করেছিল বাংলাদেশ দল। এখানে আগে ওয়ানডে খেললেও টেস্ট এই প্রথম খেলতে নেমেছে সফরকারীরা। তবে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচ খেলে শুরুর পর উইকেটের চরিত্রটা চেনা হয়ে গেছে। কিন্তু আগের টেস্টে ইনজুরিতে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ যেন ক্ষতটা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। দলীয় ৭ রানের সময় সাউদির লাফিয়ে ওঠা বল গ্লাভসে লেগে উইকেটের পেছনে ওত পেতে থাকা বিজে ওয়াটলিংয়ের হাতে জমা হলে সাজঘরে ফেরেন তিনি। এরপর তিন নম্বরে আসেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। চলতি সফরে তার ব্যাট থেকে একটিও ভাল ইনিংস আসেনি। মুমিনুল না থাকায় ব্যাটিং অর্ডারে আগেভাগেই নেমেছেন এদিন। যদিও তরুণ নাজমুল এ পজিশনেই খেলে থাকেন প্রথমশ্রেণীর ক্রিকেটে। কিন্তু একেবারেই নবাগত হিসেবে তাকে প্রথমেই চাপের মুখে ঠেলে দিতে চায়নি দল। মাহমুদুল্লাহ বেশ ইতিবাচকভাবেই শুরু করেছিলেন। তবে ধৈর্য দেখিয়ে বেশ সুস্থির হয়ে ব্যাট চালাচ্ছিলেন সৌম্য। ৩১ রানের ক্ষুদ্র জুটিটা ভাঙ্গেন বোল্ট। মাহমুদুল্লাহ এবারও হতাশ করেন মাত্র ১৯ রান করে ফিরে গিয়ে। বেশ আক্রমণাত্মক মেজাজে খেলছিলেন তিনি। মাহমুদুল্লাহ সাজঘরে ফেরার পর যেন বিপর্যয় উঁকি দিতে শুরু করে। কিন্তু তৃতীয় উইকেটে দারুণ এক জুটি গড়লেন সৌম্য ও সাকিব। অনেক আগেই টেস্ট অভিষেক ঘটলেও সৌম্য মূলত বিধ্বংসী মেজাজের ব্যাটসম্যান এবং সফলতা না পাওয়ায় এতদিন একাদশের বাইরে ছিলেন। আগে খেলা ৩ টেস্টে মাত্র ১০৭ রান করতে পেরেছেন যার মধ্যে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ছিল মাত্র ৩৭। এরপরও এবার সুযোগ পেয়েছেন ইমরুলের ইনজুরির কারণে। সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছেন দারুণভাবে। ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতক পেয়ে যান তিনি। প্রথম দিকে বেশ সুস্থির থাকলেও সাকিব উইকেটে এসে মারকুটে ব্যাটিং শুরুর পর সৌম্য যোগ দিয়েছেন। তৃতীয় উইকেটে ১২৭ রানের দারুণ এক জুটি গড়ে ওঠে। সেঞ্চুরির কাছাকাছি গিয়েও আর পারেননি সৌম্য। ১০৪ বলে ১১ চারে ৮৬ রান করার পর তাকে ফিরিয়েছেন বোল্ট। এমন একটি ম্যাচে সবগুলো ব্যাটসম্যানের ওপরই ছিল দায়িত্ব। কারণ অপরিহার্য তিনজন নেই দলে। তবে সাব্বির রহমান রুম্মান সেটা পারলেন না। আগের টেস্টের উভয় ইনিংসে অর্ধশতক পাওয়া এ ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফিরেছেন মাত্র ৭ রান করে। টানা দুই ওভারে সাব্বির ও সাকিবকে শিকার করেন দুই কিউই পেসার বোল্ট ও সাউদি। সাকিব নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ষষ্ঠ অর্ধশতক পেয়ে যান। যে কোন দেশের বিরুদ্ধে এটাই তার সর্বাধিক হাফসেঞ্চুরি। কিউইদের বিরুদ্ধে তার ব্যাটিং গড় ১৪ ইনিংসে ৬৮.৬৩। তিনি মাত্র ৭৮ বলে ৯ চারে ৫৯ রান করেন। ষষ্ঠ উইকেটে দুই অভিষিক্ত তরুণ (নুরুল ও শান্ত) ভালই সামলেছেন কিউই পেসারদের ভয়ঙ্কর সব গতিময় বলগুলো। এ জুটিতে ওঠে ৫৩ রান। শান্ত ১৮ রান করে বিদায় নিলেও দীর্ঘক্ষণ ক্রিজে থেকেছেন। সেই সুযোগে অর্ধশতকের কাছাকাছি চলে যান নুরুল। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে সর্বশেষ ৭ ইনিংসে নুরুলের ব্যাটিং গড় ছিল ১৩৩। মুশফিকের ইনজুরিতে সুযোগ পেয়ে সেটাকে ভালভাবেই কাজে লাগান তিনি। তবে আবারও ব্যাট হাতে ব্যর্থ মেহেদি হাসান মিরাজ ১০ এবং তাসকিন ৮ রানে ফিরে যান। কিন্তু নুরুলকে উপযুক্ত সঙ্গ দিয়েছেন কামরুল ইসলাম রাব্বি। টানা ১১ ওভার কাটিয়ে দেন দু’জন। ৬৩ বল খেলে ২ রান করে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফেরেন রাব্বি। আর নুরুলের অর্ধশতক পাওয়া হয়নি। ৯৮ বলে ৪৭ রানের দারুণ ধৈর্যশীল ইনিংস খেলে তিনি বিদায় নেন ৪৭ রান করে। শেষ পর্যন্ত ২৮৯ রানেই থমকে যায় বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। তখনও দিনের খেলা ৫ ওভার ৩ বল বাকি। সে সময়টুকুতে আর ব্যাট করতে নামেনি নিউজিল্যান্ড। একদিনেই বাংলাদেশের ইনিংস গুটিয়ে গেলেও অচেনা ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে বেশ ইতিবাচক ব্যাটিংই করেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে নুরুল ও শান্ত নিজেদের প্রথম টেস্টেই মেলে ধরে জানিয়ে দিয়েছেন দারুণ কিছু পেতেই পারে দল তাদের কাছ থেকে। সে সুযোগ চলতি টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসেও পাবেন তারা।
×