ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সিডনির মেলব্যাগ ॥ অজয় দাশগুপ্ত

ষড়যন্ত্রকারীরা থেমে নেই

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২১ জানুয়ারি ২০১৭

ষড়যন্ত্রকারীরা থেমে নেই

কোথাও যে সাবধান হওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে সেটা সবাই বার বার বলছেন। অনুমাননির্ভর নয় এই সাবধানতা। দুনিয়ায় এখন সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক বিমান ভ্রমণ। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীর বিমান ভ্রমণ এখন কৌতূহল ছাপিয়ে সন্দেহের জায়গা নিয়ে নিয়েছে। একাধিকবার তার বিমান ভ্রমণে যেসব কা- ঘটছে তাকে ভুতুড়ে বা হঠাৎ কিছু ভাবা বোকামি হবে। বিমানের বেলায় আমরা ষড়যন্ত্র বা চক্রান্ত বলেছি। এবার তিনি গেলেন ইতিহাদে। সেখানেও সমস্যা। জানলাম তাকে ভেতরে বসিয়ে জ্বালানি নেয়া হয়েছিল, যা রীতিমতো নিয়মবিরুদ্ধ। আমাদের দেশের প্রতাপশালী প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে এত ঘটনা ঘটার পেছনে কারা নাড়ছে কলকাঠি? যা কিনা বিমান ছাপিয়ে অন্য দেশের এয়ারক্র্যাফটের বেলায়ও অঘটনের মুখোমুখি করতে চাইছে। বলছিলাম বিমান ভ্রমণের অনিরাপদ ও সাংঘাতিক বাস্তবতার কথা। মাত্র কিছুদিন আগে ব্যক্তিগতভাবে একটি ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। থাই এয়ারওয়েজের বিশাল ডবল ডেকারটি নির্বিঘেœ ছেড়েছিল ব্যাঙ্কক। সারারাতের উড়াল। যা হয় ওঠার পরই ডিনার সার্ভ করে তারা। কয়েক দফায় এটা-ওটা আর মূল ডিনার খাবার পর সবাই কম্বলে শরীর ঢেকে ঘুমের আয়োজন করে। এটাই স্বাভাবিক। একেবারে তরুণ-তরুণী বা বাচ্চারা কিছু সময় ছোট পর্দায় গেম বা মুভি দেখার পর তারাও ঘুমিয়ে পড়ে এক সময়। আমারও চোখ লেগে এসেছিল। আবছা ঘোরের ভেতর মনে হচ্ছিল কেউ যেন কথা বলছে। তারপর মনে হলো ঝগড়া করছে কেউ। অনিচ্ছায় চোখ খুলতেই দেখি বিশালকায় এক শ্বেতাঙ্গকে নিরস্ত করতে চাইছে থাই এয়ারওয়েজের ক্রু ও বিমান সেবিকারা। কিন্তু সে কিছুতেই কথা শুনবে না। মাঝখানে যে জরুরী দরজা, যা মানুষ জীবনে কোনদিনও না খোলার জন্য দোয়া পড়তে পড়তে ভ্রমণ করে, লোকটি সেটা খোলার জন্য পাগল হয়ে উঠেছিল। দশাসই লোকটি কারও কথা শুনতে নারাজ। আমিও কাছে এগিয়ে গিয়েছিলাম। আমার মনে হচ্ছিল হয়ত এটাই হবে জীবনের শেষ যাত্রা। কারণ, লোকটি বার বার সব ভয়ঙ্কর কথা বলে সবার মনে আতঙ্কের সৃষ্টি করছিল। পরে দেখা গেল তার কাছে কিছুই নেই। নিজের মনোজাগতিক ভয় আর শরীরের কোন অজানা রোগের কারণে নাকি এই অদ্ভুত ব্যবহার। যে কারণে হোক আর যাই হোক ভয়ে প্রাণপাখি উড়ে গিয়েছিল আমাদের। ঘটনাটি বললাম এই কারণে, আকাশের উপরে অজানা মহাশূন্যে কি ঘটে বা ঘটতে পারে মাটিতে তার কল্পনাও করা যায় না অনেক সময়। আমাদের অজানা নয় সাংঘাতিক সব কা- ঘটে চলেছে আকাশে। এই ভ্রমণের ভয়াবহ দিক হলে না পারে কেউ মাটিতে লাফিয়ে পড়তে না জলে ঝাঁপ দিতে। আকাশপথে এমনও হয়েছে কয়েক শ’ যাত্রী নিয়ে উধাও হয়ে গেছে আকাশযান। সেফটি রেকর্ড বা নিরাপত্তার দিক থেকে এগিয়ে থাকা মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের হতভাগ্য যাত্রীরা কোথায় আজও কেউ জানে না। এয়ারলাইন্সের ইতিহাসে এমন রহস্যজনক অন্তর্ধান কখনও দেখা যায়নি। দুনিয়ার এত অগ্রগতি, এত প্রযুক্তি এত যে, কারিগরি উৎকর্ষের কিছুই তো কাজে লাগল না। নাকি লাগানো হয়নি? দুর্গম পর্বতমালায় ধসে পড়া বিমান খুঁজে পাওয়া গেল, তা নিয়ে সিনেমা হলো দুনিয়া কাঁপনো, আর এত বছর পর এডভান্স ওয়ার্ল্ডের মাতবররা এই হারিয়ে যাওয়া বিমানটির কোন সন্ধান দিতে পারলেন না। কে না জানে চাইলে অনেক কিছুই করতে পারে তারা। চায় না বলে অনেক কিছুই হয় না। আর চায় না বলেই এমন ভয়াবহ ঘটনাও চাপা পড়ে যায়। আমাদের দেশটি ছোট হলেও আজ তার খ্যাতি বা উন্নয়ন ধীরে ধীরে দুনিয়াকে জানিয়ে দিয়েছে। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ। এই উন্নয়নকে একশ্রেণীর মীরজাফর ও বেঈমানরা বলে সময়ের চাহিদা। সময়ের চাহিদা তো আরও অনেক কিছু, সেগুলো কি আকাশ থেকে টুপটাপ করে ঝরে পড়ছে, না মাটি ফুঁড়ে উঠে আসছে? আমাদের দেশের মতো দেশে উন্নয়ন সহজ কিছু না। বিশেষত রাজনীতি যখন মূল প্রতিবন্ধক। যে যাই বলুক দেশের রাজনীতির এক বিশাল অংশ মনে করে উন্নয়ন কোন ঘটনা না। তার চেয়ে জরুরী নিজেদের গদি। বহুকাল ধরে দেশের রাজনীতিতে পাওয়ার গেমে জনগণকে নানাভাবে ধোঁকা দেয়া সাম্প্রদায়িকতা চায় সমস্যা। তারা এবার কিছুতেই সুবিধা করতে পারছে না। কেন পারছে না? শেখ হাসিনার দৃঢ়তাই তাদের পথের কাঁটা। তিনি এ দেশের ইতিহাসের জঙ্গল সাফ করেছেন। আমাদের জাতিকে দিয়েছেন মুক্তির নতুন পথ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু যে আবর্জনা সাফ করার সুযোগ পাননি, সময় তাঁর কন্যাকে দিয়ে সে কাজ করিয়ে নিয়েছে। এতে দারুণ গোস্বা তাদের। তারা বিষ খেয়ে বিষ হজম করার মতো মেনে নিলেও তাদের চক্রান্ত আজ আকাশেও থাবা মেলেছে। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বিদেশ যাওয়ার বিমানগুলোতে একের পর এক ঘটনা বা রহস্য তাই ভয়ের। জানি না সরকারের কি পলিসি বা তারা এসব বিষয়ে কতটা কঠোর। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা বলে সরকারের ভেতর থাকে শর্ষের ভূত। এসব গায়েবি ভূতেরা দেশে একের পর এক অগ্নিকা- ঘটাচ্ছে। তারা জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দিতে চাইছে আমাদের ভবিষ্যত। তাদের উদ্দেশ্য একটাই, সরকারের বদনাম ও শেখ হাসিনাকে অজনপ্রিয় করে তোলা। সেটা যে সফলতার মুখ দেখছে না সেটাও তাদের গাত্রদাহের কারণ। জনগণ কোনভাবে সাড়া দিচ্ছে না। তারা রাস্তায় নামছে না। তাদের কোনভাবে উস্কে দিলেও কাজ হচ্ছে না। ফলে অনুমান করা কঠিন নয় তারা কি চায়? সে ষড়যন্ত্রের চাকা এখন আকাশেও থাবা মেলতে চাইছে। একের পর এক ষড়যন্ত্র বিফল হচ্ছে বটে; কিন্তু আমাদের মনে রাখা উচিত তারা যদি একবার কোনভাবে সফল হতে পারে এই দেশ ও জাতি আরও বহুকাল পিছিয়ে পড়বে। আমাদের সব অর্জন আর সফলতা মিশে যাবে অন্ধকারে। পাঠ্যপুস্তক থেকে জীবনযাপন সব জায়গায় হায়েনার কালো থাবা। বলছিলাম অন্য দেশের এয়ারলাইন্সের বিমানেও আজ স্বস্তি নেই। বিপদ ওঁৎপেতে আছে সবখানে। আমাদের প্রিয় প্রধানমন্ত্রী যতবার জীবন ফিরে পেয়েছেন তা সত্যি আশ্চর্যের । মিরাকেল হয়ত একেই বলে। আর না। এবার ভালয় ভালয় ফিরে এসে তিনি এমন কোন বিহিত করবেন যাতে আর কোন খারাপ বা উদ্বেগের কিছু শুনতে না হয়। এটা সময়ের চাহিদা। ঘুঘুকে এবার ফাঁদে না ফেললে সে ধান তো খাবেই, জানেও ছাড়বে না। সাবধানতার মার নেই। আমরা তার প্রমাণ দেখতে চাই এবার।
×