ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দিশেহারা মা

শ্বশুরবাড়িতে নির্যাতনের শিকার রুবি এখন শেকলে বাঁধা

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২১ জানুয়ারি ২০১৭

 শ্বশুরবাড়িতে নির্যাতনের শিকার রুবি এখন শেকলে বাঁধা

নিজস্ব সংবাদদাতা, পিরোজপুর, ২০ জানুয়ারি ॥ নাম তার রুবি বেগম। পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার বালিপাড়া গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের মেয়ে। ২০০৬ সালে পার্শ্ববর্তী মোরেলগঞ্জ উপজেলার চর হোগলা বুনিয়া গ্রামের হোসেন আলীর পুত্র জয়নাল উদ্দিনের সাথে পারিবারিকভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন রুবি। দুই বছর যেতে না যেতেই রুবির কোলজুড়ে আসে একটি ছেলে সন্তান। এর ঠিক দু’বছর পর আর একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। তবে রুবিকে বিয়ে করার আগে জয়নালের আর একজন স্ত্রী ও মেয়ে ছিল। সে কথা আত্মগোপন করে রুবিকে বিয়ে করে জয়নাল। দু’তিন বছর যেতে না যেতেই নানা অজুহাতে রুবির ওপর অত্যাচার নির্যাতন শুরু করে স্বামী, শাশুড়ি, ননদ ও জয়নালের প্রথম স্ত্রী। শ্বশুর বাড়ি থেকে বিভিন্ন সময় টাকা পয়সা এনে দেয়ার জন্য জয়নাল চাপ দেয় রুবির ওপর। নিরুপায় হয়ে রুবি ভাইদের কাছ থেকে মাঝে মধ্যে কিছু টাকা পয়সা এনে দিলেও তাতে মন ভরেনি জয়নালের। রুবিকে তাড়ানোর জন্য জয়নালের পরিবারের অত্যাচারের মাত্রা দিনদিন বাড়তে থাকে। এভাবে কেটে যায় ৮টি বছর। অত্যাচার নির্যাতনে প্রায় ৭ মাস আগে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে রুবি। সারাদিন সে আবোল তাবোল প্রলাপ বকে এবং দিগি¦দিক ছুটোছুটি করতে থাকে। এ অবস্থায় রুবি ছয় মাস আগে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে এবং শ^শুর বাড়ির লোকজন তাকে পাগল বলে তাড়িয়ে দেয়। রুবি বর্তমানে তার মায়ের আশ্রয়ে রয়েছেন। তার বৃদ্ধ মা হালিমা খাতুন মানসিক ভারসাম্যহীন এ মেয়েকে নিয়ে পড়েছেন চরম অসুবিধার মধ্যে। রুবিকে সারাক্ষণ শেকলে বেঁধে রাখতে হচ্ছে। প্রায় ৩ মাস যাবত হাতে শেকল বাঁধা অবস্থায় দিন কাটছে তার। রুবির উন্নত চিকিৎসার জন্য তার মায়ের আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় দিনদিন তার অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। রুবির প্রথম সন্তানের বয়স এখন ৭ বছর এবং দ্বিতীয় সন্তানের বয়স ৩ বছর। বড় সন্তান বর্তমানে তার পিতার কাছে রয়েছে। সন্তানরা মায়ের কাছে গেলে হাতে শেকল পরা অবস্থায় তাদের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে রুবি। এ অবস্থায় রুবির মা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে নালিশ দিলে পাগল রুবিকে নিয়ে সংসার করবে না বলে জানায় জয়নাল। এ জন্য জয়নাল স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে ২৫ হাজার টাকা দেয় রুবিকে তালাকের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা করানোর জন্য। এতে রাজি হননি রুবির মা। বিষয়টি নিয়ে এরআগেও স্থানীয়ভাবে সালিশ বৈঠক বসলেও তাতে কোন কাজ হয়নি। এ ব্যাপারে রুবির মা হালিমা খাতুন বলেন, আমার মেয়েটাকে ওরা বছরের পর বছর ধরে অত্যাচার করে পাগল বানিয়ে ঘর থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। দুইটা সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়েও ওদের কোন মায়া হয় না। মেয়েটি এখন ভারসাম্যহীন এবং দুই মাস আগে গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যায়। মেয়েটিকে নিয়ে এখন আমি কোথায় যাব কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। রুবির ভাই রুবেল হাসান জানান, জয়নাল ও তার মা লোভী প্রকৃতির। আমাদের বাড়ি থেকে বিভিন্ন সময় টাকা পয়সা এনে দেয়ার জন্য আমার বোনের ওপর নির্যাতন চালাত। আমরা যখন যে টুকু পেরেছি সাধ্যমতো দিয়েছি বোনের সুখের জন্য কিন্তু সুখ ওর কপালে নেই, ওর শাশুড়ি, ননদ আর ওর স্বামী খুব খারাপ তারজন্যই এখন ওর এ অবস্থা। এ ব্যাপারে রুবির স্বামী জয়নালের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। ৩নং বালিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন এ ব্যাপারে বলেন, উভয়পক্ষই এরআগে আমার কাছে এসেছিল। আমি উভয়পক্ষকে নিয়েই বিষয়টির একটা মীমাংসার জন্য চেষ্টা চালিয়ে ছিলাম, কিন্তু মেয়েটি যে অবস্থা তাতে এখন আর কি করব ।
×