ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রতি দুই থানার দায়িত্বে থাকছেন একজন এএসপি

ঢেলে সাজা হচ্ছে পুলিশ প্রশাসনের অর্গানোগ্রাম

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২১ জানুয়ারি ২০১৭

ঢেলে সাজা হচ্ছে পুলিশ প্রশাসনের অর্গানোগ্রাম

সমুদ্র হক ॥ পুলিশ প্রশাসনকে আরও গতিশীলতায় আনতে আধুনিকায়ন করে ঢেলে সাজা হচ্ছে। ইতোমধ্যে অর্গানোগ্রামের (সাংগঠনিক কাঠামো) কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও পুনর্গঠন করে দুই ভাগ করা হয়েছে। পুলিশের নতুন অর্গানোগ্রামে প্রতিটি জেলার দুটি করে থানার তদারকির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে একজন করে সহকারী পুলিশ সুপারকে (এএসপি)। থানার গুরুত্ব বুঝে দুই থানার এ দায়িত্ব দেয়া হয় একজন করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে। মেট্রোপলিটন এলাকায় প্রতি দুই থানার দায়িত্ব পান একজন করে সহকারী পুলিশ কমিশনার। একই ভাবে গুরুত্ব বুঝে দুই থানার দায়িত্ব পান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার। গত নবেম্বর থেকে এ অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী সারাদেশে পুলিশ প্রশাসনে দুই থানায় একজন করে এএসপি অথবা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে প্রতিটি জেলায় কয়েক থানা মিলে গঠিত একেকটি সার্কেলের দায়িত্ব পালন করতেন একজন করে এএসপি। বর্তমানে প্রতিটি থানায় ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার দুজন করে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের একজন ওসি তদন্ত। শীঘ্রই থানার জনবল বাড়ানো হচ্ছে। প্রতিটি সদর থানায় আরও দুজন করে ওসি দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন, যাদের একজন হবেন ওসি প্রশাসন। আরেকজন ওসি অপারেশন। তারাও ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার হবেন। অন্যান্য থানা, ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ (ডিবি), সিআইডিতে তিনজন করে ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া হবে। পুলিশ ফাঁড়িগুলোর প্রশাসন আপগ্রেড করা হয়েছে। পুলিশ ফাঁড়িগুলোর দায়িত্বপাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে আছেন ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার কর্মকর্তা। আগে এ দায়িত্ব পালন করতেন সাব-ইন্সপেক্টর। এদিকে পুলিশের সকল স্তরে নিয়মিত বাহিনীর সঙ্গে ’১৪ সালে প্রতিটি জেলায় পুলিশের নতুন এক ইউনিট যাত্রা শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) আদলে গঠন করা হয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। প্রতি বছর সারাদেশে গড়ে ৬০ হাজার মামলা দায়ের হয়। মামলার গুরুত্ব বুঝে জট কমাতে পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। কখনও পিবিআই গুরুত্ব বুঝে নিজেই তদন্তের দায়িত্ব নেয়। ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেলের (ডিআইজি) নেতৃত্বে অতিরিক্ত ডিআইজি, পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সহকারী পুলিশ সুপার, ইন্সপেক্টর, সাব-ইন্সপেক্টর, সহকারী সাব-ইন্সপ্টের, কনস্টেবল নিয়ে গঠিত হয়েছে এ বাহিনী। এছাড়াও পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে আলাদাভাবে গঠিত হয় ট্যুরিস্ট পুলিশ। তাবে ট্যুরিস্ট পুলিশের সংখ্যা খুব কম। হাইওয়ে পুলিশ আগে থেকেই আছে। অতিসম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পুনর্গঠন করে দুই ভাগ করা হয়েছে। সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ আদেশ জারি করা হয়। এতে বলা হয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বর্তমানে দুই ভাগে থাকবে। ১. জননিরাপত্তা বিভাগ। ২. সুরক্ষা সেবা বিভাগ। পৃথক দুই সচিবের অধীনে দুই বিভাগ পরিচালিত হবে। জননিরাপত্তা বিভাগের অধীনে থাকবেÑ বাংলাদেশ পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড, ট্যুরিস্ট পুলিশ, তদন্ত সংস্থা, গোয়েন্দা বিভাগ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন্স মনিটরিং সেন্টার। সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে থাকছেÑ বহিরাগমন পাসপোর্ট অধিদফতর, কারা অধিদফতর, বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। সূত্র জানায়, গত বছরের ১০ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ দুই বিভাগের কার্য বণ্টন ও জনবল কাঠামো অনুমোদন দিয়েছে। বছরকয়েক ধরেই পুলিশের অর্গানোগ্রামকে (সাংগঠনিক কাঠামো) পরিবর্তনের চেষ্টা চলছে। ’১৫ সালে একটি সাংগঠনিক কাঠামো অনুমোদনও করা হয়। পরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের আপত্তির মুখে পরিবর্তনের প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয়। ওই সাংগঠনিক কাঠামোয় বলা হয়, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) স্বপদে বহাল রেখে প্রতিটি থানায় তদারকি কর্মকর্তা হিসেবে একজন করে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ও মেট্রোপলিটন এলাকার থানায় সহকারী পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হবে। থানার গুরুত্ব বুঝে সহকারী পুলিশ সুপারের জায়গায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে দায়িত্ব দেয়া হতে পারে। ’১৫ সালের অক্টোবরে পাইলট প্রকল্প হিসেবে ঢাকা মহানগরীর মতিঝিল, শাহবাগ ও গুলশান থানায় একজন করে সহকারী পুলিশ কমিশনার নিয়োগ দেয়া হয়। পরে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা হয়। কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন সময়ে ক্যাডার কর্মকর্তাদের থানায় দায়িত্ব দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। এর লক্ষ্য উপজেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তাই প্রথম শ্রেণীর। সেখানে ক্যাডারভুক্ত পুলিশের কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়ে প্রথম শ্রেণীর পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমতায় আনা। পরে পুলিশ ইন্সপেক্টরের নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদেরও প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা দেয়া হয়। পুলিশ প্রশাসনের সাংগঠনিক কাঠামোকে আধুনিকায়ন করে ঢেলে সাজার প্রক্রিয়া শুরু হয় ’১০ সালে। বর্তমানে কিভাবে পুলিশ বাহিনীকে আরও আধুনিকায়ন করে গতিশীল করা যায় তার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। একই সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনে ভাল কাজের সম্মাননা দিতে বিপিএম ও পিপিএিম পদক প্রদান করা হচ্ছে। প্রতি বছর এ পদক প্রদান করা হয়।
×