ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভারতের প্রতি তোফায়েল

পাটপণ্য রফতানিতে উচ্চ শুল্ককর প্রত্যাহার চাই

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২১ জানুয়ারি ২০১৭

পাটপণ্য রফতানিতে উচ্চ শুল্ককর প্রত্যাহার চাই

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পাটপণ্য রফতানির ওপর ভারতের আরোপকৃত উচ্চহারের শুল্ককর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের বিশ্বস্ত বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সেনাবাহিনী ও সাধারণ জনগণ বাংলাদেশের পক্ষে অংশগ্রহণ করে শহীদ হয়েছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এটা বিরল ঘটনা। শুধু তাই নয়, দেশ স্বাধীনের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ভারত থেকেই প্রথম ১০০ কোটি ডলার ঋণ পেয়েছিলেন। সর্বশেষ ঐতিহাসিক মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির মাধ্যমে ছিটমহল সমস্যার সমাধান হয়েছে। তাই সামান্য পাটপণ্য রফতানির ওপর ভারতের এ্যান্টি-ডাম্পিং করে শুল্কারোপ করা ঠিক হয়নি। দেশের রফতানি বাণিজ্যের স্বার্থে দ্রুত এই শুল্ককর প্রত্যাহার হওয়া উচিত। শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (আইডিইবি) মুক্তিযুদ্ধ মিলনায়তনে ‘ইউনিটি অব ডাইভারসিটি ইন ইন্ডিয়া’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ভারতের ৬৮তম প্রজাতন্ত্র দিবস সামনে রেখে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ইমেরিটাস ড. একে আজাদ চোধুরীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতির সেক্রেটারি জেনারেল সুবির কুশারী ও ৭১ টিভির প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল হক বাবু। তোফায়েল আহমেদ বলেন, ভারত সব সময় বাংলাদেশের বিশ্বস্ত বন্ধু। হিমালয় থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত বিস্তৃত এই আয়তনে ভারত বিশ্বের বড় রাষ্ট্রগুলোর একটি। অর্থনৈতিকভাবে অনেক শক্তিশালী এই ভারত। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের আজকের যে অর্থনৈতিক অগ্রগতি তার পেছনে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের অবদানই বেশি। মুক্তিযুদ্ধে ভারত অস্ত্র, অর্থ, আশ্রয় ও খাদ্যসহ বিভিন্ন সামগ্রী দিয়ে সহযোগিতা করেছে। তিস্তা ছাড়া দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান প্রায় সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ভারতের বড় বাজার বাংলাদেশ। বাণিজ্য ঘাটতি চীনের সঙ্গে বেশি হলেও সবাই শুধু ভারতের কথা বলে। অথচ আমাদের স্বার্থেই আমরা কম খরচে ভারত থেকে পণ্য আমদানি করে থাকি। প্রতিবছর ভারত এদেশে ৭ বিলিয়ন ডলার রফতানি করছে। আর চীনের রফতানির পরিমাণ প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার। আবার যুক্তরাষ্ট্রে আমরা ৬ বিলিয়ন ডলার রফতানি করলেও তারা করছে মাত্র ১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। ঠিক তেমনি ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশ ১৮ বিলিয়ন ডলার রফতানি করছে। বিপরীতে আমদানি হচ্ছে মাত্র ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। সুতরাং, বাণিজ্য ঘাটতি থাকা মানেই কিন্তু বৈষম্য নয়। তিনি হর্ষবর্ধন শ্রিংলাকে উদ্দেশ করে বলেন, দ্রুত পাটপণ্য রফতানির ওপর এ্যান্টি-ডাম্পিং আরোপের বিষয়টি সুরাহার উদ্যোগ নিন। ভারত অনেক বড় রাষ্ট্র, বিশ্বস্ত বন্ধু, ইতোমধ্যে অনেক পণ্য কোটা ও শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় রফতানি হচ্ছে। একমাত্র মদ ও এ্যালকোহল ছাড়া সব ধরনের পণ্য ভারতে রফতানির সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, এ্যান্টি-ডাম্পিংয়ের কারণে প্রতিটনে ৩০০ ডলার পর্যন্ত বেশি গুনতে হচ্ছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, চারদেশীয় সড়ক যোগাযোগ চুক্তি বিবিআইএন করা সম্ভব হলে বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান ও নেপালের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়বে। পাটপণ্য রফতানিতে ॥ বিশেষ অতিথির বক্তব্যে হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, মুজিব-ইন্দিরার সময় দু’দেশের মধ্যে যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল তা আজও অটুট আছে। ভারতের সরকার পরিবর্তন হলেও বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্কের কোন ঘাটতি তৈরি হয়নি। মোদি-হাসিনা সরকারের মধ্যেও এখন সুসম্পর্ক বজায় রয়েছে। এই সময়ে ঐতিহাসিক ছিটমহল সমস্যার সমাধান হয়েছে। আরও যেসব সমস্যা রয়েছে তাও সমাধান হয়ে যাবে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে ভারতের সেনাবাহিনী ও সাধারণ জনগণ লড়াই করেছে। সেই সম্পর্ক এখনও অটুট রয়েছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। ড. একে আজাদ চৌধুরী বলেন, ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। মুজিব-ইন্দিরা থেকে শুরু করে মোদি-হাসিনা সব সময়ই বাংলাদেশের পাশে ছিল ভারত। মুক্তিযুদ্ধে এদেশটি আমাদের পাশে থেকে দেশ স্বাধীনে সহযোগিতা করেছে। দু’দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে মিল রয়েছে।
×