ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে ফের ব্যস্ততা

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২১ জানুয়ারি ২০১৭

পদ্মা সেতুর মাওয়া  প্রান্তে ফের  ব্যস্ততা

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে আবার ব্যস্ততা চলছে। মাওয়া প্রান্তের দুই, তিন, চার ও পাঁচ নম্বর পিলারে পাইল স্থাপনের প্রস্তুতিমূলক কাজ চলছে পুরোদমে। এখন এই চার পিলারে পাইল স্থাপন করা নিয়ে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। আর জাজিরা প্রান্তের কর্মযজ্ঞ তো রয়েছেই। প্রকৌশলীরা জানান, সবমিলিয়ে নির্মাণযজ্ঞ ব্যাপক আকার ধারণ করছে। ঢাকার সেতু ভবনে বিশেষজ্ঞ প্যানেলের বিশেষ সভায় চারটি পিলার এবং জাজিরা প্রান্তের ৪০ নম্বর মোট পাঁচটি পিলারের চূড়ান্ত ডিজাইন অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, মাওয়া প্রান্তে আবার পাইল ড্রাইভ করার জন্য পুরো আয়োজন চলছে এখন। এছাড়া মাওয়া প্রান্তে নদী শাসনের কাজও চলছে পুরোদমে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডিজাইন চূড়ান্ত না করাসহ সিদ্ধান্তের বিলম্বের কারণে পাইল স্থাপনে ধীরগতি চলছিল। যা ইতোমধ্যেই জনকণ্ঠে প্রকাশ হয়। ১২ জানুয়ারি বিশেষজ্ঞ প্যানেলের বিশেষ সভায় অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীসহ বাংলাদেশী পাঁচ বিশেষজ্ঞ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া এই বিদেশী তিন পরামর্শক অংশ নেন। এই সভায় পাঁচটি পিলারের ডিজাইন চূড়ান্ত ছাড়াও এর আগে আরও পাঁচ পিলারের ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়। এ নিয়ে ৪২ পিলারের মধ্যে ১০ পিলারের ডিজাইন চূড়ান্ত করা হলো। এর আগে ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪১ ও ৪২ নম্বর পিলারের ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, সাত মাসের বেশি সময় ধরে মাওয়া প্রান্তে মূল পাইল স্থাপনের কাজ বন্ধ ছিল। গত বর্ষায় তীব্র ¯্রােতের আশঙ্কায় মাওয়া প্রান্তে পাইলের কাজ সরিয়ে নেয়া হয় ¯্রােতহীন জাজিরা প্রান্তে। কিন্তু শুষ্ক মৌসুম এলেও এই প্রান্তে নানা কারণে পাইল স্থাপনের কাজ শুরু হয়নি। আজ শনিবার পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালকসহ উর্ধতনরা মাওয়ায় আসছেন কাজের অবস্থা দেখতে। এদিকে এ পর্যন্ত পদ্মা সেতুর জাজিরা তীরের ৪২ নম্বর পিলারের ৩টি পাইলসহ ৪০টি পাইল স্থাপন হয়েছে। আর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারে কংক্রিটিংয়ের কাজ চলছে। এছাড়া জাজিরা প্রান্তে ভায়াডাক্টের (সংযোগ সেতু) ৪৩টি পাইল স্থাপন হয়েছে। মূল সেতুর পাইলের জন্য ২৪০টি ভারি স্টিলের টিউব প্রয়োজন। এর মধ্যে ১৮০টি টিউবই তৈরি হয়েছে। মাওয়ার কুমারভোগের বিশেষ ওয়ার্কশপে এই পাইলের টিউব তৈরির কাজ চলছে। পাইল ড্রাইভ বিলম্ব হওয়ার কারণে টিউবগুলো এখন পদ্মায় ভাসছে। এদিকে নদী শাসনের কাজেও গতি আনা হচ্ছে। মাওয়ার কুমারভোগের বিশাল এ্যাসেম্বলি ওয়ার্কশপে এখন দুই নম্বর এবং তিন নম্বর একই সঙ্গে দুটি স্প্যান (১৫০ মিটার দীর্ঘ সুপার স্ট্রাকচার ) ফিটিং করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত চারটি স্প্যান (১৫০ মিটার দীর্ঘ সুপার স্ট্রাকচার) চীন থেকে এসেছে। এর মধ্যে একটি স্প্যান জোড়া লাগানো এবং লোড টেস্ট সম্পন্ন। এখন স্থাপন করা বাকি। ভাসমান ক্রেনসহ সব প্রস্তুত সত্ত্বেও ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় এটি স্থাপন করা যাচ্ছে না। এই স্প্যানের ভেতর দিয়েই যানবাহন ও ট্রেন চলবে। এ রকম ৪১টি ¯প্যান স্থাপন করা হবে পদ্মা সেতুর পিয়ারের (পিলার) ওপর। কিছুটা সোনালি, কিছুটা হলদে রঙের আরও দুটি ¯প্যান প্রস্তুত হওয়ার পথে। বাকি স্প্যান চীনে প্রস্তুত হয়েছে এবং হচ্ছে। এগুলো পর্যায়ক্রমে সমুদ্রপথে নিয়ে আসা হচ্ছে। এ্যাসেম্বলি ওয়ার্কশপের সামনে দাঁড়ালে মনে হবে, প্রস্তুত হওয়া ¯প্যানটি যেন একটি সেতু। সেখানে কিছু সময় থাকলে পদ্মা সেতুর একটি কাল্পনিক চিত্র মনের অন্তরালে উঁকি দেবে। পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কংক্রিটের তৈরি স্তম্ভের ওপর প্রস্তুত হওয়া ¯প্যানটি অস্থায়ীভাবে বসানো হয়েছে। শীতের সোনালি রোদে সোনারঙের ¯প্যানটি জ্বলজ্বল করছিল। শীঘ্রই চীন থেকে পাঁচ নম্বর স্প্যান রওনা হচ্ছে। আরও স্প্যান তৈরি চলছে চীনে। এদিকে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগেই সুফল পাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। ৮ জানুয়ারি পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের এ্যাপ্রোচ সড়ক আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেয়া হয়েছে। এবং ১৫ জানুয়ারি কাঁঠাবাড়ি ঘাট উদ্বোধন করা হয়েছে। এতে শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি ফেরি রুটের দূরত্ব প্রায় পাঁচ কিলোমিটার কমেছে। বিলুপ্ত হচ্ছে কাওড়াকান্দি ফেরিঘাট। এখন এই ফেরি সার্ভিসের নামকরণ হয়েছে-শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি ইলিয়াস চৌধুরী ফেরি রুট। এই ফেরি রুটের দূরত্ব হবে ৯ কিলোমিটারের কম। এখন পারাপারে গড়ে সময় লাগবে এক ঘণ্টা। আগের প্রায় ১৪ কিলোমিটার ফেরিপথ পাড়ি দিতে গড়ে সময় খরচ হতো প্রায় দেড় ঘণ্টা। নতুন এই ফেরিরুটে সময় এবং ভাড়া দুই-ই হ্রাস পেয়েছে। ঘাটে যানজটও নেই। যানবাহনের অপেক্ষায় থাকছে ফেরিগুলো। তাই পদ্মা সেতু চালুর আগেই এই সুবিধা সৃষ্টি হওয়ায় খুশি এই রুটে চলাচলকারী যাত্রীসাধারণ। এদিকে এ্যাসেম্বলি ওয়ার্কশপে চলছে স্প্যান জোড়া লাগানোর কাজ। এ পর্যন্ত চারটি স্প্যান (১৫০ মিটার দীর্ঘ সুপার স্ট্রাকচার) চীন থেকে এসেছে। এর মধ্যে একটি স্প্যান জোড়া লাগানো এবং লোড টেস্ট সম্পন্ন। এখন স্থাপন করা বাকি। ভাসমান ক্রেনসহ সব প্রস্তুত সত্ত্বেও ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় এটি স্থাপন করা যাচ্ছে না। এই স্প্যানের ভেতর দিয়েই যানবাহন ও ট্রেন চলবে। এ রকম ৪১টি ¯প্যান স্থাপন করা হবে পদ্মা সেতুর পিয়ারের (পিলার) ওপর। কিছুটা সোনালি, কিছুটা হলদে রঙের আরও দুটি ¯প্যান প্রস্তুত হওয়ার পথে। বাকি স্প্যান চীনে প্রস্তুত হয়েছে এবং হচ্ছে। এগুলো পর্যায়ক্রমে সমুদ্রপথে নিয়ে আসা হচ্ছে। পদ্মার ওপারে নাওডোবা থেকে পাঁচ্চর মোড় পর্যন্ত জাজিরা ফোর লেন সংযোগ সড়কের ১২ কিলোমিটারের মধ্যে কাজ শেষ হয়েছে ১১ কিলোমিটার। এ সড়কের মাঝখানে রয়েছে ডিভাইডার। ভারত থেকে আনা পাকুর পাথর এ সংযোগ সড়কে ব্যবহার করা হয়েছে। যা দেশের অন্যতম সেরা শক্তিশালী ও টেকসই সড়ক বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। জাজিরা সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাইড ইঞ্জিনিয়ার সাইফুর রশীদ জানান, তাদের আবুল মুনেম ঠিকাদারি কো¤পানির দীর্ঘ তিন বছরের প্রচেষ্টায় মূল পদ্মা সেতুর জাজিরা সংযোগ সড়কের কাজ শেষ হচ্ছে। এ কাজে বাজেট ছিল ১২শ’ কোটি টাকা। এ সংযোগ সড়কে ২০ কালভার্ট, ৮ আন্ডারপাস ও ৫ ছোট ব্রিজ রয়েছে। সেতুকে ঘিরে বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্র তৈরির মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নত হবে বলে জানান তিনি।
×