ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্ব এজতেমার দ্বিতীয় পর্ব ॥ কাল আখেরি মোনাজাত

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২১ জানুয়ারি ২০১৭

বিশ্ব এজতেমার দ্বিতীয় পর্ব ॥ কাল আখেরি মোনাজাত

মোস্তাফিজুর রহমান টিটু/নুরুল ইসলাম, টঙ্গীর বিশ্ব এজতেমা ময়দান থেকে ॥ টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে চারদিন বিরতি দিয়ে শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) শুরু হয়েছে পবিত্র হজের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় জমায়েত তাবলীগ জামাতের তিন দিনব্যাপী বিশ্ব এজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। পথে পথে নানা ভোগান্তি উপেক্ষা করে দেশের ১৬ জেলা থেকে মুসল্লিদের কাফেলা আসছে টঙ্গীর বিশ্ব এজতেমা স্থলে। ইতোমধ্যে অগণিত ধর্মপ্রাণ মুসল্লির অংশগ্রহণ ও মুসল্লিদের আগমনে টঙ্গীর এজতেমাস্থল এবং আশপাশের এলাকা এখন মুসল্লিদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। এজতেমা স্থলে মুসল্লিদের এবাদত বন্দেগিতে মশগুল আবহ বিরাজ করছে। শিল্পনগরী টঙ্গী এখন যেন ধর্মীয় নগরীতে পরিণত হয়েছে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মুসল্লিরা জামাতভুক্ত হয়ে এখনও এজতেমা স্থলের দিকে ছুটে আসছেন। আসছেন বিদেশী মুসল্লিরাও। শুক্রবার জুমার বার হওয়ায় লাখো মুসল্লির ঢল নামে টঙ্গীর তুরাগ তীরে। নামাজের আগেই এজতেমার পুরো প্যান্ডেল ও ময়দান কানায় কানায় ভরে যায়। প্যান্ডেলের নিচে জায়গা না পেয়ে মুসল্লিরা অংশ নেন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ আশপাশের সড়ক ও গলিগুলোর ওপরে। রবিবার আখেরি মোনাজাতের পূর্ব মুহূর্তে পর্যন্ত মুসল্লিদের এ ঢল অব্যাহত থাকবে। এদিকে এজতেমার অন্যতম আকর্ষণ যৌতুকবিহীন বিয়ে এবারের এ পর্বেও অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। কাল (রবিবার) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে প্রথম পর্বের তিন দিনব্যাপী বিশ্ব এজতেমা শেষ হবে। এবারের বিশ্ব এজতেমার প্রথম পর্বে লাখ লাখ মুসল্লির সঙ্গে বিশ্বের প্রায় ৬৯ দেশের প্রায় দেড় হাজার মুসল্লি উপস্থিত হয়েছেন। শুক্রবার বাদ ফজর তাবলীগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বি ভারতের (দিল্লী) মাওলানা মোহাম্মদ শামীমের আ’মবয়ানের মধ্য দিয়ে টঙ্গীর তুরাগ তীরে শুরু হয়েছে বিশ্ব এজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। মূলমঞ্চ থেকে উর্দু ভাষায় দেয়া তার এই বয়ান বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা মোঃ নুর রহমান। এছাড়াও বাংলার পাশাপাশি একইসঙ্গে বয়ান বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ (তরজমা) করে প্রচার করা হয়। শুক্রবার দুপুরে বৃহত্তম জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। দিল্লী মারকাজের আমির মাওলানা মোহাম্মদ সা’দ নামাজে ইমামতি করেন। এতে লাখ লাখ মুসল্লি অংশ নেন। বিশ্ব এজতেমার দ্বিতীয় পর্বে পুরো ময়দানকে ২৬ খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। এতে ঢাকাসহ (একাংশ) দেশের ১৭ জেলার মুসল্লিরা অংশ নিচ্ছেন। এদিকে নিরাপত্তা চাঁদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে পুরো বিশ্ব এজতেমা ময়দানকে। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা যাতে টঙ্গীর বিশ্ব এজতেমা স্থলে স্বাচ্ছন্দ্য এবং নিরাপদে পৌঁছতে পারে সেজন্যও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গাজীপুরে র‌্যাব ও পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। রবিবার (২২ জানুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব এজতেমা। মোনাজাতের আগ পর্যন্ত তাবলীগ জামাতের শীর্ষ স্থানীয় মুরব্বিরা পর্যায়ক্রমে আখলাক, ঈমান ও আমলের উপর বয়ান পেশ করবেন। বিশ্ব এজতেমার অন্যতম আকর্ষণ যৌতুকবিহীন বিয়ে এ পর্বের দ্বিতীয় দিনেও অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। বৃহত্তম জুমার নামাজ ॥ বিশ্ব এজতেমার শুরুর দিন জুমা বার হওয়ায় এজতেমা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে বৃহত্তম জুমার জামাত। জুমা নামাজের ইমামতি করেন তাবলীগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বি দিল্লীর মারকাজের শূরা সদস্য হযরত মাওলানা মুহাম্মদ সা’দ। এজতেমায় যোগদানকারী মুসল্লি ছাড়াও জুমার নামাজে অংশ নিতে ঢাকা-গাজীপুরসহ আশপাশের এলাকার লাখ লাখ মুসল্লি এজতেমা স্থলে হাজির হন। ভোর থেকেই রাজধানীসহ আশপাশের এলাকা থেকে এজতেমা মাঠের দিকে মানুষের ঢল নামে। জুমার নামাজ আদায় করতে রাজধানীর আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুলসংখ্যক মুসল্লি ছুটে আসেন। এজতেমার মাঠ উপচিয়ে জামাত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডের পাশ ঘেঁষে এজতেমা মাঠের উত্তর দিকের রাস্তায়ও জামাত দাঁড়ায়। মূল প্যান্ডেলে জায়গা না পেয়ে অগণিত মুসল্লিদের রাস্তায় কিংবা মহাসড়ক ও খোলা জায়গার উপর খবরের কাগজ, জায়নামাজ, পলিথিন ও হোগলা বিছিয়ে নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে। তবে এ বছর থেকে দেশের ৬৪ জেলার এজতেমা চার পর্বে অনুষ্ঠিত হওয়ায় এবারের এজতেমার দ্বিতীয় পর্বের জুমায় তুলনামূলক কম সংখ্যক মুসল্লি শরিক হয়েছেন। বাদ ফজর হতে মাগরিব পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে দেশ-বিদেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমগণ ঈমান, আমল ও দাওয়াতের মেহনত সম্পর্কে অত্যান্ত ফজিলতপূর্ণ সারগর্ভ বয়ান করেন। দ্বিতীয় দফার প্রথম দিনে যারা বয়ান করেন ॥ দ্বিতীয় পর্বের প্রথম দিন শুক্রবার বাদ ফজর ভারতের (দিল্লী) মাওলানা মোহাম্মদ শামীম, তার বয়ান বংলায় তর্জমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা মোহাম্মদ নুর রহমান। বাদ জুমা থেকে বাংলাদেশের মাওলানা রবিউল হক এবং বাদ আসর থেকে পাকিস্তানের মাওলানা এহসানুল হক ও দিল্লীর মারকাজের শূরা সদস্য হযরত মাওলানা মুহাম্মদ সা’দসহ অন্য মুরব্বিগণ পর্যায়ক্রমে বয়ান করেন। প্রথম দিনের বয়ানে যা বলা হয় ॥ বয়ানে বলা হয়, জুমারদিন, একটি পবিত্রদিন, সপ্তাহের সেরা দিন। সবচেয়ে উত্তম দিন হলো জুমার দিন। এটি হলো সবচেয়ে বড় ও সম্মানী দিন। এটি দুই ঈদের চেয়েও ফজিলতপূর্ণ। এদিনে হযরত আদমকে (আ.) সৃষ্টি করা হয়। এদিনই দুনিয়া ধ্বংস হবে। এদিনে আল্লাহ্র কাছে যা চাইবে, আল্লাহ তা তাকে দেবেন। জুমার নামাজ আদায়ের লক্ষ্যে গোসল-ওজু করে মসজিদের উদ্দেশে রওনা হওয়ার পর থেকে তার নেকি লেখা হয়। আমরা যা করব আল্লাহকে রাজি করার জন্য করব। আল্লাহপাকের হুকুম মতো আমরা যেন সারা জীবন চলতে পারি সে চেষ্টা করতে হবে। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশে ও সারা দুনিয়ায় মানুষের মাঝে দীন কায়েম করার জন্য ছড়িয়ে পড়তে হবে। বিভিন্ন ভাষায় বয়ানের তাৎক্ষণিক অনুবাদ ॥ বিশ্ব এজতেমায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের তাবলীগ মারকাজের ১৫-২০ শূরা সদস্য ও বুজর্গ পর্যায়ক্রমে বয়ান পেশ করেন। মূল বয়ান উর্দুতে হলেও বাংলা, ইংরেজী, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কী ও ফরাসী ভাষায় তাৎক্ষণিক অনুবাদ হচ্ছে। বিদেশী মেহমানদের জন্য মূল বয়ান মঞ্চের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বপাশে হোগলা পাটিতে বসেন। বিভিন্ন ভাষাভাষী মুসল্লিরা আলাদা আলাদা বসেন এবং তাদের মধ্যে একজন করে মুরব্বি মূল বয়ানকে তাৎক্ষণিক অনুবাদ করে শুনান। গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ জানান, সিসি টিভি পরিচালনার ক্ষেত্রে সাময়িক বিঘিœত হলেও নিরাপত্তার কাজে বড় ধরনের কোন সমস্যা হয়নি। কারণ প্রত্যেকটি জায়গায় পোশাকে ও সাদা পোশাকে আমাদের পুলিশ নিয়োজিত রয়েছে। এজতেমাস্থলে বিদ্যুত বিভাগের কন্ট্রোলরুমে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোঃ কামরুজ্জামানকে বিদ্যুতহীনতার কারণ জানতে চাইলে তিনি কোন জবাব না দিয়ে মোবাইল ফোন কেটে দেন। বিশ্ব এজতেমার কর্মসূচী ॥ বিশ্ব এজতেমার কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে আম ও খাস বয়ান, তালিম, তাশকিল, ৬ উছুলের হাকিকত, দরসে কোরআন, দরসে হাদিস, চিল্লায় নাম লেখানো, নতুন জামাত তৈরি। আখেরি মোনাজাত কাল ॥ বিশ্ব এজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতের সময় এগিয়ে আনা হয়েছে। এজতেমার আয়োজক কমিটির মুরব্বি মোঃ গিয়াসউদ্দিন জানান, রবিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত শেষ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মুসল্লিদের ভোগান্তি কমাতে পরামর্শ করে বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে মোনাজাত শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। দ্বিতীয় পর্বে যেসব জেলা অংশ নিয়েছে ॥ এবারের এজতেমার দ্বিতীয় পর্বের মুসল্লিদের অংশ নেয়ার জন্য জেলাওয়ারি পুরো প্যান্ডেলকে ২৬ খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্বে ১৬ জেলাসহ ঢাকা জেলার একাংশের মুসল্লিরা যে সব খিত্তায় অনুযায়ী অংশ নিয়েছেন, সেগুলো হলো- ১ থেকে ৫ নম্বর ও ৭ নম্বর খিত্তায় ঢাকা জেলা, ৬ নম্বর খিত্তায় মেহেরপুর, ৮ নম্বর খিত্তায় লালমনিরহাট, ৯ নম্বর খিত্তায় রাজবাড়ী, ১০ নম্বর খিত্তায় দিনাজপুর, ১১ নম্বর খিত্তায় হবিগঞ্জ, ১২ ও ১৩ নম্বর খিত্তায় মুন্সীগঞ্জ, ১৪-১৫ নম্বর খিত্তায় কিশোরগঞ্জ, ১৬ নম্বর খিত্তায় কক্সবাজার, ১৭ ও ১৮ নম্বর খিত্তায় নোয়াখালী, ১৯ নম্বর খিত্তায় বাগেরহাট, ২০ নম্বর খিত্তায় চাঁদপুর, ২১ ও ২২ নম্বর খিত্তায় পাবনা, ২৩ নম্বর খিত্তায় নওগাঁ, ২৪ নম্বর খিত্তায় কুষ্টিয়া, ২৫ নম্বর খিত্তায় বরগুনা এবং ২৬ নম্বর খিত্তায় বরিশাল জেলা। মুসল্লিদের স্বাস্থ্য সেবা ॥ গাজীপুরের সিভিল সার্জন জানান, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ মেডিক্যাল অফিসারদের তালিকা ও ডিউটি রোস্টার করা হয়েছে। মুসল্লিদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতে মন্নু গেট, এটলাস গেট, বাটা কারখানার গেট ও টঙ্গী হাসপাতাল মাঠসহ বিভিন্ন পয়েন্টে অস্থায়ী মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া টঙ্গী সরকারী হাসপাতালে বেড বাড়ানো হয়েছে। এখানে হৃদরোগ, এ্যাজমা, ট্রমা, বার্ন, চক্ষু এবং ওআরটি কর্ণারসহ কয়েকটি ইউনিটে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ চিকিৎসা দিচ্ছেন। এছাড়া মুসল্লিরা যাতে আশপাশের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থাসহ সব চিকিৎসাসেবা পান, তার জন্য সংশ্লিষ্ট হাসপাতালেও চিঠি দেয়া হয়েছে। অসুস্থ মুসল্লিদের হাসপাতালে নেয়ার জন্য সার্বক্ষণিক এ্যাম্বুলেন্স মোতায়েন থাকছে। মাসলেহাল (সমস্যা সমাধান) জামাত ॥ এ জামাতের এক মুরব্বি জানান, বিশ্ব এজতেমা ময়দানের মালখানায় এ জামাতের অবস্থান। এ জামাতের সদস্যরা মুসল্লিদের যে কোন ধরনের সমস্যা সমাধান করে থাকেন। বিশেষ করে কোন মুসল্লি ময়দানে এসে গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে কিংবা মারা গেলে তাদের চিকিৎসা সেবা ও লাশ জানাজা শেষে নির্ধারিত ঠিকানায় পাঠানোর ব্যবস্থা করে থাকেন এ জামাতের সদস্যরা। এখানে চিকিৎসক রয়েছেন। যারা মৃত্যুসনদও প্রদান করে থাকেন। এজতেমা উপলক্ষে চিকিৎসকদের ছুটি বাতিল ॥ এজতেমার মুসল্লিদের সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবা দিতে এবারও সরকারী ও বেসরকারীভাবে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঢাকা বিভাগের প্রায় সব কটি জেলা থেকে শতাধিক চিকিৎসক এখানে আনা হয়েছে। এসব চিকিৎসকগণ দৈনিক তিন শিফটে (পালায়) এজতেমা স্থলে ডিউটি করবেন। পাঁচ স্তরের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ॥ এজতেমা মাঠের সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশ ও র‌্যাব কন্ট্রোল রুম ও ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করেছে। সিসি ক্যামেরা মাধ্যমে সার্বিক নিরাপত্তা কন্ট্রেল রুম থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে। খিত্তায় খিত্তায় সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছেন। গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, পুলিশ ও র‌্যাবের প্রায় ১২ হাজার সদস্য ৫ স্তরে বিভক্ত হয়ে পোশাকে ও সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও রয়েছে নৌ-টহল ও চেকপোস্ট। দুই পর্বের এজতেমার ৬ দিন র‌্যাবের হেলিকপ্টার টহল দেবে বলে র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে। প্রায় সাড়ে ৬ হাজার বিদেশী মুসল্লি ॥ বিশ্ব এজতেমার দ্বিতীয় পর্বের প্রথমদিন আমেরিকা, সৌদি আরব, ভারত, পাকিস্তানসহ বিশ্বের ৬৯ দেশের প্রায় দেড় হাজার বিদেশী মুসল্লি এজতেমায় অংশ নিয়েছেন। বিভিন্ন ভাষাভাষী ও মহাদেশ অনুসারে এজতেমা ময়দানের উত্তর-পশ্চিম পাশে বিদেশী মেহমানদের জন্য ট্যান্ট নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। পুরান পত্রিকার কদর ॥ জুমার নামাজ আদায় করতে মুসল্লিরা দুই পাতার পুরান পত্রিকা দুই টাকা করে ক্রয় করেছেন এবং এক গজ পলিথিন ২০ টাকা দরে কিনেছেন। এ পর্বেও যৌতুকবিহীন বিয়ে হচ্ছে না ॥ বিশ্ব এজতেমার দ্বিতীয় দিন বাদ আছর এজতেমা ময়দানে কনের অনুপস্থিতিতে যৌতুকবিহীন বিয়ের আয়োজন করা হতো। গত বছরের মতো এবারের বিশ্ব এজতেমায় দ্বিতীয় পর্বেও ওই বিয়ের আয়োজন হচ্ছে না। বিশ্ব এজতেমার আয়োজক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী মোঃ গিয়াস উদ্দিন জানান, বিগত বছরগুলোতে বিশ্ব এজতেমা ময়দানে কনের অনুপস্থিতিতে বিয়ে অনুষ্ঠিত হতো। এবার তা হচ্ছে না। এজতেমা ময়দানে যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হলে তা কেবল এই ময়দানে আসা তাবলীগ সদস্যরা ও মুসল্লিরা জানতে পারেন। এলাকার লোকজন এমনকি অনেক স্বজনরাও তা জানতে পারেন না। ফলে ওই বিয়ের আকর্ষণ কমে যায়। এজন্য গতবার থেকে এজতেমা ময়দানে যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। এজতেমা থেকে মিয়ানমারের মুসল্লিদের ফেরত ॥ টঙ্গীর বিশ্ব এজতেমা ময়দান এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মিয়ানমারের নাগরিক দেড় শতাধিক মুসল্লিকে ফেরত পাঠিয়েছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, টঙ্গীর তুরাগ তীরে এবারের বিশ্ব এজতেমার দ্বিতীয় পর্ব কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে শুক্রবার শুরু হয়েছে। এজতেমায় বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা যোগ দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে এজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকা হতে পুলিশ ১৫২ নাগরিককে আটক করে। এ সময় ১৩ জন পালিয়ে যায়। পরে মিয়নমারের কয়েং চিবং এলাকার বদিউজ্জামানের ছেলে আজগর আলী, ম-লশীল হালী এলাকার আমির হোসেনের ছেলে আলী আহাম্মেদ, কোনাপাড়া এলাকার মেহের আলীর ছেলে ইলিয়াস আলী, কারু ক্রাং এলাকার আব্দুস শুকুরের ছেলে সাব্বির আহাম্মেদ, দুদাইং এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে সেলিম ও জাম্বুনিয়া এলাকার নুরুল আলমের ছেলে সেলিমসহ আটককৃত অন্যদের রাতে গাজীপুর জেলা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ কালে আটককৃতরা জানায়, তারা মিয়ানমার হতে কাগজপত্র ছাড়া অবৈধভাবে প্রায় মাস খানেক আগে বাংলাদেশে প্রবেশ করে কক্সবাজারে পৌঁছে। তারা বাংলাদেশ হয়ে বিদেশে পাড়ি জমানোর প্রক্রিয়া করছিল। গত কয়েকদিন আগে মাথা পিছু এক হাজার টাকা করে দিয়ে স্থানীয় দালালের মাধ্যমে সাধারণ মুসল্লিদের সঙ্গে মিশে তারা কক্সবাজার এলাকা হতে টঙ্গীর এজতেমা ময়দানে আসে। এ বিষয়ে গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ জানান, কক্সবাজার এলাকা হতে সাধারণ মুসল্লিদের মতো ১২৬ জন এজতেমায় আসেন। তারা বিদেশী নিবাসে অবস্থান নিতে চাইলে তাদের অনুমতি না দিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়। তবে তাদের আটক করা হয়নি। বিশ্ব এজতেমার মুরব্বী গিয়াস উদ্দীন জানান, মায়ানমারের মুসল্লিদের বিষয়টি তাদের জানা নেই।
×