ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শান্তি কমিটি থেকে শুরু করে সকল ঘাতক বাহিনীর বিচার শুরুর দাবি

প্রকাশিত: ০২:২৫, ২০ জানুয়ারি ২০১৭

শান্তি কমিটি থেকে শুরু করে সকল ঘাতক বাহিনীর বিচার শুরুর দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি শিশুদের সাংস্কৃতিক শিক্ষার বিকল্প নেই বলে মনে করেন দেশের বিশিষ্টজনরা। তারা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ হওয়া মানেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির কাজ শেষ হয়ে যায়নি। বরং বেড়েছে। দেশকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় এগিয়ে নিতে পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িকতাকরণ রোধ সহ দেশবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার হবার বিকল্প নেই বলেও মনে করেন তারা। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শান্তি কমিটি থেকে শুরু করে সকল ঘাতক বাহিনীর বিচার শুরু করা, ‘৭১-এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিকল্প নেই বলেও মনে করেন তারা। পাশাপাশি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সারাদেশের শিশু একাডেমী, শিল্পকলা একাডেমী সহ শিক্ষা ও শিশুদের বিকাশের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে নজরদাড়ি বাড়ানোরও তাগিদ দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। ১৯৯২ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির রজতজয়ন্তী ও সপ্তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে শুক্রবার সমাপনী অধিবেশনে বক্তারা এসব কথা বলেন। এতে শিক্ষাবীদ, লেখক, আইনজীবী, অভিনয়শিল্পী, শহীদ পরিবারের সন্তান সহ বিভিন্ন সেক্টরের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। ‘ধর্মনিরপেক্ষ মানবিক সমাজ গড়ে তুলুন’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে দুইদিনব্যাপী সম্মেলনের শেষ দিনে তিন পর্বে ছিল আনুষ্ঠিকতা। শেষ অধিবেশনে গঠনতন্ত্রের সংশোধনী অনুমোদন, আগামী তিন বছরের কর্মসূচী ঘোষণা, সপ্তম জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তাব, নতুন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদের নাম ঘোষণা করা হয়। নতুন নির্বাহী কমিটিতে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন কাজী মুকুল। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী বলেন, এখন নতুন ও নিরাপদ সমাজ গড়ার চিন্তা আমাদের বেশি করতে হবে। নিরপেক্ষতা বজায় রেখে আমরা এগিয়ে যেতে চাই এই বিশ্বাস সবার মনে ধারণ করার বিকল্প নেই বলেও মনে করেন তিনি। পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি শিশুদের সাংস্কৃতিক শিক্ষার বিকল্প নেই জানিয়ে শিক্ষাবীদ মমতাজ লতিফ বলেন, সাংস্কৃতিক শিক্ষার ওপর আমাদের এখন জোড় দিতে হবে। যারা মাদ্রাসা শিক্ষাকে মওদুদিবাদী শিক্ষায় পরিণত করেছে তাদের চিহ্নত করতে হবে। এভাবে তারা সারাদেশে সাম্প্রদায়িকতা বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিয়েছে। এখন বাঙালির সার্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখে মৌলবাদীরা ওয়াজ মাহফিল করে। এই উৎসবকেও তারা ধর্মীয়ভাবে রঙ দেয়ার চেষ্টা করে। তিনি বলেন, একবার নভোথিয়াটার ঘুরে গেলে মানুষের মধ্যে বিজ্ঞান নিয়ে কুসংস্কার কেটে যাবে। ১০/১২জন জামায়াতপন্থী ব্যক্তি শিক্ষাকে অসাম্প্রদায়িক রাখতে চায় না মন্তব্য করে এই শিক্ষাবীদ বলেন, এখন থেকে শিশু একাডেমী, শিল্পকলা একাডেমী থেকে শুরু করে সকল প্রতিষ্ঠানে আমাদের নজরদারি বাড়াতে হবে। তা না হলে লড়াইয়ের ময়দানে নতুন নতুন শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মধ্য দিয়ে আমাদের কাজ শেষ হয়ে যাবে তা নয়, এখন দেখছি মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ বিণির্মানে জন্য অনেক বড় বড় কাজ বাকি রয়ে গেছে। দল হিসেবে জামায়াতের বিচারের দাবি জানিয়ে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, জামায়াতের বিচার নিশ্চিত করতে রাজপথে আমাদের ফের কঠোর আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অস্বীকার আইন করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, যে কোন মূল্যে এই আইন পাশ করতে হবে। সাক্ষী সুরক্ষা আইন করারও বিকল্প নেই। তিনি বলেন, আমাদের লাশের ওপর দাঁড়িয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্থানান্তর করতে হবে। আমরা ট্রাইব্যুনাল স্থানান্তরের পক্ষে কখনই মত দেব না। ট্রাইব্যুনালকে জাদুঘর করারও দাবি জানান তিনি। এছাড়াও সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কথা বাদ দেয়ারও দাবি জানান তুরিন। কলামিস্ট সৈয়দ মাহবুবুর রশীদ বলেন, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন হোক নির্মূল কমিটির ভবিষ্যত কর্মসূচী। অভিবেশনে বক্তব্য রাখেন, অধ্যাপক মুনতাসির মামুন, অভিনয়শিল্পী শমী কায়সার, সৈয়দ তানভীর হায়দার চৌধুরী প্রমুখ। আগামী দিনের কর্মসূচী ঘোষণা করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে- সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের তরুণদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতে পাঠাগার আন্দোলন জোড়দার করা, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার শিকার হওয়া শহীদদের স্বরণে ও পরিবেশ রক্ষায় ৩০ লাখ বৃক্ষরোপন কর্মসূচী যা শুরু হবে চলতি বছরের ২৫ মার্চ থেকে, সাংগঠনিক কার্যক্রম জোড়দার, ১৯৭১ সালের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে বিশ্বব্যাপী কর্মসূচী, সারাদেশে প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে থাকা স্বাধীনতাবিরোধীদের খোজে বের করে তালিকা তৈরী করা, দেশের যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা প্রদর্শন হয় না ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন হয় না সেসব প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের তালিকা তৈরী করা, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস মোকাবেলায় দেশের সকল জেলা উপজেলায় প্রতিরোধ কমিটি গঠন ও সাম্প্রদায়িক কর্মকা-ে জড়িত ব্যক্তিদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সোপর্দ করা, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন, কমিশন গঠন সহ সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়া। এছাড়া প্রস্তাবিত ভবিষ্যত কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে, সংবিধান সম্মত শিক্ষানীতি না হলে সারাদেশে সাংস্কৃতিক আন্দোলন জোড়দার করা ও স্কোয়াড গঠন, ‘৭২-এর সংবিধানে ফিরে আসতে সমমনা সংগঠনগুলোর সঙ্গে যৌথ কর্মসূচী নেয়া, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মুক্তিযুদ্ধের সময় শান্তিবাহিনী সহ ঘাতক বাহিনীর বিচার চলতি বছরে শেষ না হলে ২০১৮ সালে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল প্রতিহত করতে চলমান আন্দোলনকে আরো বেগবান করা, ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা।
×