ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বয়স কম বলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

প্রকাশিত: ১৯:১৯, ২০ জানুয়ারি ২০১৭

বয়স কম বলে  যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

অনলাইন ডেস্ক ॥ ‘তোমাকে ফাঁসিতে ঝোলানো উচিত। বয়স কম বলে তোমাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় শোনালাম।’ কোনও দিন ক্লাসে সেকেন্ড হয়নি ছেলেটি। কলকাতা ফুটবলের ‘এ ডিভিশনে’ ময়দানও কাঁপাত। কিন্তু কুসঙ্গে পড়ে হেরোইন, ব্রাউন সুগারের মতো মাদকের নেশায় আছন্ন হয়ে পড়ে সে। বড়লোক বাবার একমাত্র ছেলে নেশার টাকার জন্য বাবা-মাকে মারধর শুরু করে। এমনকী, এক দিন হাতুড়ি দিয়ে মাথায় বাড়ি মেরে মাকেই মেরে ফেলে। মায়ের রক্ত মাখামাখি করে জানায়, ‘হোলি খেলছিলাম’! ২০১৫ সালের ১ মার্চ বাগুইআটি থানার ইস্ট মল রোডের সেই ঘটনায় মাকে খুনের দায়ে ছেলে মিঠুন মজুমদারকে বৃহস্পতিবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল বারাসত আদালত। মিঠুনের বয়স এখন ২৭। এ দিন সাজা শোনানোর সময়ে সেই ‘কম’ বয়সের উল্লেখ করে যাবজ্জীবনের সাজা শোনানো হল বলে মন্তব্য করেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক অনির্বাণ দাস। বারাসত আদালতে প্রায় দু’বছর ধরে চলা এই ব্যতিক্রমী মামলাটি নিয়ে সাধারণ মানুষ তো বটেই, আইনজীবীদেরও কৌতুহল কম ছিল না। মামলার নামই হয়ে গিয়েছিল ‘কলির পরশুরাম।’ এ দিন সরকার পক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি গৌতমনারায়ণ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ধনী পরিবারের এত ভাল একমাত্র ছেলে অসৎ সঙ্গে পড়লে কী হাল হয়, এই ঘটনাই তার প্রমাণ। মাদক সেবন এক জনকে কী ভয়ঙ্কর জায়গায় টেনে নামাতে পারে, এই মামলায় ১১ জন সাক্ষীর বয়ানে সে প্রসঙ্গই বারবার উঠে এসেছে।’’ কী ভাবে ঘটেছিল ঘটনাটি? পুলিশ জানিয়েছে, বাগুইআটির ব্যবসায়ী অমর মজুমদারের একমাত্র ছেলে মিঠুন। অত্যন্ত মেধাবী ওই ছাত্র পড়াশোনার পাশাপাশি অন্য সমস্ত কিছুর পারদর্শিতায় ‘জ্যাক অব অল ট্রেড’ বলে পরিচিত ছিল। কোনও দিনও ক্লাসে দ্বিতীয় হয়নি। সুন্দর পেটানো চেহারার পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চার কারণে গায়েও ছিল অসম্ভব শক্তি। কাউকে সিগারেট খেতে দেখলে বারণও করত মিঠুন। ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবেও অল্প বয়সেই নাম করে সে। কলকাতা ফুটবলে এ ডিভিশনে নিয়মিত খেলোয়াড়ও ছিল। এ সবের মধ্যেই নেশায় আছন্ন হয়ে পড়ে মিঠুন। শরীর ভেঙে পড়তে থাকে। কোনও কিছুতেই তাকে সামলাতে পারেনি পরিবার। নেশার টাকা না দিলে বাবা-মাকে মারধরও শুরু করে মিঠুন। আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে বাবা অমরবাবু জানিয়েছিলেন— ঘটনার দিন দুপুরে বাড়ি ফিরে তিনি দেখেন, দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। কোনও ভাবে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে দেখতে পান স্ত্রী দুলালী মজুমদার (৪২) অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে পড়ে রয়েছেন। রক্তে ভেসে যাচ্ছে চারপাশ। আর মিঠুন সেই রক্ত নিয়ে মাখামাখি করছে। অমরবাবু ‘কী হয়েছে,’ জিজ্ঞাসা করলে মিঠুন জবাব দেয়, ‘‘হোলি খেলছি।’’ আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই মারা যান দুলালীদেবী। মৃত্যুর আগে কাঁদতে কাঁদতে বলে যান, ‘‘টাকা দিতে না পারায় আমার ছেলে মিঠুন মাথায় হাতুড়ি দিয়ে মেরেছে।’’ এর পরেই মিঠুনকে গ্রেফতার করে খুনের মামলা রুজু করে বাগুইআটি থানার পুলিশ। তবে এ দিন রায় শোনার পরে কোনও প্রতিক্রিয়া ছিল না ওই যুবকের মধ্যে। বিচারকের প্রশ্নের জবাবেও সে কিছু বলেনি। ভাবলেশহীন ভাবে দাঁড়িয়েছিল। এমনকী, রায় ঘোষণার পরেও কোনও প্রশ্নের জবাবে একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি মিঠুন। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×