ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনীতিতে জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে আহ্বান রাষ্ট্রপতির

প্রকাশিত: ০৭:৩৬, ২০ জানুয়ারি ২০১৭

রাজনীতিতে জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে আহ্বান রাষ্ট্রপতির

রাজনীতিতে জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন, নীতি ও আদর্শ থেকে রাজনীতিতে যদি অর্থ-সম্পদ এবং পদবি বেশি গুরুত্ব পায় তাহলে রাজনীতি কলুুষিত হয়ে পড়ে। খবর বাসসর তিনি বলেন, রাজনীতিতে উত্থান-পতন আছে এবং রাজনীতিবিদদের এটি মেনে নিয়েই তাদের লক্ষ্যে পৌঁছতে হবে। জাতীয় নেতা শহীদ এম মনসুর আলীর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার ওসমানী মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থের পরিবর্তে দেশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য আমি রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। রাষ্ট্রপতি বলেন, জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিলে দেশ এগিয়ে যাবে। শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, ক্ষমতার খুব কাছাকাছি থাকা সত্ত্বেও তিনি সৎ ও লোভমুক্ত মানুষ ছিলেন। ইচ্ছে করলে তিনি বিলাসবহুল জীবন যাপন করতে এবং বিপুল সম্পদের অধিকারী হতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। আবদুল হামিদ বলেন, দেশের স্বার্থই প্রথম মনসুর আলী রাজনীতির এই মৌলিক নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ৩ নবেম্বর তিনি জীবন দিয়েছেন, কিন্তু বঙ্গবন্ধু ও বাঙালী জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেননি। রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও চার জাতীয় নেতাকে হত্যার পর খুনীরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করতে শুরু করে। কিন্তু স্বাধীনতার পক্ষের জনগণ এ চক্রান্ত রুখে দেয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, শহীদ এম মনসুর আলী স্মৃতি পরিষদের সভাপতি নুরুল ইসলাম ঠা-ু এবং এম মনসুর আলীর নাতি তানভির শাকিল জয়ও বক্তৃতা করেন। বিডিনিউজ জানান, লিখিত বক্তব্যের বাইরে উপস্থিত বক্তৃতা করতে না পারার বেদনা নিজের স্বভাবসুলভ হাস্যরসে এক অনুষ্ঠানে আবার বললেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। ‘আমার এখন আবার সমস্যা। আমি তো এখন রাষ্ট্রপতি। সুতরাং ভগ্নিপতির মতো এখন বলা যাবে না।’ শহীদ মনসুর আলীর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির জন্য লিখিত বক্তব্য প্রস্তুত করা হয়। আবদুল হামিদ বেশিরভাগ সময় সেটাই পড়েন। তবে মাঝে মাঝে এর বাইরে গিয়েও নিজের স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে কিশোরগঞ্জের আঞ্চলিক টানে কথা বলেন তিনি। স্পীকারের দায়িত্ব পালনের সময় থেকে জাতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে জনপ্রিয় আবদুল হামিদ বলেন, কোন্ কথার কোন্ অর্থ কে যে কীভাবে করে... আমি লেখার (লিখিত বক্তব্য) মধ্যে থাকতে নিরাপদ বোধ করি। লেখার ভেতর থাকা সত্ত্বেও আমার কথা কতভাবে যে টুইস্ট হয়, নিউজ হয়! হাস্যোজ্জ্বল মুখে আবদুল হামিদ বলেন, এমন একটা ব্যাপার যাই করুক না কেন আমার কোন সুযোগ নেই প্রতিবাদ করার। বেকায়দা একটা পজিশনে আছি। আমি এটা বলতে পারি না, আপনি যেভাবে বলছেন, আমি সেভাবে বলিনি। এটারও সুযোগ নেই। আমি আবার লেখায় ফিরে যাই বলে আবার নিজের লিখিত বক্তব্যে ফিরে যান আবদুল হামিদ। বক্তব্যে জেল হত্যাকা-ের শিকার এম মনসুর আলীর সঙ্গে নিজের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরেন এক সময়ের আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হামিদ। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর সরকারে মনসুর আলী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকার সময়কার কথাও আসে আবদুল হামিদের কথায়। ‘আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় যেতাম। উনার (মনসুর আলী) সিগার খাওয়ার অভ্যাস ছিল। সিগার খাইতেন। আমারও তখন অভ্যাস ছিল, সিগারেট খাইতাম। উনি যখন সিগারের প্যাকেটটা রাইখা অন্য কোথাও গ্যাছে আমি চার-পাঁচটা সরায়া ফেলতাম।’ রাষ্ট্রপতির এ কথায় পুরো মিলনায়তনে হাসির রোল পড়ে। রাষ্ট্রপতি বলতে থাকেন, ‘উনি ট্যার পাইতেন না। গুণে রাখতেন না। সিগার বাংলাদেশে পাওয়া যাইত না, বিদেশ থেকে আসত। এটা খাইতে একটু টেস্ট... অনেক ইতিহাস...।’ আবদুল হামিদ বলেন, আমার একটা সুবিধা ছিল, শুধু এমএনএ না, এমপিদের মধ্যেও আমি সবার ছোট ছিলাম। এজন্য সবাই, জাতীয় নেতা যারা আছে, সবাই স্নেহ করতেন এবং এই স্নেহের পুরোটাই আমি ব্যবহার করেছি।
×