ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

দুই ভিনদেশী দুই বাংলা প্রেমিক

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ২০ জানুয়ারি ২০১৭

দুই ভিনদেশী দুই বাংলা প্রেমিক

রবীন্দ্রনাথের বেশ কিছু নির্বাচিত কবিতার ইংরেজী অনুবাদ তিনি করেছিলেন সেই সুদূর আশির দশকে। সম্ভবত পেংগুইন ছিল বইটির প্রকাশক। বুদ্ধদেব বসুও সাহস পাননি কিন্তু সদ্য বাংলা শেখা বাংলা ভাষায় নিবেদিতপ্রাণ উইলিয়াম রদেচী কাজটি করেছিলেন নির্র্দ্বিধায়। কোলকাতার বেশ কিছু প-িত ব্যক্তি অনুবাদের অস্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন সেদিন। সময়টা ১৯৮৬ সাল। আমি তখন কিছুদিনের জন্য লন্ডনে অবস্থান করছিলাম। একটা অনুষ্ঠানে অনুবাদক রদেচীর সাথে কাকতালীয়ভাবে দেখা হয়ে গেল এবং পরিচয় হলো। দীর্ঘকায় সুদর্শন পুরুষ, চোখে চশমা, বেশ প্রাণবন্ত। দুঃখ করে বলছিলেন, যে কাজটি এত কষ্ট করে করলেন, যাদের জন্য করলেন, তারা প্রশংসা করলো না। এরপর প্রায় বিশ বছর পরে এক বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় ঢাকার ব্রিটিশ কাউন্সিলে রদেচীব সাথে দেখা হলো। তার একটি অনুষ্ঠানে এবার দীর্ঘ দুই দশক পর। নিয়ে এসেছেন মাইকেল মধুসূদন দত্তের মেঘনাদ বধ কাব্য। বেশ কঠিন কাজ। তিনি চেষ্টা করেছেন নিষ্ঠার সাথে নিপুণভাবে করতে। এই যে অনুবাদে নিরন্তর লেগে থাকা, এটার একটা মূল্য আছে। এখন রেদচীর বয়স হয়েছে। এখনো তিনি বাংলা সাহিত্যের একটার পর একটা গ্রন্থ অনুবাদ করে আমাদের উপহার দিচ্ছেন। বাংলা সাহিত্যকে যারা বাইরের পৃথিবীর কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়ার ব্রত গ্রহণ করেছেন, উইলিয়াম রদেচী তাদের অন্যতম। আরো একজন আছেন। তিনি অনুবাদক নন্। তিনিও বাংলা ভাষাকে ভালোবেসে, বাংলাদেশকে ভালোবেসে দীর্ঘ দশ বছর বরিশালে বসবাস করে অবশেষে জীবনানন্দ দাশের ওপর একটি গবেষণামূলক গ্রন্থ লেখেন চঙঊঞ অচঅজঞ নামে। বইটি ফারুক মঈনুদ্দিন বাংলায় অনুবাদ করেছেন। আমেরিকার পিস কোরের সদস্য ক্লিনটন বি সিলী রবীন্দ্রপরবর্তী কবি জীবনানন্দ দাশের ওপর এই বিশাল কাজটি সম্পন্ন করেন নিষ্ঠার সাথে। ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে বেশ ক’বছর আগে তার সাথে দেখা হয়, পরিচয় হয় এবং দীর্ঘ আলাপ হয়। আমি যতই তার সাথে ইংরেজীতে কথা বলি, তিনি বলেন বাংলায়, কিছু কিছু বাক্যে বরিশালের ‘এ্যাকসেন্ট’ আশ্চর্যজনকভাবে লক্ষ্যণীয়। আমাদের রাইটার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের অনুষ্ঠানে সংগঠনের উপদেষ্টা ড. মীজানুর রহমান শেলী ক্লিনটন বি. সিলীকে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানান। তিনি চমৎকার সংক্ষিপ্ত একটি বক্তৃতা দেন। কিন্তু মাঝে মাঝে দু’একটি শব্দ এবং বাক্যে বরিশালের এ্যাকসেন্ট থেকে যায়। এমনিতে খুব মিশুক মানুষ। তার কথায় রঙ্গরস থাকে। হেমিংওয়ের মতো ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি, জেমস্ জয়েসের মতো গোল চশমা, আড্ডাপ্রিয় এই মানুষটির সাথে নব্বই সালে এবং বিংশ শতাব্দীতে দু’তিনবার দেখা হয়েছে, জীবনানন্দ দাশ নিয়ে কথা হয়েছে। এই বাঙালী কবির ওপর সবচেয়ে সৃজনশীল গবেষণার কাজটি করেছেন প্রয়াত কবি আব্দুল মান্নান সৈয়দ। আন্তর্জাতিক বিশ্বে জীবনানন্দ দাশকে পরিচয় করিয়ে দিলেন ক্লিনটন বি. সিলী।
×