ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

১০৫ বছর বয়সে বিশ্বরেকর্ড

বুড়োদের বিশ্বরেকর্ড!

প্রকাশিত: ০৬:৫২, ২০ জানুয়ারি ২০১৭

বুড়োদের বিশ্বরেকর্ড!

ফ্রান্সের রোবট মারশঁ-র বয়স এখন ১০৫। সাইকেল চালিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন তিনি। এক ঘণ্টায় ২২ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার পেরিয়েছেন, যা এই বয়সে আর কেউ কোনদিন পারেননি। তাঁর কাছে এই রেকর্ড অবশ্য নতুন কিছু নয়। একশ’র চেয়ে বেশি বয়সীদের মধ্যে এক ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি দূরত্ব অতিক্রমের বিশ্বরেকর্ডও তাঁর দখলে। ২০১২ সালে এক ঘণ্টায় ২৬ দশমিক ৯২ কিলোমিটার গিয়ে যে রেকর্ডটি গড়েছিলেন, সেটি এখনও কেউ ভাঙতে পারেননি। তার কথায়, ‘আমি এখন প্রতীক্ষা করছি আমার প্রতিদ্বন্দ্বীর জন্য। শরীর ও স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে সাইক্লিং ছাড়া কী কী করেন রবার্ট মারশঁ? তেমন কিছুই নয়। নিয়মিত শরীরচর্চার সঙ্গে প্রতিদিন রাত ন’টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েন। তার কোচ, জিরার্ড মিস্টলারের কথানুযায়ী, রবার্টের পরিমিত খাওয়া-দাওয়া এবং কোনও রকম নেশা না করাও তাঁর সুস্থ থাকার অন্যতম কারণ। সবচেয়ে বেশি বয়সী ম্যারাথনার ১০৪ বছর বয়সে ম্যারাথনে অংশ নিয়ে দৌড় শেষ করেছেন ইংল্যান্ডপ্রবাসী ভারতীয় ফৌজা সিং। এভাবে সবচেয়ে বেশি বয়সে ম্যারাথন দৌড়ানোর বিশ্বরেকর্ডও গড়েছেন তিনি। শতবর্ষ পেরিয়েও ট্র্যাকে এভাবে ঝড় তোলেন বলে তাঁর নামই হয়ে গেছে, ‘টারব্যান্ড টরন্যাডো’ বা ‘পাগড়ি পরা ঘূর্ণিঝড়’। ইংল্যান্ডে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরুর আগে নিজ দেশ ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের একজন কৃষক ছিলেন সিং। এর আগে লন্ডন, টরন্টো ও নিউইয়র্কে নয় বার ২৬ মাইল দৌড়েছেন তিনি। তার সেরা সময় ছিল টরন্টোতে। এখানে ৫ ঘণ্টা ৪০ মিনিট ৪ সেকেন্ড সময়ে দৌড় শেষ করেন ফৌজা সিং। নাতি-নাতনিসহ তিনি এখন ইলফোর্ডে বসবাস করেন। এ্যাথলেট থেকে অবসর নেয়ার সময় তিনি বলেছিলেন, ‘আমার শংকা আমি দৌড় বন্ধ করলে জনগণ আমাকে আর ভালবাসবে না। এখন সবাই আমাকে ভালবাসে। আমার আশা কেউ আমাকে ভুলে যাবে না, অবহেলা করবে না।’ তবে শরীর ভাল রাখার জন্য নিয়মিত দৌড়াবেন বলে জানিয়েছেন সিং। ‘বাপ কা বেটা’ তার বাবা কেইজো মিউরা ছিলেন জাপানের বিখ্যাত স্কিয়িং শিক্ষক এবং পর্বতারোহী। ৭৭ বছর বয়সে কিলিমানজারোর চূড়ায় উঠে রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি। উইচিরো মিউরা তারই ছেলে। সে কারণে বাবার দেখানো পথে তিনি হয়েছেন পেশাদার স্কিয়ার। ২০০৩ সালে বাবার মতো পাহাড়ে উঠেও রেকর্ড গড়েছেন। ৭০ বছর বয়সে এভারেস্টের চূড়ায় উঠেছেন উইচিরো মিউরা। সবচেয়ে বেশি বয়সে এভারেস্টে ওঠার রেকর্ড সেটি। ১৯৭৫ সালে জাপানের জুনকো তাবেই প্রথম নারী হিসেবে এভারেস্ট জয় করেন। টম হুইটেকার এক পা হারানো প্রথম ব্যক্তি হিসেবে এভারেস্ট জয় করেন ১৯৯৮ সালের ২৭ মে। এরিক ওয়েহেনমায়ের প্রথম দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, যিনি এভারেস্ট জয় করেন ২০০১ সালের ২৫ মে। জাপানের উইচিরো মিউরা তার হার্টে চারটি সার্জারি নিয়েও ২০১৩ সালের ২৩ মে ৮০ বছর বয়সে এভারেস্ট জয় করে সবচেয়ে বেশি বয়সে এভারেস্ট জয়ের রেকর্ড করেন। শোক ভুলতে ‘বুড়ো’ বয়সে স্কুলে নেপালের দুর্গা কামি ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখতেন একদিন শিক্ষক হবেন। কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে লেখাপড়া করতে পারেননি। সেই দুঃখ ভোলার জন্য স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন ছয় সন্তানের জনক এবং দশ নাতির দাদু হওয়ার পর। স্ত্রী মারা যাওয়ায় বড় বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলেন ৬৭ বছর বয়সী দুর্গা। এই শোক ভুলতেই স্কুলে যাওয়া শুরু। নাতির বয়সীদের সঙ্গে বসে দিব্যি এখন লেখাপড়া শিখছেন দুর্গা। এ প্রসঙ্গে দূর্গা বলেন, এই বয়সেও স্কুল জীবন বেশ উপভোগ করছি। প্রবাদ আছে, শিক্ষার কোন বয়স নেই। জীবনের যে কোন অবস্থাতেই শিক্ষা নেয়া যেতে পারে। নিজেকে সমৃদ্ধ করতে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। সবচেয়ে বেশি বয়সী ইয়োগা শিক্ষক ফরাসী বংশোদ্ভূত ভারতীয় তাও পরশো-লিঞ্চের বয়স ৯৮ বছর। জীবনের বেশিরভাগ সময়ই কাটিয়েছেন অভিনয়, মডেলিং করে আর বলরুমে নেচে। কিন্তু ১৯৮২ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় স্বামীর মৃত্যুর পর জীবনের অনেক কিছুই বদলে গেল তার। স্বামীর মৃত্যুর পর ওয়াইন ছাড়লেন, শুরু করলেন ইয়োগা শেখানো। ৩৪ বছর ধরে অসংখ্য মানুষকে শিখিয়েছেন যোগব্যায়াম। ইতোমধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়সী ইয়োগা শিক্ষক হিসেবে গিনেস বুকেও নাম উঠেছে তাঁর। সবচেয়ে বেশি বয়সী মডেল পোল্যান্ডের হেলেনা নোরোভিচ অভিনেত্রী থেকে হয়েছেন ফ্যাশন মডেল। ৮২ বছর বয়সেও উপভোগ করছেন কাজ। তিনিই এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়সী ফ্যাশন মডেল। বর্তমানে তিনি ক্যাটওয়াক এবং মডেল ফটোশূটে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ১৯৩৪ সালে পোল্যান্ডের লিস্টপোডা শহরে জন্ম তার। এর আগে তিনি সিরিয়াল এবং সিনেমায় কাজ করেছেন। বয়স বাড়লেও ফুরিয়ে যাননি এখনও। কাজ করছেন রীতিমতো তরুণদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। বেশি বয়সে মা আগেই নানি হয়েছেন ওমকারী পানওয়ার। দুই মেয়ের মা তিনি। কিন্তু পানওয়ারের স্বামীর ছেলে সন্তান চাই-ই চাই। তার বয়স এখন ৭০। তারপরও নিজের লক্ষ্য থেকে সরে যাননি ওমকারী। যদিও ডাক্তার সতর্ক করেছিলেন এই বয়সে গর্ভধারণ করা শুধু কঠিন তা নয়, এটা যথেষ্ট বিপজ্জনক। তারপরও পিছপা হননি তিনি। অবশেষে পানওয়ারের গর্ভে জমজ সন্তান আসে, একটি ছেলে ও একটি মেয়ে। দিল্লীর মুজাফফরনগরের হাসপাতালে সন্তানের জন্ম দিয়ে পানওয়ার সবচেয়ে বেশি বয়সে মা হওয়ার রেকর্ড গড়েন। সূত্র : ডয়েচে ভেলে
×