ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ সাখাওয়াত হোসেন

দৃপ্ত পায়ে সামনে এগিয়ে চলা

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ২০ জানুয়ারি ২০১৭

দৃপ্ত পায়ে সামনে এগিয়ে চলা

বাংলার নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন নারীদের স্বাতন্ত্র্য পরিচয় ও আত্মস্বীকৃতির জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গিয়েছেন। সেই সংগ্রামের ফল আমরা বর্তমানে দেখতে পাচ্ছি। বেগম রোকেয়া যে স্বপ্নের বীজ বপন করেছিলেন সে বীজ আজ ফলে রূপান্তরিত হওয়া শুরু করেছে। নারীরা শিক্ষিত হয়ে স্বাবলম্বী হওয়ায় দেশগড়ায় মনোনিবেশ করেছে, দেশ উন্নত হচ্ছে, আমরা পাচ্ছি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। নারীদের মানোন্নয়ন ও স্বনির্ভরতায় বাকি বিশ্ব বাংলাদেশকে অনুসরণ করছে প্রতিনিয়ত। ভবিষ্যতেও নারীদের উন্নতির অগ্রযাত্রা নদীর স্রোতধারার মতো অব্যাহত থাকবে এমনটাই প্রত্যাশাই দেশপ্রেমিক জনগণের। সম্প্রতি প্রকাশিত প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় ২৮,৩০,৭৩৪ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে, উত্তীর্ণ হয় ২৭,৮৮,৪৩২ জন। পাসের হার মোট ৯৮.৫১%, উত্তীর্ণদের মধ্যে ১২,৭০,২২২ জন ছাত্র। শতকরা হিসেবে যা ৪৫.৫৫%। এবং ছাত্রী শতকরা ৫৪.৪৫%, সংখ্যায় যা ১৫,১৮,২১০ জন। ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষাতে ২,৫৭,৫০০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। অংশগ্রহণে ছাত্ররা বেশি এগিয়ে থাকলেও গড় পাসের হারে এগিয়ে ছাত্রীরা। পরীক্ষা ১,২৫,১৬০ জন ছাত্র উত্তীর্ণ হয়। শতকরা হিসেবে যা ৫০.৭১%। এবং ১,২১,৬৫৮ জন ছাত্রী উত্তীর্ণ হয়। শতকরা হিসেবে যা ৪৯.২৯%। তবে গড় পাসের ক্ষেত্রে ছাত্রদের পাসের হার ৯৫.৬৩% এবং ছাত্রীদের পাসের হার ৯৬.০৮% (সূত্র : চ্যানেল আই অনলাইন)। শিক্ষায় নারীদের ব্যাপকহারে আগমনী বার্তা গত কয়েক বছর ধরে অব্যাহত আকারে বেড়েই চলেছে যা বাংলাদেশের সামগ্রিক স্থায়িত্বশীলতার জন্য খুবই সহায়ক হবে। বাংলাদেশের অগ্রগতি বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাকি বিশ্বের কাছে দৃষ্টান্তস্বরূপ। নারীদের সর্বদিক দিয়ে স্বাবলম্বী করে তোলার নামই নারীর ক্ষমতায়ন। উন্নয়ন, সমৃদ্ধি এবং প্রবৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে যখন নারীদের যোগ্যতার ভিত্তিতে সম্পৃক্তায়ন নিশ্চিত করা যাবে তখন নারীর ক্ষমতায়নের প্রসঙ্গটি ফলপ্রসূ হবে সকল জায়গায়। বর্তমানে নারীবান্ধব সরকারের গ্রহণীয় পদক্ষেপের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া নারীরা কোন কোন ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় এগিয়ে রয়েছেন। বর্তমানে পরিবার থেকেও মেয়েদের বিশেষভাবে সহায়তা প্রদান করা হয়। নারীদের হয়ত কিছু ক্ষেত্রে সরকার সুবিধা দিয়ে থাকেন কিন্তু যোগ্যতার ভিত্তিতেই বর্তমানে নারীরা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরগুলোতে প্রতিনিধিত্ব করছেন। সামনের বছরগুলোতে নারীরা আরও প্রতিনিধিত্বশীল এবং চ্যালেঞ্জিং পেশাগুলোতে নিজেদের দক্ষতার ছাপ ফুটিয়ে তুলবেন এমনটাই দেশ ও জাতির প্রত্যাশা। বিশেষ করে আদিবাসী, দলিত এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী যারা বিভিন্নভাবে সামান্য হলেও একটু পিছিয়ে আছেন তাদেরকে সামনে নিয়ে আসা কিংবা সুযোগ করে দেওয়াটাকে হবে নতুন বছরের সকলের প্রত্যাশা। সরকার এই প্রথম আদিবাসীদের জন্য নিজ ভাষায় বই বের করেছেন যাতে ঐ ভাষাগোষ্ঠীর ছেলেমেয়েরা পড়াশোনায় আগ্রহী হয়ে উঠে। পিএসসি, জেএসসি, এসসি তে বর্তমানে মেয়েরা ফলাফলের দিক দিয়ে বেশ ভাল অবস্থানে রয়েছে। সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মেয়েদের ভর্তি হওয়ার হারও সকলের নজর কেড়েছে। পাশাপাশি নারীরাও নিজ থেকেই সচেতন হওয়াতে মাতৃমৃত্যুর হার, শিশু মৃত্যুর হার দিন দিন কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সব থেকে উৎপাদনশীল সেক্টর গার্মেণ্টস খাতে মেয়েদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। এমনকি পুলিশ বাহিনী, বিমান বাহিনী এবং নৌবাহিনীতে নারীদের অংশগ্রহণ দেশের ভবিষ্যত অর্জনের পথকে আরও সমুজ্জ্বল করে তুলবে। নিজেদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখায় পারিবারিক সিদ্ধান্ত গ্রহণেও নারীদের ভূমিকা আরও জোরালো হচ্ছে। রাজনীতির মাঠেও নারীরা দিনকে দিন আরও সক্রিয় হচ্ছে। ভবিষ্যত বাংলাদেশ বিনির্মাণে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাবেন এমনটাই চাওয়া সকলের।
×