ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ফ্যাশন যখন ট্যাটুতে

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ২০ জানুয়ারি ২০১৭

ফ্যাশন যখন ট্যাটুতে

ট্যাটু আজকের ইউরোপ আমেরিকায় তো এটি একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার । বেশ কয়েক বছর ধরে গায়ে উল্কি আঁকা ফ্যাশনে দাঁড়িয়ে গেছে? ছাত্র-ছাত্রী, গায়ক-গায়িকা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের দেহও উল্কির নানা রঙে রঙিন হচ্ছে? জার্মানিতে চালিত একটি জরিপে জানানো হয়েছে, ৩৫ বছরের নিচে যাদের বয়স তাদের প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনের গায়ে উল্কি আঁকা রয়েছে? লিখেছেন- জামিল উর রহমান ইতিহাস থেকে জানা যায়, পলিনেশিয়ান সংস্কৃতিতেই প্রথম ট্যাটু করানোর প্রচলন শুরু“ হয়। তখনকার দিনে নিউজিল্যান্ড, হাওয়াই ও সামোয়াসহ বিভিন্ন দ্বীপে আধ্যাত্মিক চর্চা করা হতো। এই ট্যাটুগুলো তখন জ্যামিতিক আকার ও নকশায় মানুষের জীবনের উদ্দেশ্যের কথা বলতে পারত। কালো রং দিয়েই খুব গাঢ়ভাবে নকশা করা হতো, যেটিতে শরীরের বেশ বড় অংশই ঢেকে যেত। উল্কিশৈলীর প্রক্রিয়াটি একই সঙ্গে শান্ত, নিবিড় ও বেদনাদায়ক ছিল। আজকের দিনেও অনেক পলিনেশিয়ান তাদের পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য ট্যাটু করে থাকেন। জাপানের ইরেজুমি জাপানীরা ১০০০ খ্রিস্টপূর্ব থেকেই ট্যাটু করিয়ে আসছেন। কিন্তু আজকের সময়ে যেটি ইরেজুমি বলে পরিচিত সেটির উদ্ভব হয় ইয়াওই যুগে। এই শিল্পটি সব সময়ই মাপে খুব বড় হয়। সাধারণত পুরো হাত, পিঠ এমনকি পুরো শরীর ঢেকে দেয়। রঙের দিক দিয়ে বেশ নিপুণ হয় এই ইরেজুমি। কিছু স্বতন্ত্র শৈলী আছে এই ট্যাটুর। যেমন, বুদ্ধর প্রতিকৃতি শুধুমাত্র কোমরের উপর হতে হবে, আর কোথাও হওয়া যাবে না। নির্দিষ্ট ধরনের প্রাণী, ফুল এর জুড়ি করতে হবে। অবশ্য জাপানের ট্যাটুগুলো এখনও একটু সেকেলে ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন। তারপরেও এই ইরেজুমি স্টাইল ও পাশ্চাত্যে বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। আমেরিকার ঐতিহ্যবাহী ট্যাটু আমেরিকানদের কঠিন কিছু নিয়ম-কানুন মেনে এই উল্কি তৈরি করা হয় যাতে করে সহজেই সবার চোখে পড়ে। যেমন, আকারে ছোট কিন্তু খুব গাড় রঙের ব্যবহার, কালো রঙের আউটলাইন, অভিনব কিছু ছবি, এই বৈশিষ্ট্যগুলোই এই ট্যাটুকে অন্যগুলো থেকে আলাদা করে তোলে। এই ঐতিহ্যবাহী উল্কির ক্রমবিকাশ এর কৃতিত্ব দেয়া হয় সেইলর জেরিকে (আসল নাম নরম্যান কলিন্স)। তিনি জাপানিজ ট্যাটু শিল্পীদের কাছ থেকে এই শৈলী শিখেছেন। এবং নিজ দেশ আমেরিকায় ফিরে নিজের মতো করে একটি প্ল্যাটফর্ম দাঁড় করিয়েছেন। এই ট্যাটুর খুব সাধারণ কিছু বিষয় হলো হৃদয়, গোলাপ, ঈগল ইত্যাদি। নিও ট্র্যাডিশনাল নাম থেকেই কিছুটা টের পাওয়া যাচ্ছে, নিও ট্র্যাডিশনাল ট্যাটু হলো একেবারে গোড়াও না আবার একদম আধুনিকও না। মাঝামাঝি পর্যায়ের মধ্যে পড়ে এগুলো। ১৯৫০-এর দিকে এই উল্কিশৈলি খুব জনপ্রিয় হয়ে যায়। আধুনিক শিল্পীরাই নিজ হাতে সুচের নিখুঁত আবেশে একেকটি ট্যাটু তৈরি করেন। খুব গাঢ় কালো রং এবং আউটলাইনই এই ধরনের ট্যাটুর প্রধান বৈশিষ্ট্য। এইগুলোর একমাত্র ব্যতিক্রম হলো ত্রিমাত্রিক ডিজাইন, সাদা আউটলাইন ও বাহ্যিক নানা বিষয়। আধুনিক ট্যাটু আধুনিক ট্যাটুগুলো মূলত পুরনো ও সেকেলে ট্যাটুগুলোর সংস্করণ। আশি ও নব্বইয়ের দশকে এগুলোর প্রচলন শুরু হয়। পুরনো ট্যাটুগুলোর মতোই নতুনগুলোতেও গাড় ও মোটা করে কালো আউটলাইন করা হয়। তবে আধুনিক ট্যাটুগুলো নির্দিষ্ট কোন ছাঁচে সীমাবদ্ধ নয়। কার্টুন কিংবা গ্রাফিটি স্টাইলে, বাড়তি পরিসরে এবং ছন্দমূলক ডিজাইনে করা হয় এগুলো।
×