ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

বন্ধুত্ব উদ্্যাপনে বাংলাদেশ ও ত্রিপুরা সাংস্কৃতিক উৎসব

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২০ জানুয়ারি ২০১৭

বন্ধুত্ব উদ্্যাপনে বাংলাদেশ ও ত্রিপুরা সাংস্কৃতিক উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাঘের বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির নন্দন মঞ্চে বেজে উঠল বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণের খানিকটা অংশ। অবিনাশী এই ভাষণের সঙ্গে মঞ্চে এলেন একঝাঁক নৃত্যশিল্পী। সেই ভাষণের সাথে তাল রেখে শুরু হয় নাচ। এরপর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাদায়ী ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’ গানের সুরে পুরো নাচটি মেলে ধরেন শিল্পীরা। একে একে রেকর্ডে বেজে ওঠে ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’ ও ‘গাই জীবনের জয়গান’ শিরোনামের গানের সুর। সেই সুর আশ্রিত নাচের মাঝে শিল্পীর হাতে ধরা দেয় লাল-সবুজে আবৃত এ দেশের পতাকা। বাংলার পতাকাটি ওড়ার পর বন্ধুত্বের উদ্যাপনে একইভাবে শিল্পীরা উড়িয়ে দেয় ভারতের পতাকা। তামান্না রহমান ও তাঁর দলের নৃত্য পরিবেশনায় এভাবেই সূচনা হয় বাংলাদেশ বাংলাদেশ-ত্রিপুরা সাংস্কৃতিক উৎসব। ‘মুক্তিযুদ্ধের সুতোয় গাঁথা সংস্কৃতির মালিকা’ সেøাগানে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয় চার দিনের এ উৎসব। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়া ভারতের ত্রিপুরার সঙ্গে বন্ধুত্ব উদ্্যাপনের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ উৎসব। উভয় দেশের শিল্পী-সাহিত্যিকদের অংশগ্রহণে নাচ-গান, স্বরচিত কবিতাপাঠ, আবৃত্তি ও চিত্রকলা প্রদর্শনীতে সাজানো হয়েছে উৎসবটি। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষ্ঠকতায় বাংলাদেশ-ত্রিপুরা সাংস্কৃতিক উৎসব পর্ষদের এ আয়োজনে সহযোগিতা বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। শিল্পকলা একাডেমির নন্দনমঞ্চে উৎসব উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সম্মানিত অতিথি ছিলেন ত্রিপুরার এমবিবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গৌতম বসু, বাংলাদেশ-ত্রিপুরা সাংস্কৃতিক উৎসব পর্ষদের কো-চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন ইউসুফ, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী ও ত্রিপুরা সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দলের দলনেতা গৌতম দাস। পর্ষদের চেয়ারম্যান রামেন্দু মজুমদারের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পর্ষদের সদস্য সচিব সেলিম শামসুল হুদা চৌধুরী। এছাড়া উৎসব উপলক্ষে একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় মিলনায়তনে বাংলাদেশ ও ত্রিপুরার শিল্পীদের আঁকা ছবি নিয়ে চিত্রকর্ম প্রদর্শনীরও সূচনা হয় এদিন। এ প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন বরেণ্য শিল্পী রফিকুন নবী। উৎসবের উদ্বোধনী বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, একাত্তরের দুর্দিনে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করেছে ত্রিপুরাবাসী। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের এই রাজ্যের মানুষ আমাদের শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে। এছাড়াও এ রাজ্যটি আমাদের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী। এ উৎসবের মাধ্যমে ত্রিপুরার বৈচিত্র্যময় শিল্পসম্ভার দেখার সুযোগ পাব। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সঙ্গীতদল, ঢাকা সাংস্কৃতিক দল, বহ্নিশিখা এবং ত্রিপুরার ককবরক সঙ্গীতদল। একক কণ্ঠে গান শোনান বাংলাদেশের মহিউজ্জামান চৌধুরী, খায়রুল আনাম শাকিল, কিরণ চন্দ্র রায় এবং ত্রিপুরার সুদেষণা চন্দ, শিবপ্রসাদ দত্ত, তনুজা দেববর্মা ও রাজা হাছান। একক নৃত্য পরিবেশন করেন ত্রিপুরার রাহুল দেববর্মণ ও স্মিতা লৌহকর। একক আবৃত্তি করেন আশীষ মোদক। আজ শুক্রবার এ উৎসবের দ্বিতীয় দিন। এদিন বিকেলে বাংলাদেশ ও ত্রিপুরার কবি ও আবৃত্তিশিল্পীদের অংশগ্রহণে শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে অনুষ্ঠিত হবে স্বরচিত কবিতাপাঠ ও আবৃত্তি। কথসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা ও কবিতাপাঠে অংশ নেবেন বাংলাদেশের কবি ড. মুহাম্মদ সামাদ এবং ত্রিপুরার রাতুল দেববর্মণ, আকবর আহমেদ ও যোগমায়া চাকমা। সন্ধ্যায় শিল্পকলার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হবে থিয়েটারের (বাংলাদেশ) প্রযোজনা ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’। বঙ্গবন্ধু উৎসব ১৭ মার্চ ॥ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ১৭ মার্চ। এ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হবে ‘বঙ্গবন্ধু উৎসব’। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতায় ১৭ মার্চ শুরু হয়ে দুই দিনব্যাপী এ উৎসব চলবে। বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে বাঙালি সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই উৎসবের বিস্তারিত জানানো হয়। এতে জানানো হয়, গত ১৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে এক সভায় এই জোটের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। এতে বাঙালি সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন চয়ন ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন সাইফুল আজম বাশার। সংবাদ সম্মেলনে তারা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা ম-লির সদস্য ড. ইনামুল হক। আইএফআইসি ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার ও আজীবন সম্মাননা ॥ দুই কবি ও কথাসাহিত্যিককে প্রদান করা হলো ২০১৫ সালের আইএফআইসি ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার। পুরস্কারপ্রাপ্ত দুই লেখক হলেন কবি অসীম সাহা ও কথাসাহিত্যিক ওয়াসি আহমেদ। ‘ম-বর্ণের শোভিত মুকুট’ কাব্যগ্রন্থের জন্য এ পুরস্কারে নির্বাচিত হয়েছেন অসীম সাহা। বইটি প্রকাশ করেছে আগন্তুক প্রকাশনী। প্রথমা থেকে প্রকাশিত ‘তলকুঠুরির গান’ উপন্যাস গ্রন্থের পুরস্কারটি পেয়েছেন ওয়াসি আহমেদ। পুরস্কারের সম্মাননা হিসেবে উভয় লেখককে পঁাঁচ লাখ টাকা প্রদান করা হয়। এছাড়া একই অনুষ্ঠানে আজীবন সম্মাননা জানানো হয়েছে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর পল্টনের আইএফআইসি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের মিলনায়তনে লেখকদ্বয়ের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। এছাড়া আইএফআইসি ব্যাংকের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানে আজীবন সম্মাননা দেয়া হয় অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে। তাঁকে সম্মাননা হিসেবে ৪০ লাখ টাকা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল চৌধুরী ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ এ সারোয়ার। অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন পুরস্কারপ্রাপ্ত দুই লেখক। অনুষ্ঠানের শুরুতে সৈয়দ শামসুল হক স্মরণে পালন করা হয় এক মিনিটের নীরবতা। হুমায়ুন ফরীদির একুশে পদকের জন্য গণস্বাক্ষর সংগ্রহ ॥ মঞ্চনাটক, টেলিভিশন কিংবা চলচ্চিত্রÑসবখানেই তিনি ছিলেন প্রবলভাবে। আর এভাবেই অনবদ্য অভিনয়শৈলী দিয়ে দর্শককে মোহাবিষ্ট করেছিলেন হুমায়ুন ফরীদি। শক্তিমান এই অভিনয়শিল্পীর মৃত্যুর প্রায় পাঁচ বছর পর একুশে পদক দেয়ার দাবিতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযানে নেমেছেন তার ভক্তরা। ‘ফরীদি’র জন্য একুশে পদক’ নামের একটি অনলাইন সংগঠনের ব্যানারে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি প্রাঙ্গণে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়। বিকেল ৩টা থেকে শিল্পকলা একাডেমিতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়। অনুষ্ঠানে সংগঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা সিকদার লোটাস সবুজ বলেন, আগামী মাসে একুশে পদক ঘোষণা করা হবে। সে কারণেই চলতি মাস থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি গ্রুপের মাধ্যমে হুমায়ুন ফরীদিকে একুশে পদক প্রদানের দাবি তুলেছি। তিনি জানান, ২৬ জানুয়ারি সকাল ১০টা থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে চত্বরে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হবে। সব গণস্বাক্ষর সংগ্রহের তা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হবে বলে জানান তিনি। প্রাচ্যনাটের নতুন নাটক সৈয়দ হকের ‘চম্পাবতী’ ॥ পল্লীকবি জসীমউদ্্দীনের অমর সৃষ্টি ‘বেদের মেয়ে’ অবলম্বনে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক লিখেছিলেন নাটক ‘চম্পাবতী’। রন্তিক বিপুর নির্দেশনায় এবার নাটকটি মঞ্চে এনেছে নাট্যদল প্রাচ্যনাট। গতকাল শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে প্রাচ্যনাট স্কুল অব এ্যাক্টিং এ্যান্ড ডিজাইন ৩১তম ব্যাচের সনদপত্র বিতরণ এবং সমাপনী প্রযোজনা হিসেবে নাটকটি মঞ্চায়ন হয়। সনদপত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন নৃত্যশিল্পী মুনমুন আহমেদ এবং সৈয়দ শামসুল হকের ছেলে দ্বিতীয় সৈয়দ হক। নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করবেন নোভাইরা রহমান, তৃপ্তি রানী ম-ল, মোঃ সাইফুল ইসলাম ম-ল, আলী উম্মুল ফারিয়া, মেহেদী হাসান রাজু, রিফাত খান অনিক,অনন্যা গোস্বামী, আফরোজা ইয়াসমীন, নাফিসা ফেরদৌস, মৌসুমি আক্তার, জোহরা ফেরদৌস, শাহানা আক্তার, অমিতাভ রায়, রাজীব চন্দ্র, অরূপ ভৌমিক প্রমুখ। জাতীয় পিঠা উৎসব শুরু ২৩ জানুয়ারি ॥ জাতীয় পিঠা উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে ২৩ জানুয়ারি থেকে শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হচ্ছে আট দিনের জাতীয় পিঠা উৎসব। ওই দিন বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত মঞ্চে এ উৎসবের উদ্বোধন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান জাতীয় পিঠা উৎসব উদযাপন পরিষদের নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন পরিষদের সভাপতি ম. হামিদ, ড. ইনামুল হক, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার শাহ আলম প্রমুখ। ‘চিটাগং শর্ট’ চলচ্চিত্র উৎসব সম্পন্ন, পুরস্কার বিতরণ কাল ॥ স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানান, চট্টগ্রামে তরুণ নির্মাতা সংগঠন ‘চিটাগাং শর্ট’ এর উদ্যোগে আয়োজিত ‘চিটাগং শর্ট চলচ্চিত্র উৎসব’ এর মাস্টার ক্লাস, প্রদর্শনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শনিবার। থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করবেন সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা ও দৈনিক আজাদী পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক। জানা গেছে, গত ৮ জানুয়ারি থেকে চিটাগং শর্ট চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হয়েছে। মানবতার জন্য চলচ্চিত্র এমন স্লোগানকে সামনে রেখে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ চলচ্চিত্র উৎসব স্থান করে নিয়েছে। চিটাগং শর্ট ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর এ উৎসবের যৌথ আয়োজক। এ উৎসব থেকে পুরস্কারপ্রাপ্ত শর্ট চলচ্চিত্র জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আগামী ৪ থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি প্রদর্শিত হবে। এ উৎসব আয়োজনে দৈনিক আজাদী, ডেভেলপার কোম্পানি সিপিডিএল ও চট্টগ্রামে খ্যাতনামা রেস্টুরেন্ট বারকোড গ্রুপের সহায়তা রয়েছে।
×