ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

এ কেমন মাঘ! পাতা ঝরার দিনে বইছে ফাগুন হাওয়া

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২০ জানুয়ারি ২০১৭

এ কেমন মাঘ! পাতা ঝরার দিনে বইছে ফাগুন হাওয়া

সমুদ্র হক ॥ শীতকালের এ আবার কেমন মাঘ! ফাগুনের হাওয়া বইছে মাঘে। ঋতুগুলোকে যে আর চেনাই যাচ্ছে না। মাঘ না ফাল্গুন! সবই এলোমেলো। মাঘের শীতে ঠকঠক করে হাঁড় কাঁপুনি নেই। আবহাওয়া বিভাগ বলল, তীব্র শৈত্যপ্রবাহ এই নামল বলে। কোথায়। একদিন থেকেই উধাও। শীতের মডেল হিমালয় পাদদেশীয় উত্তরাঞ্চল। সেখানেই মাঘের শীতে ফাল্গুন চৈত্রের হাওয়া। মাঝে মধ্যে বইছে ধূলিঝড়। মাঘের ভর দুপুর অচেনা। সকালে সোয়েটার কোট গায়ে চরানো যায় না। দুপুরে ঘাম ঝরে। গা চিটমিট করে ওঠে। সকাল সন্ধ্যায় ঘন কুয়াশা নেই। রাতের প্রথম প্রহরে গরম কাপড়ের দরকার তেমন হয় না। মধ্য রাতে লেপের কিছুটা দরকার হয়, খানিক পরই লেপ ফেলে কাঁথা। বয়োজ্যেষ্ঠরা বলেন- মাঘের শীতে বাঘ পালায়। বাঘ আর আছে কই! ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা কমছে। সেদিনের মাঘ থাকলে না হয় পালাত। বাঘ যাও আছে তা উষ্ণতার মধ্যেই বাস করছে। শীতের মাঘের এই দৈন্যদশায় পরিযায়ী পাখিদের (মাইগ্রেটারি বার্ড) মধ্যে পেয়ে বসেছে ভ্রান্তিবিলাস। উত্তর গোলার্ধের সাইবেরিয়া অঞ্চল তুষারাবৃত্তের দেশগুলো থেকে আসা পাখিরা ঠাহর করতে পারছে না কোন মাঘের দেশে তারা এসেছে। অবশ্য মাঘের ফাগুনে হাওয়া প্রণয়ের মধুময়তায় পাখিদের অনেক আনন্দও দিচ্ছে। প্রাণের উচ্ছ্বাসের উষ্ণতায় তারা উড়ে উড়ে জলকেলি খেলতে পারছে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের থাবায় শীতের আবহাওয়ার এমন বিরূপ আচরণে পরিযায়ী পাখিদের প্রত্যাবর্তনের পালা এবার দ্রুত শুরু হতে পারে। তার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাশয়ে পাখিদের অভয়াশ্রমে অতিথিরা কমে গিয়েছে। উত্তরাঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র যমুনা পদ্মার চর বিল দীঘিতে এবার পৌষ শেষে কিছু পাখি এসে ফিরে গিয়েছে। যমুনার চর ধারাবর্ষার লোকজন জানালেন কয়েকদিন পাখি উড়তে দেখেছেন। মাঘের এই সময়টায় ওরা নেই। গ্রামীণ জীবনেও এবারের মাঘ সেদিনের সেই মাঘ হয়ে আসেনি। সেখানেও ভর দুপুরে ধূলিঝড় বইছে। বিশেষ করে চরের মধ্যে। আঙিনায় খড়কুটা জ্বালিয়ে তাপ পোহানোর দরকার পড়ছে না। এই সময়টায় বোরো আবাদের ধুম পড়েছে। কৃষক শীতের সকালে গায়ে চাদরমুড়ি দিয়ে ফসলের মাঠে যাচ্ছে ঠিকই, বেলা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গেই চাদর সরাতে হচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে রোদের তাপ। ঘামছে শরীর। একজন আবহাওয়া কর্মকর্তা জানান, শীতকালে উত্তর গোলার্ধ থেকে যে সাইবেরিয়ান শীতল বায়ু উত্তর থেকে দক্ষিণে যায় তা ভারি বায়ু। এই ভারি বায়ু মৌসুমী বায়ু প্রবাহকে সাগরের দিকে ঠেলে দেয়। সমুদ্রের বাষ্পিভূত মেঘ নিয়ে বায়ু উত্তর থেকে হিমালয়ের স্পর্শে শীতল বায়ু হয়ে দক্ষিণের দিকে যায়। জলবায়ুর অস্বাভাবিক পরিবর্তনের পালায় পুরো প্রক্রিয়ার দারুণ ব্যাঘাত ঘটেছে। যে কারণে কোন ঋতুই এখন ঠিকভাবে থাকতে পারছে না। এবারের শীত মৌসুমেও মাঘ আর সেই অবস্থায় নেই। মাঘে বইছে ফাগুনে হাওয়া। ফুলেরা পাপড়ি মেলে জানান দিচ্ছে আগাম ফাগুনের।
×