ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

রুয়েট-রাজশাহী বাইপাস নির্মাণে এ পর্যন্ত ব্যয় ৫২ কোটি টাকা

পাঁচ কিমি সড়কের কাজ শেষ হয়নি ৪ বছরেও

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২০ জানুয়ারি ২০১৭

পাঁচ কিমি সড়কের কাজ শেষ হয়নি ৪ বছরেও

আনোয়ার রোজেন ॥ নাটোর রোড (রুয়েট) হতে রাজশাহী বাইপাস পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য মাত্র ৫ কিলোমিটার। রাজশাহী শহরের সঙ্গে সংযোগকারী এ সড়কটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৩ সালের এপ্রিলে। এরপর পেরিয়ে গেছে চার বছর। গত জুন মাসে শেষ হয়েছে প্রকল্পের মেয়াদও। তবে সড়কটির কাজ এখনও শেষ করা যায়নি। এ সময়ে সড়কটির ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৮১ শতাংশ। আর আর্থিক অগ্রগতি প্রায় ৬০ শতাংশ। এ সংক্রান্ত প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৮৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ চার বছরে প্রায় ৫২ কোটি টাকা খরচও হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ করছে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এমন প্রেক্ষাপটে নতুন করে ৪৩ শতাংশ ব্যয় (প্রায় ৩২ কোটি টাকা) বাড়ানো এবং সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এছাড়া সংশোধিত প্রস্তাব অনুযায়ী সংযোগ সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে। এবার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্য বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে তাগিদও দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, প্রকল্পটির এ্যালাইনমেন্টের দৈর্ঘ্য ৫ কিলোমিটার। রাস্তার এ্যালাইনমেন্টের মধ্যে ১৮২টি পাকা ঘরবাড়ি এবং অনেক গাছপালা ছিল। ভূমি অধিগ্রহণ ও স্থাপনার ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ একটি জটিল ও সময় সাপেক্ষ কার্যক্রম। এ চার বছরে ভূমির দাম বেড়েছে, বিভিন্ন স্থাপনার ক্ষতিপূরণ মূল্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া গণপূর্ত এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের রেট সিডিউল পরিবর্তনের কারণে রাস্তাসহ অন্যান্য নির্মাণ কাজের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। আরসিসি ড্রেন নির্মাণ কাজের পরিমাণ ও ব্যয় হ্রাস, ইলেকট্রিক লাইন, টিএ্যান্ডটি লাইন স্থানান্তর এবং রেলওয়ে লেভেল ক্রসিং কাজের ব্যয় বৃদ্ধি ও ভূমি উন্নয়ন কাজের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ছে। তবে প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রয়োজনীয় সমীক্ষা যাচাই না করে এবং ভূমি অধিগ্রহণ ব্যয় ও সময়ের বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়েই প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। সূত্র জানায়, রুয়েট হতে রাজশাহী বাইপাস সড়ক পর্যন্ত প্রশস্তকরণ শীর্ষক প্রকল্পটির ব্যয় ছিল ৭৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা। সেখান থেকে ৪৩ শতাংশ বাড়িয়ে ১০৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা করার কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ থাকলেও সেটি বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করে প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিভাগীয় শহর হওয়া সত্ত্বেও উন্নয়নের ক্ষেত্রে অন্যান্য বিভাগীয় শহর থেকে রাজশাহী শহর পিছিয়ে আছে। রাস্তা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা এ শহরে তেমনভাবে গড়ে উঠেনি বলে ব্যবসা ও বাণিজ্যের প্রসার ঘটলেও এখানে ব্যাপকভিত্তিক শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেনি। ফলে অর্থনৈতিক কর্মকা- আশানুরূপ গতিশীলতা লাভ করেনি। নাটোর-নওয়াবগঞ্জ রাস্তাটি শহরের কেন্দ্র ঘন জনবসতি এলাকা দিয়ে চলমান হওয়ায় ট্রাফিক জ্যাম অত্যন্ত প্রকট। রাজশাহী শহরের মাস্টার প্লান থেকে দেখা যায় ভবিষ্যতে শহর এলাকা আরও বৃদ্ধি পাবে। সব ধরনের যানবাহন যেমন আন্তঃজেলা বাস, মিনিবাস, জিপ, ভ্যান ইত্যাদি রাজশাহী-নওগাঁ সড়ক ব্যবহার করে রাজশাহী শহরে প্রবেশ করে ফলে রাতদিন ওই সড়কে ট্রাফিক জ্যাম লেগেই থাকে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য কোর্ট বাজার, কোর্ট স্টেশন, হরোগ্রাম, মোল্লাপাড়া হয়ে রাজশাহী সিটি বাইপাস সংযোগ সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য এই প্রকল্পটি ৭৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে একনেক কর্তৃক ২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল অনুমোদিত হয়। তারপর রেট সিডিউল পরিবর্তনের কারণে নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি, জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ ব্যয় বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে প্রকল্পটি ১০১ কোটি ১১ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে সংশোধনের প্রস্তাব করা হলে ২০১৬ সালের ৬ নবেম্বর প্রকল্পটির ওপর পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভার সিদ্ধান্তের আলোকে আরডিপিপি পুনর্গঠন করে অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করা হয়েছে। পুনর্গঠিত প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১০৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা এবং মেয়াদকাল ২০১৩ সালের জানুয়ারি হতে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। সংশোধিত প্রকল্পের প্রধান প্রধান কার্যক্রমগুলো হচ্ছে, ১ দশমিক ৮২ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ, ২ দশমিক ২৫ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ ২৮ হাজার ৭২৫ দশমিক শূন্যে ৫ ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন, ১৫৪টি স্থাপনার ক্ষতিপূরণ, ৩০ হাজার ১০ মিটার ড্রেন নির্মাণ এবং ৮টি কালভার্ট নির্মাণ, নাগরিক পরিসেবা স্থানান্তর ও পুনঃস্থাপন করা হবে।
×