ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

লালমাটিয়া হাইস্কুলের চার খুদে বিজ্ঞানীর ক্যারিশমা

কল্পনার ‘গ্রীন সিটি’ বিজ্ঞানমেলার টেবিলে...

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২০ জানুয়ারি ২০১৭

কল্পনার ‘গ্রীন সিটি’ বিজ্ঞানমেলার টেবিলে...

স্টাফ রিপোর্টার ॥ টেবিলের ওপর সাজানো রয়েছে একটি সবুজে ঘেরা শহর। অনেকটা স্বপ্নের মতো। গাছপালা আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যম-িত এমন একটি শহর আমাদের কল্পনায় আঁকা থাকলেও বাস্তবে এমন একটি শহরের প্রকল্প তৈরি করেছে খুদে চার বিজ্ঞানী। দশম শ্রেণীর এই চার শিক্ষার্থী তাদের ভাবনায় ‘গ্রীন সিটি’র একটি অবয়ব প্রস্তুত করেছে। ঢাকা সিটিসহ দেশের অন্যান্য সিটি এই প্রকল্প অনুযায়ী গ্রীন সিটিতে পরিণত করা যে সম্ভব তা উদ্ভাবনী শক্তির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছে এই চার শিক্ষার্থী। ‘গ্রীন সিটি’ নামক একটি প্রকল্প তৈরি করেছে লালমাটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর চার ছাত্রী তাজকিয়া ইরানা, নোশিন ফারজানা, ফিজা খান ও আফরোজা আক্তার। খুদে বিজ্ঞানীদের এ রকম শতাধিক চমকপ্রদ আবিষ্কার নিয়ে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) বা সায়েন্সল্যাব প্রাঙ্গণে বসেছে ৩ দিনব্যাপী বিজ্ঞান ও শিল্প-প্রযুক্তি মেলা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান প্রধান অতিথি থেকে মেলা উদ্বোধন করেন। বৃহস্পতিবার সকালে উদ্বোধনের পর থেকেই মেলার বিভিন্ন স্টল ঘিরে ছিল দর্শনার্থী ও খুদে বিজ্ঞানীদের মিলনমেলা। যেখানে তারা নিজেদের আবিষ্কার সম্পর্কে নানা তথ্য তুলে ধরছেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নানা বিষয়ে জ্ঞান বিনিময় করছেন অন্য খুদে বিজ্ঞানীদের সঙ্গে। ইয়াফেস ওসমান অনুষ্ঠানে বলেন, তথ্য ও শিল্প প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। একই সঙ্গে জ্ঞান-বিজ্ঞানের পথে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের নবীনরা। বর্তমান প্রজন্ম অনেক আধুনিক। আমাদের সময়ে আমরা যা কল্পনা করতাম বর্তমান প্রজন্ম তা বাস্তবায়ন করে দেখাচ্ছে। তাদের চিন্তার সঙ্গে আমাদের চিন্তার সমন্বয় করতে হবে। ভালবেসে উদ্ভাবনী কাজে উৎসাহ দিতে হবে। আমাদের কাজ হবে বিজ্ঞান চর্চায় তাদের সহযোগিতা করা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। সভাপতিত্ব করেন বিসিএসআইআর চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ। অনুষ্ঠানে ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস বলেন, এই মেলার মাধ্যমে খুদে বিজ্ঞানীদের মধ্যে বিজ্ঞান চর্চার আগ্রহ বাড়বে। তারা বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে উঠতে উৎসাহ পাবে। বর্তমান প্রজন্মের হাত ধরেই ডিজিটাল বাংলাদেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিশাল ক্ষেত্র তৈরি হবে। বিসিএসআইআরের চেয়ারম্যান বলেন, তরুণদের মধ্যে বিজ্ঞান চর্চাসহ সৃজনশীল কাজে আগ্রহ সৃষ্টি করতেই প্রতিবছর আমরা এই আয়োজন করি। এর মাধ্যমে তাদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ সাধন সহজ হবে। মেলায় বিসিএসআইআর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রকল্পগুলোর মধ্যে ছিল ‘রিসাইক্লিং ওয়াটার’, ‘বাতাসের সাহায্যে বিদ্যুত উৎপাদন’, ‘আর্থকোয়াক সেন্সর’, ‘হাইড্রলিক ব্রিজ’। খুদে বিজ্ঞানীদের প্রকল্পগুলোর মধ্যে ছিল সমুদ্রস্রোত থেকে বিদ্যুত উৎপাদন, ময়েশ্চার সেন্সর, স্মার্ট সিটি, স্মার্ট নিও সিকিউরিটি সিস্টেম, চৌম্বকীয় পদ্ধতি দ্বারা বিদ্যুত উৎপাদন, অর্ডিনো এ্যাগ্রিকালচার ও হাইড্রোপোনিক কাল্টিভেশন সিস্টেম। কলেজ পর্যায়ে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের প্রকল্পগুলোর মধ্যে ছিল মাল্টিরোটর এ্যাগ্রোনমি, প্রস্টেটিক মেকানিক্যাল আর্ম ফর ফিজিক্যাল ডিজএ্যাবলস, লেজার লাইট সিকিউরিটি সিস্টেম উইথ এলডিআর, একুয়ানিক্স: রি ইমেজিং ওয়েস্ট ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট, আর্টিফিসিয়াল ভিডিও লার্নার ফর নেক্সট জেনারেশন রোবট, ডিকম্পোজিশন অব প্লাস্টিক ইউজিং মাইক্রোওয়েভস। মেলায় অংশ নিয়েছে সাতটি ক্লাব ও তিনটি প্রতিষ্ঠান। ক্লাব পর্যায়ে প্রকল্পগুলোর মধ্যে ছিল অটো অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র, ফিলামেন্টবিহীন বাল্ব, ইন্টেলিজেন্ট ড্রোন। প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে ছিল ভূমিকম্প এলার্ম মেশিন, মাল্টি সিস্টেম এ্যাগ্রিকালচার প্রজেক্ট। মেলায় নটর ডেম, হলিক্রস, ভিকারুন্নিসা, আইডিয়ালসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ৪৫০ ছাত্রছাত্রী ও খুদে বিজ্ঞানী এবং স্বশিক্ষিত উদ্ভাবকরা ১৪৬ প্রকল্প নিয়ে অংশগ্রহণ করেছে। মেলা চলবে আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত। মেলা শেষে চারটি বিভাগে মোট ১২জনকে পুরস্কার প্রদান করা হবে। আগামী ২১ জানুয়ারি বিকেল তিনটায় সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী ও বিজয়ীদের পুরস্কার ও সনদপত্র প্রদান করা হবে।
×