ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২০ জানুয়ারি ২০১৭

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ পায়ে হাঁটার সামান্য পথ। শহর ঢাকার সে পথও দখল হয়ে গেছে। না, হঠাৎ করে নয়। ফুটপাথ দখলের ঘটনা অনেক পুরনো। এত পুরনো যে, বিষয়টি নিয়ে দায়িত্বশীলদের কেউ তেমন কথা বলতেন না। ফুটপাথের মতো ‘ফালত’ু বিষয় নিয়ে বলে সময় নষ্ট করার কি আছে? ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। ফুটপাথ বলতে কিছু আর অবশিষ্ট নেই। কোন কোন এলাকায় হ্যারিকেন জ্বালিয়ে খুঁজলেও ফুটপাথ পাওয়া যাবে না। একটি রাজধানী শহর। শহরবাসীর পায়ে হাঁটার পথটুকু দখল হয়ে গেছে। পথচারীরা চা-বিড়ির দোকান ঠেলে হাঁটছেন। কখনও গায়ে পানের পিক এসে পড়ছে। কখনও জ্বলন্ত সিগারেটের ছেঁকা খেতে হচ্ছে। এর পর দাঁত বের করা হাসি। একবারটি ‘সরি’ বলা। কিংবা তা-ও না। এভাবেই চলতে হচ্ছে ফুটপাথে। বাদাম চানাচুর থেকে শুরু করে মাছ, তরকারি, মৌসুমী ফল, জামা কাপড়, পুরনো ফার্নিচার, গাড়ির গ্যারেজ- সবই ফুটপাথ দখল করে। যার যেখানে খুশি পসরা সাজিয়ে বসে যাচ্ছেন। কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করছেন না। এভাবে বহুদিন। এখন দখলবাজদের দল অনেক বড়। ‘ইনকামও’ বেশ। এ অবস্থায় হাকার উচ্ছেদের কাজটি সহজ হওয়ার কথা নয়। তবে চেষ্টা করছেন ঢাকার মেয়ররা। বেশ কিছু ভাল উদ্যোগের পাশাপাশি চলছে ফুটপাথ খালি করার কাজ। দিনের বেলায় গুলিস্তান মতিঝিল এলাকার ফুটপাথ হকারমুক্ত রাখতে অভিযান চালাচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। গত সোমবার গোলাপ শাহ মাজারের সামনে থেকে শুরু হয় উচ্ছেদ অভিযান। এ সময় গুলিস্তান মার্কেট, গুলিস্তান ট্রেড সেন্টার, ঢাকা ট্রেড সেন্টার, পাতাল মার্কেট ও বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ফুটপাথের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। অভিযানের সময় ফুটপাথে গড়ে তোলা কয়েকটি পাকা স্থাপনাও গুঁড়িয়ে দেয় সিটি করপোরেশনের বুলডোজার। এখনও বিভিন্ন এলাকায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার ফুটপাথ প্রতিদিন ব্যবহার করেন এমন অনেকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের। তারা সবাই উদ্যোগটির প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, ফুটপাথ ফুটপাথ হয়ে থাকবে। থাকতে হবে। তাদের আশা, সকল বাধা উপক্ষো করে সাধারণ নাগরিকের অধিকারের পক্ষে দাঁড়াবেন মেয়র সাঈদ খোকন। মানবিক কারণে হকারদের পুনর্বাসন করার পরামর্শও দিয়েছেন তারা। এখন দেখার বিষয় কতটা পারেন তরুণ মেয়র। একইরকম শক্ত অবস্থানে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। মোটরসাইকেল চালকদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তিনি। স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বলেছেন, মোটরসাইকেল নিয়ে অনেকে বীরদর্পে ফুটপাথে ওঠেন। ফুটপাথে উঠলেই তাকে ধরে পুলিশে দিন। অনেক প্রাইভেটকার ফুটপাথে চাকা তুলে দেয়। এমনটি দেখলেও পুলিশে দিন। কেউ আইন মানবেন না, মানুষকে তোয়াক্কা করবেন না এটা চলবে না। ঢাকার বিএফ শাহীন কলেজে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মেয়র এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তার উক্তি এখন দারুণ আলোচনায়। আনিসুল হক নগরবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, আগামী এক বছরের মধ্যে উত্তরের ফুটপাথ এমনভাবে গড়া হবে যেন অন্ধজনেও সহজে চলতে পারেন। এ জন্য নাগরিকদের সহযোগিতা কামানা করেন তিনি। এবার অন্য প্রসঙ্গ। শহর ঢাকায় বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে আরও একটি উৎসব। প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয়েছে বাংলাদেশ-ত্রিপুরা সাংস্কৃতিক উৎসব। সকলেরই জানা, মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের জনগণ বিপুল সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন। সীমান্তবর্তী ত্রিপুরা ছিল মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের প্রথম গন্তব্য। ঢাকা ও ত্রিপুরার সংস্কৃতির মধ্যেও অনেক মিল রয়েছে। সেইসব মিল ও বন্ধুত্বের জায়গাগুলোকে মূল ধরেই উৎসবের আয়োজন। শিল্পকলা একাডেমির নন্দনমঞ্চ, জাতীয় নাট্যশালা, পরীক্ষণ থিয়েটার হল, স্টুডিও থিয়েটার হল, সেমিনার কক্ষ, জাতীয় চিত্রশালা ও নন্দনমঞ্চে থাকছে উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। উৎসবে যোগ দিতে ত্রিপুরা থেকে গৌতম দাসের নেতৃত্বে ত্রিপুরা সরকারের সংস্কৃতিমন্ত্রী ভানু লাল সাহা ও ৬০ সদস্যের সাংস্কৃতিক-নাগরিক প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছে। উৎসব প্রসঙ্গে বাংলাদেশে ত্রিপুরা সাংস্কৃতিক উৎসব পর্ষদের চেয়ারম্যান রামেন্দু মজুমদার বলেন, ঐতিহাসিক সম্পর্ককে ভিত্তি করেই উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। আগামী বছরের আয়োজনটি হবে ত্রিপুরায়। তারপর আবার ঢাকায়। এভাবে নিয়মিতভাবে এ উৎসব চলতে থাকবে। এদিকে, আগামী কাল শুক্রবার শেষ হচ্ছে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। ‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’ সেøাগানে গত ১২ জানুয়ারি শুরু হয় এই উৎসব। জাতীয় গণগ্রন্থাগার ও জাদুঘর মিলনায়তন ছাড়াও প্রতিদিন প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় আমেরিকান কালচার সেন্টার, আলিয়ঁস ফ্রঁসেস, স্টার সিনেপ্লেক্সসহ ঢাকার মোট ৬টি ভেন্যুতে। ৬৭টি দেশের ১৮৭টি চলচ্চিত্র নিয়ে উৎসব। এশিয়ান কমপিটিশন, রেট্রোস্পেকটিভ, সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড, চিল্ড্রেন্স ফিল্মস, স্পিরিচুয়াল ফিল্মস, শর্ট ও ইন্ডিপেনডেন্ট ফিল্মস, নরডিক ফিল্ম এবং উইমেন্স ফিল্মমেকারস বিভাগে প্রদর্শিত হচ্ছে নির্বাচিত চলচ্চিত্র। আছে রেট্রোস্পেকটিভ বিভাগ। এ বিভাগের ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে খ্যাতিমান ইরানী পরিচালক প্রয়াত আব্বাস কিয়ারোস্তামি এবং স্বনামধন্য তুর্কি নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা ইয়াসিম ইয়াস্তাওগলুর চলচ্চিত্র। আব্বাস কিয়ারোস্তমির ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘ক্লোজআপ’, ‘টেস্ট অব চেরি’, ‘দ্যা উইন্ড উইল ক্যারি আস’, ‘দ্যা সার্টিফাইড কপি’ ও ‘লাইক সামওয়ান ইন লাভ’। ইয়াসিম ইয়াস্তাওগলু নির্মিত ছবি রয়েছে ৫টি। অধিকাংশ চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী এরই মাঝে অনুষ্ঠিত হয়েছে। নানা কারণে দর্শক সমাগম ছিল খুব কম। এই অপূর্ণতা নিয়েই আজ পর্দা নামছে উৎসবের।
×