ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

মোবাইলে বাংলায় স্মার্ট এ্যাপস;###;চীনের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকসই

এবার ই-ভিলেজ- কৃষক জানবে জমি ও ফসলের অবস্থা

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২০ জানুয়ারি ২০১৭

এবার ই-ভিলেজ- কৃষক জানবে জমি ও ফসলের অবস্থা

এমদাদুল হক তুহিন ॥ ক্ষুদ্র ভূখন্ড ও ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা অন্যতম চ্যালেঞ্জ। একই সঙ্গে দেশের কৃষি ব্যবস্থায় ফসল উৎপাদনে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত, শিল্পায়ন ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রভাব বিদ্যমান। বাস্তব এমন পরিস্থিতিতে গবেষকরা নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অফুরন্ত সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে কিভাবে স্বল্প ব্যয়ে সর্বোচ্চ ফলন নিশ্চিত করা যায়। কৃষিবান্ধব বর্তমান সরকারও নীতিগতভাবে প্রযুক্তিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে আসছে। এরই ধারবাহিকতায় প্রযুক্তির সর্বশেষ অগ্রগতি কাজে লাগিয়ে দেশের কৃষি ব্যবস্থায় টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ‘ই-ভিলেজ’ নামের একটি বিশেষ প্রকল্পে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ ও চীন। মাটির স্বাস্থ্য, ফসলের প্রকৃত রোগ যথাযথভাবে নিরূপণ করে বিদ্যমান উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে সর্বোচ্চ ফলন নিশ্চিত করাই এ প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্য। সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা, প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে কৃষিতে উৎপাদন খরচ কমবে ২০ শতাংশ, একই সঙ্গে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে ২০ শতাংশ। সার্বিকভাবে প্রকল্পের এলাকাধীন কৃষক ৪০ শতাংশ লাভবান হবেন। চীনা দূতাবাসের আর্থিক সহায়তায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইসফটস্টোন ও প্রকল্পের অগ্রগতি মূল্যায়ন ও পরামর্শক হিসেবে কাজ করবে সেন্টার ফর রিসার্চ এ্যান্ড ইনফর্মেশন (সিআরআই)। বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘ই-ভিলেজ’ প্রকল্পের ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যুত ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেনÑ কৃষিবিদ আবদুল মান্নান এমপি, চীনা দূতাবাসের শার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্স ইয়াং শি চাও, সেন্টার ফর রিসার্চ এ্যান্ড ইনফর্মেশনের নির্বাহী পরিচালক সাব্বির বিন শামস এবং আইসফটটোন চায়নার নির্বাহী সহ-সভাপতি ওয়াল্টার ফাং। এতে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ মাহবুবর রহমান। শুরুতেই সিআরআই, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইসফটস্টোনের কর্মকা- তুলে ধরতে ভিডিওচিত্র প্রদর্শিত হয়। মূল প্রবন্ধ পাঠকালে প্রকল্পের সার্বিক দিক তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইনফর্মেশন টেকনোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও ই-ভিলেজ প্রকল্পের প্রজেক্ট ইনভেস্টিগেটর রশীদুল হাসান। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য দেশে স্মার্ট কৃষি ব্যবস্থা প্রবর্তন করা। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে কৃষক অতিসহজে মোবাইল এ্যাপসে এক্সেস পাবে। সহজেই তারা মাঠ ফসলের সার্বিক দিক জানতে পারবে, একই সঙ্গে তারা নির্দেশনা পাবে তাদের করণীয় সম্পর্কেও। রশীদুল বলেন, প্রকল্পের শুরুতে আদর্শ গ্রাম হিসেবে গাজীপুরের জয়দেবপুর উপজেলার পাজুলিয়া গ্রামকে বেছে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটির মাধ্যমে একটি স্মার্ট এ্যাপস তৈরি করা হবে। ছবিসংবলিত বাংলা ভাষার এ এ্যাপসটি ব্যবহারের দিক দিয়ে কৃষকের জন্য সহজ হবে। একই সঙ্গে যুক্ত করা হবে অডিও ভয়েস। ফলে কৃষকরা তার জমি ও ফসলের কী অবস্থা তা জানতে পারবেন। শুরুতে একটি সবজিক্ষেতে সমীক্ষা চালানো হবে। ধীরে ধীরে তা অন্য ফসলে নিয়ে যাওয়া হবে। তিনি বলেন, কৃষকরা সকালে ফোন সেটটি ওপেন করলেই তাতে একটি বার্তা চলে যাবে, যাতে নির্দেশনা থাকবে তার ক্ষেতের সর্বশেষ অবস্থা। একই সঙ্গে তার ফসলের মাঠে কী ধরনের ওষুধ, সার, পানি বা অন্যান্য উপকরণ দিতে হবে- জেনে যাবেন তাও। এমনকি কৃষক বাড়ির বাইরে থাকলেও তার কাছে বার্তা পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা থাকবে। তিনি আরও বলেন, ই-ভিলেজ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে কৃষক সার্বিকভাবে ৪০ ভাগ লাভবান হবেন। এতে মাঠ ফসল বৃদ্ধি পাবে ২০ ভাগ ও উৎপাদন ব্যয় কমবে ২০ ভাগ। প্রকল্পটি কিভাবে কাজ করবে, কোথায় সার্ভার বসানো হবে তারও বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন তিনি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিদ্যুত ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি কৃষি। আর উদ্ভাবনীমূলক কর্মকা-ের মাধ্যমেই দেশের কৃষি আরও এগিয়ে যাবে। কারণ প্রযুক্তিই মানুষের জীবনকে পরিবর্তন করে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামী গ্রাম হবে প্রযুক্তিনির্ভর উন্নত গ্রাম। যেহেতু আমাদের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর, সেহেতু কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমেই সর্বোচ্চ উন্নতি সম্ভব। আমরা ই-ভিলেজ পোগ্রামের মাধ্যমেই গ্রামীণ অর্থনীতির সার্বিক উন্নতি নিশ্চিত করব। চীনা দূতাবাসের শার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্স ইয়াং শি চাও বলেন, ভবিষ্যত অর্থনীতির জন্য প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এর মাধ্যমে কৃষির ব্যাপক উন্নয়ন ঘটতে পারে। তিনি বলেন, ই-ভিলেজ প্রকল্প একটি নতুন ধারণা। এ প্রকল্প বাংলাদেশের কৃষি খাতে আমূল পরিবর্তন আনতে পারে। ই-ভিলেজ প্রকল্প বিষয়ে আইসফস্টোনের মহাব্যবস্থাপক ফেরহক ওয়াল্টার বলেন, চীন দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। ই-ভিলেজ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রান্তিক কৃষক ও কৃষি ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন এবং আধুনিক রূপান্তর সম্ভব। কৃষি অর্থনীতির গতানুগতিক হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিতে পারে প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক চাষাবাদ ও বিপণন প্রক্রিয়া। আয়োজকরা জানান, প্রকল্পের মাধ্যমে কিছু ডিভাইস উদ্ভাবন করা হবে, যা স্থানীয় আবহাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এসব ডিভাইস বিশ্বজুড়ে পাওয়া গেলেও তা খুব ব্যয়বহুল। দেশের কৃষকের পক্ষে তা কেনা কোনক্রমেই সম্ভব নয়। পাইলট প্রকল্প এমন একটি সাশ্রয়ী ডিভাইস নিয়ে, যা কৃষকের সামর্থ্যরে নাগালে থাকবে। মূল্যে তা কম হবে, ফলে এক বা একাধিক কৃষক মিলে ওই ডিভাইসটি কিনতে পারবেন। ডিভাইসটি নিজ থেকে পিএইচ লেভেল বলে দেবে, ক্ষতিকর পোকামাকড় আছে কি-না তাও বলে দেবে। তারা বলেন, ওই ডাটা চলে আসবে সার্ভারে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা এসব ডাটা বিশ্লেষণ-সুবিন্যাস করে সফটওয়্যার উন্নয়ন করে তা এ্যাপসে দেবেন। কৃষিবিদরা ডাটা বিশ্লেষণ করে যথাযথ পরামর্শ এ্যাপসে যুক্ত করবেন। এ্যাপসের মাধ্যমে কৃষকের কাছে কৃষিবিদের ওই পরামর্শ সরাসরি চলে যাবে। আয়োজকদের প্রত্যাশা, সামগ্রিকভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে তা হবে আরও এক ধাপ অগ্রগতি।
×