ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিজয় দিবস টেনিস, অভিমত বিকেএসপির টেনিস তারকা আফরানা ইসলাম প্রীতির

‘অবশ্যই আমি এখনও নাম্বার ওয়ান’

প্রকাশিত: ০৪:১১, ২০ জানুয়ারি ২০১৭

‘অবশ্যই আমি এখনও নাম্বার ওয়ান’

রুমেল খান ॥ খেলা শেষ হতেই কোর্টে লুটিয়ে পড়লেন। মনে হচ্ছিল পা পিছলে পড়ে গেছেন। আসলে মুখ লুকিয়ে কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে আবেগ সামলালোর চেষ্টা ছিল সেটি। উঠে দাঁড়াতেই কোচ লাকী আক্তার দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন তাকে। আলিঙ্গন শেষে বোঝা গেল, মোটেও আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি আফরানা ইসলাম প্রীতি। কেননা তার দু’চোখ বেয়ে গড়াচ্ছে অশ্রুজল। তবে এই অশ্রু হতাশার নয়, হারের কষ্টের নয়; বরং জয়ের উচ্ছ্বাসের। তাও আবার যেনতেন জয় নয়, খাদের কিনারা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অসাধারণভাবে লড়াই করে বিজয়। দুই ঘণ্টা ৩৭ মিনিটের এক মহাকাব্যিক দ্বৈরথ শেষে বিজয়িনীর নাম বিকেএসপির প্রীতি। ‘আইউবি বিজয় দিবস টেনিস প্রতিযোগিতা’য় মহিলা এককের চ্যাম্পিয়ন হয়ে অশেষ প্রীত হলেন বাগেরহাটের মেয়ে প্রীতি। বৃহস্পতিবার তিনি রমনা টেনিস কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত ফাইনালে একই দলের ঈশিতা আফরোজ রিতুকে হারান ৪-৬, ৭-৫, ৭-৬ (৭-৫) গেমে। প্রথম গেম হারার পর দ্বিতীয় গেমে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলেন উচ্চ মাধ্যমিকে মানবিক বিষয় নিয়ে পড়া প্রীতি। দ্বিতীয় গেমে জেতার পর খেলা গড়ায় তৃতীয় ও শেষ গেমে। প্রতিপক্ষ রিতু বয়সে ও অভিজ্ঞতায় এগিয়ে প্রীতির চেয়ে। সে জন্যই উপস্থিত দর্শকরা ধরেই নিয়েছিলেন শেষ গেমটিও জিতে নেবেন ২০১৩ বাংলাদেশ গেমসের চ্যাম্পিয়ন রিতু। তাদের সেই ধারণা সঠিক প্রতিপন্ন করে একপর্যায়ে তিনি এগিয়েও যান ৫-১ গেমে। কিন্তু কঠিন ইস্পাতসম দৃঢ় মানসিকতা-সংকল্প নিয়ে খেলে প্রীতি অবিশ্বাস্য নৈপুণ্য প্রদর্শন ও ‘ফাইটব্যাক’ করে ৫-৫ গেমে সমতা এনে ফেলেন। এবং একপর্যায়ে এগিয়েও যান (৬-৫)। কিন্তু অভিজ্ঞ রিতু সমতা ফেরান আবারও (৬-৬)। ফলে নিয়মানুযায়ী খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে প্রীতি ৭-৫ ব্যবধানে জিতে নিশ্চিত করেন শিরোপা এবং ফেটে পড়েন বিজয়ের উল্লাসে। ‘এগিয়ে থেকেও এভাবে ম্যাচ হারাটা খুবই দুঃখজনক। আসলে আমার ডান পায়ে ক্র্যাম্প হচ্ছিল। এ জন্যই স্বচ্ছন্দে নড়াচড়া করতে পারিনি। ফলে আত্মবিশ্বাস অনেক কমে যায়। এ জন্যই শেষদিকে ভাল খেলতে পারিনি। তবে চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পারলাম না।’ ফাইনাল শেষে এভাবেই নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেন রিতু। এই আসরে এরআগে দৈ¦তে চ্যাম্পিয়ন হন রিতু (সঙ্গী ছিলেন বিকেএসপির পপি আক্তার)। একক জিতলে দ্বি-মুকুট জিততে পারতেন তিনি। এ নিয়ে একক ফাইনালের আগে প্রত্যাশার চাপ ছিল কি? এ প্রসঙ্গে কদিন আগে ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতা রিতুর ভাষ্য, ‘দ্বৈতের চেয়ে আমি একক ইভেন্টটাকেই সবসময়ই প্রাধান্য দিই। তবে তাই বলে এককের ফাইনালের আগে মোটেও কোন চাপে ছিলাম না।’ বিকেএসপিতে খেলার পাশাপাশি টেনিসে সহকারী কোচের দায়িত্ব পালন করা শুরু করেছেন রিতু। কোচিং করাতে গিয়ে খেলোয়াড় হিসেবে পর্যাপ্ত অনুশীলন করতে না পারার সমস্যাকেও দায়ী করলেন তিনি। সেই সঙ্গে দায়ী করেন টেনিস ফেডারেশনকেও, ‘তারা সবসময়ই আমাদের অনেক দেরি করে এবং হঠাৎ করেই টুর্নামেন্ট শুরুর দিনক্ষণ জানায়। এতে আমরা পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিতে পারি না।’ পিছিয়ে পড়ে খাদের কিনারায়। সেখানে থেকে ফিরে শিরোপা জিতলেন কিভাবে? ‘এটাই প্রথম নয় এর আগেও আমি এভাবে পিছিয়ে পড়েও বা হারতে হারতে অনেক ম্যাচ জিতেছি। তবে আমার মাইনাস পয়েন্ট হচ্ছে শুরুর দিকে আমি ছন্দে থাকি না। পরে ধীরে ধীরে নিজেকে সাহস যোগাই এবং কামব্যাক করি। আজও তাই হয়েছে।’ প্রীতির জবাব। দ্বৈতে এই রিতুদের কাছেই আগেরদিন হেরেছেন। এককের ফাইনালে রিতুকে হারিয়ে কি প্রতিশোধ নিলেন? ‘বলতে পারেন। আসলে দ্বৈতেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারতাম। কিন্তু আমার দীর্ঘদিনের পার্টনার শাহ্ সাফিনা লাক্সমি ছুটিতে চলে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে অন্য একজনের সঙ্গে (জলি/জেরিন আক্তার) জুটি বেঁধে খেলেছি। সে লাক্সমির চেয়ে জুনিয়র এবং অভিজ্ঞতায়ও পিছিয়ে। তারপরও আমরা ফাইনাল পর্যন্ত খেলেছি। এটাও কম অর্জন নয়। তবে আমি দ্বৈতের চেয়ে এককটাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি।’ এ নিয়ে রিতুর সঙ্গে যে কোন পর্যায়ের টেনিসে তৃতীয়বারের মতো ফাইনালে মুখোমুখি হলেন প্রীতি। জয়ের পাল্লা ভারি প্রীতিরই। তিনি জিতেছেন দু’বার, আর রিতু একবার। গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর এই ভেন্যুতেই প্রীতি ‘ওয়ালটন উন্মুক্ত টেনিস টুর্নামেন্টে’ দ্বি-মুকুট জিতেছিলেন। তখন তিনি বলেছিলেন, তিনিই এখন মেয়েদের টেনিসে নাম্বার ওয়ান, তবে শীর্ষে থেকেও তিনি প্রীতি নন।
×