ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সেঞ্চুরিতে যুবরাজের রাজসিক ফেরা

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ২০ জানুয়ারি ২০১৭

সেঞ্চুরিতে যুবরাজের রাজসিক ফেরা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ টানা তিনটা বছর ছিলেন ওয়ানডে দলের বাইরে। যদিও ক্ষুদ্রতম ফরমেট টি২০ ম্যাচে যাওয়া আসার মধ্যেই ছিলেন জাতীয় দলে। তবে এবার ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ানডে ও টি২০ উভয় সিরিজের দলেই আছেন অলরাউন্ডার যুবরাজ সিং। কিন্তু প্রত্যাবর্তনের ম্যাচটা ভাল হয়নি- প্রথম ওয়ানডেতে মাত্র ১৫ রানেই বিদায় নিয়েছিলেন। ৩৫ বছর বয়সী এ বাঁহাতি ফুরিয়ে গেছেন এমন গুঞ্জন শুরু হয়েছিল। কিন্তু নিজেকে আবার নতুন করে চেনালেন বৃহস্পতিবার। কটকে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস উপহার দিলেন যুবরাজ। পুরনো সেই বিধ্বংসী মেজাজেই তিনি মাত্র ১২৭ বলে ২১ চার ও ৩ ছক্কায় ১৫০ রান করে ফিরে যান। ইংল্যান্ড বরাবরই যুবরাজের প্রিয় প্রতিপক্ষ। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ব্যাটিং গড় ৪০-এর নিচে। কিন্তু ইংলিশদের বিরুদ্ধে দুরন্ত যুবরাজের ব্যাটিং গড় ৪৭.৪২। আর কোন টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিরুদ্ধে ওয়ানডেতে এত ব্যাটিং গড় নেই তার। আর সেটাই যেন জ্বলে ওঠার কারণ হয়ে গেল। তাছাড়া প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে পুনেতে মাত্র ১৫ রান করে বিদায় নেয়ার পর যেন টগবগ করে ফুটছিলেন এ অভিজ্ঞ বাঁহাতি। সেটার প্রভাব পড়ল দ্বিতীয় ওয়ানডেতে। লোকেশ রাহুলের পর অধিনায়ক বিরাট কোহলি বিদায় নিলে ক্রিজে আসেন যুবরাজ। কিন্তু তার সঙ্গী হিসেবে বেশিক্ষণ থাকতে পারলেন না আরেক ওপেনার শিখর ধাওয়ান। দলীয় ২৫ রানের মধ্যে ৩ টপঅর্ডার সাজঘরে ফেরায় বিপর্যয়েই পড়ে যায় ভারতীয় দল। পেসার ক্রিস ওকস ওই ধ্বংসের শুরু করেছিলেন। চাপের মধ্যে থেকে সদ্য সাবেক হওয়া অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিকে সঙ্গে নিয়ে সাবলীলভাবেই খেলতে থাকেন যুবরাজ। চতুর্থ উইকেটে গড়ে ওঠে ২৫৬ রানের বিশাল জুটি। এটি ছিল ওয়ানডে ইতিহাসে চতুর্থ উইকেটে দ্বিতীয় সেরা উইকেট জুটি। এরআগে মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন ও অজয় জাদেজা জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ২৭৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েছিলেন। সেটাই এখন পর্যন্ত এ উইকেটের সেরা জুটির রেকর্ড। ক্যারিয়ারের ১৪তম সেঞ্চুরি পেয়ে যান যুবরাজ। ধোনির আগেই বিদায় নেন তিনি। কিন্তু ততোক্ষণে ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস খেলে ফেলেন। ২০০৩ সালে ক্যারিয়ারের সেরা ১৩৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন যুবরাজ সিডনিতে। এবার সেটাকে ছাড়িয়ে যান তিনি। ১৫০ রান করে থামেন ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা ওকসের চতুর্থ শিকারে পরিণত হয়ে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে কোন ভারতীয় ব্যাটসম্যানের এটিই সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে যে কোন ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ ওয়ানডে ইনিংসের তালিকায় অবশ্য এর স্থান যৌথভাবে পাঁচে। ২০১১ বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলেছিলেন যুবরাজ। সেবার দ্বিতীয়বারের মতো ওয়ানডের বিশ্বকাপ ট্রফি ঘরে তোলে ভারতীয় দল। কিন্তু বিশ্বকাপের পরই পারফর্মেন্সে অবনতি ঘটতে থাকে এ অলরাউন্ডারের। মাঝে দীর্ঘদিন ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগেছেন। ক্যান্সারকে হারিয়ে আবার খেলায় ফিরেছিলেন টি২০ ফরমেটে। কিন্তু নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি বলে অনিয়মিত হয়ে যান। সে কারণে ওয়ানডে দলেও আর ঠাঁই হয়নি নিয়মিত। ২০১৩ সালের ১১ ডিসেম্বর সেঞ্চুরিয়নে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছিলেন। আর সর্বশেষ সেঞ্চুরিটা ছিল ২০১১ সালেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপে সেই শতক হাঁকান। তারপর থেকে আরও ১৬ ইনিংস ব্যাট করেছেন। কিন্তু ভাল কিছু করতে পারেননি। বিশ্বকাপের ওই সেঞ্চুরির আগেও ১৭ ইনিংসে মাত্র ২ ফিফটিসহ ১৮.৩২ গড় ছিল তার ব্যাটিংয়ের। সেখান থেকে ভালভাবেই নিজেকে ফিরে পেলেন। রাজসিক এক সেঞ্চুরিতে জানিয়ে দিলেন এখনও ফুরিয়ে যাননি তিনি।
×