ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুশফিক, ইমরুল, মুমিনুলকে ছাড়াই লড়াই

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ২০ জানুয়ারি ২০১৭

মুশফিক, ইমরুল, মুমিনুলকে ছাড়াই লড়াই

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ টেস্টে বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রাণশক্তি কারা? স্বাভাবিকভাবেই নামগুলো চোখের সামনে ভাসছে। তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, মুমিনুল হক, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহীম। এ ছয় ক্রিকেটারের মধ্যে তিন ক্রিকেটারই দ্বিতীয় টেস্টে নেই। শুরুতে ইমরুল নেই। মাঝে মুমিনুল ও মুশফিক নেই। তাতে দলের মাজাতো খেলা শুরু হওয়ার আগেই ভেঙ্গে গেছে। এ ভাঙ্গা দল নিয়েই এখন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। আগেই এ তিন ক্রিকেটারের না খেলা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল। ওয়েলিংটনে হওয়া প্রথম টেস্টের পরই এ তিন ক্রিকেটার ইনজুরিতে পড়ায় নাও খেলতে পারেন তা বোঝা যাচ্ছিল। এরপরও ইমরুল ও মুশফিককে নিয়ে দোলাচল থাকলেও বুধবার মুমিনুলকে নিয়ে যে শঙ্কার বাতাস বইছিল; তা শেষ হয়ে যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) দেয়া দ্বিতীয় টেস্টের দলে পরিবর্তন দেখে বোঝা যায়, এ তিন ক্রিকেটার শেষ পর্যন্ত খেলছেন না। নতুন দুইজনকে দ্বিতীয় টেস্টের জন্য দলে রাখা হয়েছে। একজন নাজমুল হোসেন শান্ত। আরেকজন মুস্তাফিজুর রহমান। এ দুইজনই দ্বিতীয় টেস্টের জন্য ১৫ জানুয়ারি ঘোষিত দলে ছিলেন না। এখন ১৪ সদস্যের দলতো দিতে হবে। তা দিতে গিয়েই মুস্তাফিজকে রাখা হয়েছে। ইমরুলের পরিবর্তে যে সৌম্য সরকার খেলবেন। আর মুশফিকের পরিবর্তে নুরুল হাসান সোহান, তা বোঝাই যাচ্ছে। নিউজিল্যান্ড সফরে মুশফিকের ইনজুরিতে ওয়ানডে অভিষেক হওয়ার পর একই কারণে টেস্টেও সোহানের অভিষেক হতে যাচ্ছে। কিন্তু মুমিনুলের পরিবর্তে খেলবেন কে? এ প্রশ্ন থাকছেই। একজন ছাড়া দ্বিতীয় টেস্টের জন্য বৃহস্পতিবার ঘোষিত দলে আর কোন ব্যাটসম্যানই বাকি নেই। তিনি নাজমুল হোসেন শান্ত। যার এখন পর্যন্ত কোন ফরমেটেই অভিষেক হয়নি। দলের সঙ্গে যে অস্ট্রেলিয়ায় ক্যাম্পে এবং নিউজিল্যান্ডে আছেন, সেটিও ভবিষ্যত পরিকল্পনায় থাকাতেই ছিলেন। কিন্তু এখন হয়ত দলের প্রয়োজনে তাকে ব্যাট হাতে নেমে যেতে হতে পারে। মুশফিক না থাকায় তামিম ইকবালের কাঁধেই টেস্টের নেতৃত্ব থাকছে। প্রথমবারের মতো টেস্টে নেতৃত্ব দেবেন তামিম। যদিও ইনজুরিতে পড়ে মাঠের বাইরে থাকায় প্রথম টেস্টেও অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন তামিম। সেটি সহঅধিনায়ক থাকাতেই অধিনায়কের অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করেছেন। এবার পুরোদস্তুর ম্যাচের শুরু থেকেই নেতৃত্ব তামিমের কাঁধেই থাকছে। সহঅধিনায়ক সাকিব আল হাসান। নিয়মিত টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের বুড়ো আঙ্গুলের ব্যথা কমেনি। তাই দ্বিতীয় টেস্টে নেই মুশফিক। বাংলাদেশ দলের ফিজিও ডিন কনওয়ে জানিয়েছেন, ‘মুশফিকের ব্যথা রয়েছে। তবে দ্রুতই সেরে উঠতে পারবে। আশা করছি পরবর্তী টেস্টের (ভারতের বিপক্ষে) আগে ফিট হয়ে যাবে মুশফিক।’ ওপেনার ইমরুল কায়েসের উরুতে ভালভাবেই সমস্যা আছে। ফিজিও জানিয়েছেন, ‘ইমরুলের ঠিক হতে দুই সপ্তাহ সময় লাগবে।’ সাড়ে ৯ বছর পর মুশফিক দলের হয়ে কোন টেস্ট খেলছেন না। ২০০৭ সালের জুলাই থেকে টানা ৪৯টি টেস্ট খেলেছেন মুশফিক। অবশেষে ইনজুরির জন্য টেস্ট থেকে দূরে থাকছেন মুশফিক। মুশফিকের পরিবর্তে দ্বিতীয় টেস্টে নেতৃত্ব দেয়া তামিম বৃহস্পতিবার টেস্টপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘তারা দু’জনই এই টেস্টে খেলতে পারবে না। ইমরুল ১০-১২ দিনের জন্য বাইরে চলে গেছে। মুশফিকের আরেকটু বেশি সময় লাগবে, ৩-৪ সপ্তাহ। আমরা আশা করেছিলাম ওরা আরও আগে ফিরবে। তবে দু’জনের চোট গুরুতর নয়। উদ্বেগের কিছু নেই। ছোটখাটো সমস্যা। আশা করছি, ভারতের বিপক্ষে টেস্টে ওরা দু’জনই ফিরবে। মুশফিকের চোট বুড়ো আঙ্গুলেই। মাথায় আঘাতজনিত কোন সমস্যা নেই। আর ইমরুলের চোট উরুতে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘ওরা দু’জনই প্রথম একাদশের নিয়মিত খেলোয়াড়। একজন ওপেনার। অন্যজন শুধু অধিনায়ক নয়, দলের মিডল অর্ডারের মূল খেলোয়াড়। খুবই গুরুত্বপূর্ণ দু’জনকে আমরা পাচ্ছি না। কিন্তু চোটের ওপর তো কারও নিয়ন্ত্রণ নেই। যে দু’জন আসছে দলে ওরাও অনেক আত্মবিশ্বাসী। সৌম্য খেলবে, টি২০তে ওকে ভাল দেখাচ্ছিল। আশাকরি টেস্টে ও ভাল করবে। সোহানকে (নুরুল হাসান) আমরা ওয়ানডেতে দেখেছি। বেশ কটি ম্যাচে ভাল করেছে। আশাকরি সেও ভাল করবে।’ মুশফিক ও ইমরুলের না খেলার বিষয়টি আগেই ধারণা করা গিয়েছিল। কিন্তু মুমিনুল হককে নিয়েতো প্রধান কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহেও আশাবাদী ছিলেন। বুধবার বলেছিলেনও, ‘মুমিনুল পাঁজরে চোট পেয়েছিল। তবে ওর অবস্থা বেশ ভালই। আশা করছি টেস্টের আগেই ঠিক হয়ে যাবে।’ কিন্তু মুমিনুলও নেই। ফিজিও জানিয়েছেন, ‘মুমিনুলের পাঁজরে স্ক্যান করা হয়েছে। কিন্তু কোন সমস্যা ধরা পড়েনি। তবে অনুশীলনে তার নড়াচড়ায় সমস্যা হচ্ছে। দ্বিতীয় টেস্টের জন্য ফিট নয় মুমিনুল।’ তাই মুমিনুলও নেই। এই তিনজনের দেশে ফেরানোর ব্যবস্থাও নাকি করা হচ্ছে। শনিবার মুশফিক, ইমরুল ও মুমিনুল দেশে ফিরতে পারেন। ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট শেষে বাংলাদেশ দল ও দলের বাকি ক্রিকেটাররা ২৬ জানুয়ারির মধ্যেই দেশে ফিরবেন। দেশে ফিরে ১ ফেব্রুয়ারি হয়ত ভারতের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়বেন। ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে একটি তিনদিনের প্রস্তুতি ম্যাচ আছে। ৯ ফেব্রুয়ারি হায়দরাবাদে শুরু হবে ভারতের বিপক্ষে ভারতের মাটিতে বাংলাদেশের একমাত্র টেস্টটি। ভারতের বিপক্ষে টেস্টের আগে হাতে সময় আছে তিন সপ্তাহের বেশি। এ সময়ের মধ্যে এখন দলের তিন নির্ভরযোগ্য ক্রিকেটার নিজেদের ফিট করে তুলতে পারলেই হলো। তা না হলে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের মতো হায়দরাবাদ টেস্টেও এ তিনজনকে ছাড়াই খেলতে হবে বাংলাদেশকে।
×