ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাতের বগুড়ায় হুক্কাহুয়া

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ২০ জানুয়ারি ২০১৭

রাতের বগুড়ায় হুক্কাহুয়া

রাতের বগুড়ায় চলে শিয়ালদের রাজত্ব। এখানে শিয়াল, ওখানে শিয়াল। গলি পথে, রাজ পথে। সারারাত ধরে চলে ওদের তা-ব। দিন কয়েক আগে এই জনকণ্ঠেই প্রকাশিত হয়েছে বগুড়ায় শৃগাল-রাজত্বের কথা। ওরা ওখানে রাতের বেলায় যা করছে সেই বিবরণ পড়ে যে-কারোরই আক্কেল গুড়ুম হওয়ার কথা। শিয়াল বিশ্বব্যাপী পরিচিত প্রাণী। মানুষের রচিত গল্প কাহিনীতে যে কয়টি প্রাণী সেই অতীতকাল থেকে স্থান পেয়ে আসছে তার মধ্যে শিয়াল অন্যতম। এক শিয়াল এক দিন দ্যাখে সামনে আঙুর লতা উঁচতে ঝুলে আছে। সেখানে ঝুলছে থোকা থোকা আঙ্গুর। আঙুরগুলো রসে টস টস করছে। খুব লোভ হলো শিয়ালের। এটা খেতেই হবে। পিছনে দুপা ভর করে খাড়া হলো সে। নাগাল পেল না। কয়েকবার লাফ দিল। পারল না। পরে ক্লান্ত বিরক্ত হয়ে এই বলে সে স্থান ত্যাগ করল যে ‘দুর ছাই! এটা আবার কেউ খায় নাকি। আঙ্গুর ফল টক।’ সেই বিখ্যাত ঈশপের গল্প। বাংলা সাহিত্যে বহু ভাবে এসেছে শিয়াল, বিশেষ করে ছোটদের গল্পে শিয়ালকে বলা হয় চালাক ধূর্ত প্রাণী। তার পরিচয় দেয়া হয়েছে ‘প-িত’ বলে। এখানে বলা যায়, সেই বিখ্যাত-কুমিরের বাচ্চার গল্প। বোকা কুমির তার বাচ্চাদের ‘শিক্ষিত’ করার জন্য শিয়াল প-িতের কাছে দিয়ে এলো। শিয়াল ঐ ছানাদের প্রতি রাতে পড়াত: ‘কানা খানা গানা ঘানা, পড়ত ব্যাটা কুমির ছানা’। এ ভাবে পড়ায় আর এক এক রাতে এক একটি ছানাকে সাবাড় করে দেয়। এ রকম অগণিত গল্প গ্রাম বাংলায় প্রচলিত ছিল। বেশিরভাগ গল্প কাহিনীতে শিয়ালকে বুদ্ধিমান চালাক এবং ধূর্ত দেখানো হয়েছে। একদা গ্রামে গঞ্জে সব খানেই ছিল শিয়াল। জঙ্গলে ঝোপে ঝাড়ে আখ ক্ষেতে। সারা দিন আত্মগোপন করে রাতে বের হতো লোকালয়ে। হাঁস-মুরগির খোঁজে। কোন কোন সময় ছোট্ট মানব শিশুর ওপর আক্রমণ চালিয়েছে শিয়ালÑ এমন খবরও অতীতে শোনা গেছে। এখন গ্রামগঞ্জে বন জঙ্গল, ঝোপঝাড় প্রায় সাফ। বন্য প্রাণীরা যাবে কোথায়! ওদের আবাস লাগবে, খাদ্য লাগবে। সেকারণে এখন কি লোকালয়ে তাদের উৎপাত বেড়েছে? আগে গ্রামগঞ্জে শোনা যেত শিয়ালের ডাক। এই ঢাকা শহরে কয়েক দশক আগেও ‘হুক্কা হুয়া’ রব উঠত। শহর বাড়ছে গ্রাম বাড়ছে মানুষের প্রয়োজনে রাস্তাঘাট হচ্ছে সবটুকু জমি কাজে লাগছে। ওরা যাবে কোথায় কিছু গাছ থাকলে জলাশয় থাকলে পাখিদের অভয়ারণ্য করা যায়। কিন্তু শিয়ালদের অভয়ারণ্য সেটা কী সম্ভব! কত বন্যপ্রাণী এদেশে ছিল! আগে দেখা যেত খরগোশ, বেজি, শজারু, কাঠবিড়ালী ইত্যাদি। এসবই এখন বিতাড়িত কিংবা বিলুপ্ত। এ যুগের অনেক ছেলে মেয়ে বন্য প্রাণীদের চেনে বইয়ের মাধ্যমে। বগুড়ায় শিয়ালদের দেখে কুকুর চুপ মেরে থাকে। এতেই বোঝা যায় দলবদ্ধ ক্ষুধার্ত শিয়ালদের ঠেকানো তাদের সাধ্য নয়। শিয়ালদের বিরুদ্ধে কিছু করতে গেলে শিয়ালরা কুকুরদেরই ছিঁড়ে খেয়ে ফেলবে এই ভয়ে তারা হুক্কা হুয়ার কোন পাল্টা জবাব দেয় না। ঘেউ ঘেউ করে না ঘাপটি মেরে কোথাও লুকিয়ে থেকে নিজেদের জান বাঁচায়। ফলে শিয়ালদের দোর্দ- প্রতাপ সেখানে প্রতিরাতেই। প্রকৃতির ওপর মানুষের যথেচ্ছ কাজ কারবারে জীব বৈচিত্র্যের ক্ষতি হচ্ছে বগুড়ার শিয়ালদের হুক্কাহুয়া বা রাতের তা-ব তথা আর্তনাদ তারই প্রমাণ দিচ্ছে না?
×