ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এক, পাঁচ, দশ, পঁচিশ পয়সা ইত্যাদির কয়েন দিয়ে কী হবে?

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ২০ জানুয়ারি ২০১৭

এক, পাঁচ, দশ, পঁচিশ পয়সা ইত্যাদির কয়েন দিয়ে কী হবে?

এতদিন ধরে শুনে আসছি টাকার ছড়াছড়ি বাণিজ্যিক ব্যাংক-গুলোতে। টাকা নেয়ার লোক নেই। ১৮ জানুয়ারি একটি কাগজে প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংকেরও একই অবস্থা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকেও মুদ্রার ছড়াছড়ি, মুদ্রা রাখার জায়গা নেই। সমস্যা দৃশ্যত এক; কিন্তু বৈশিষ্ট্যে ভিন্ন। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ভুগছে অতিরিক্ত তারল্যে, মানে ‘একসেস লিক্যুইডিটিতে’। একেই বলছি টাকার ছড়াছড়ি। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মানুসারে একটি বাণিজ্যিক ব্যাংককে ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে সাড়ে ১৯ টাকা ‘লিক্যুইডিটি’ হিসেবে রাখতে হয় অর্থাৎ নগদ অথবা নগদসম আকারে রাখতে হয়। বাকি আশি টাকা পঞ্চাশ পয়সা তারা ঋণ হিসেবে গ্রাহকদের দিতে পারে। যদি দেখা যায় কোন ব্যাংক ৭০ টাকা দিতে পেরেছে তাহলে তার ‘একসেস লিক্যুইডিটি’ হবে ১০ টাকা ৫০ পয়সা। এটাই হিসাব। এই হিসাবে অনেক ব্যাংক বর্তমানে অতিরিক্ত তারল্যের সমস্যায় ভুগছে। ঋণগ্রহীতা নেই, অথবা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধি-নিষেধের কারণে টাকা থাকার পরেও ঋণ দিতে পারছে না। এটা একটা বড় সমস্যা অনেক বাণিজ্যিক ব্যাংকের। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমস্যা ভিন্নতর। তারা ভুগছে অতিরিক্ত মুদ্রা সমস্যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোন গ্রাহককে ঋণ দেয় না সরাসরি। তারা প্রয়োজনে ঋণ দিতে পারে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে শর্তসাপেক্ষে, অথবা দিতে পারে সরকারকে। অতএব অতিরিক্ত মুদ্রার কারণে কোন গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমস্যা হচ্ছে অন্যত্র। মুদ্রা রাখতে হয় ‘ভল্টে’। ছাপানো কাগুজে মুদ্রা বা টাকাও রাখতে হয় ভল্টে। একটি কাগজের একটি রিপোর্টে দেখলাম অব্যবহৃত মুদ্রার পরিমাণ এত বেশি হয়েছে যে, এসব রাখার জায়গা হচ্ছে না। অতএব করণীয়? করণীয় হচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে মুদ্রা গ্রহণে বাধ্য করা। একজন প্রাক্তন গবর্নর বলেছেন, মুদ্রা গ্রহণে মানুষকে বাধ্য করা মানে লেনদেনে মুদ্রা ব্যবহারে উৎসাহিত করা। এ প্রসঙ্গেই উল্লেখ করতে হয় ‘কয়েন’ বা মুদ্রা আমাদের দেশে অনেকগুলো যথা : এক পয়সা, পাঁচ পয়সা, ১০ পয়সা, ২৫ পয়সা, ৫০ পয়সা, এক টাকা, দুই টাকা ও পাঁচ টাকা। এর মধ্যে অনেক মানের মুদ্রা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে জমা হয়ে পড়ে আছে, অথচ এসব ‘ভল্টে’ থাকার কথা নয়। থাকার কথা বাজারে, ব্যবহার হওয়ার কথা লেনদেনে। মানুষের পকেটে পকেটে থাকার কথা এসব মুদ্রা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এসব এখন বাজারে নেই, জমা পড়ে আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘ভল্টে’, যা ভীষণ সমস্যার সৃষ্টি করছে। সমস্যার সমাধান হয়ে যেত যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব সাধারণ মানুষকে ডেকে ডেকে দিয়ে দিত। না, তা সম্ভব নয়। খুবই সামান্য মূল্যের মুদ্রা হলেও তা বাজারে দিতে হলে নিয়ম মেনে ‘ইস্যু’ করতে হবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে। তারা তখন এগুলো বাজারে দেবে তাদের গ্রাহকদের মারফত। এখন মনে হচ্ছে এ চিন্তাই হচ্ছে। ব্যাংকগুলোকে মুদ্রা ধরিয়ে দেয়া হবে। আবার প্রস্তাব ‘মোবাইল কোর্টের’। তারা জানান দেবে ‘কয়েন’ গ্রহণ বাধ্যতামূলক। লেনদেনে ‘কয়েন’ গ্রহণ না করা বেআইনী। কারণ ‘কয়েন’ (মুদ্রা) ‘লিগ্যাল’ টেন্ডার। সম্ভব ‘লিমিটেড লিগ্যাল টেন্ডার’ বলে একটা ব্যবস্থাও আছে। শত হোক এক লাখ টাকার একটা লেনদেনে ছালাভর্তি এক পয়সার মুদ্রা দিলে তো তা হবে দারুণ ‘উৎপাত’। ওপরের সমস্যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। সমস্যাটি অতিরিক্ত মুদ্রার। মুদ্রার ছড়াছড়ি অবস্থা। আসলে কী তাই? দৃশ্যত সমস্যাটি অতিরিক্ত ‘কয়েনের’। কিন্তু প্রকৃত অর্থে আমার মনে হয় সমস্যাটির মূল নিহিত অন্যত্র। পরিষ্কারই বোঝা যাচ্ছে এসব মুদ্রার চাহিদা নেই। যদি থাকত তাহলে মানুষ এসব ‘কয়েনের’ জন্য হইচই করত। ‘মিডিয়া’ হইচই করত। ব্যাংকগুলো এদের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তদবির করত। কারণ মানুষ ‘কয়েনের’ জন্য ব্যাংকগুলোকে বিরক্ত করত। বাজারে বিক্রেতারা ‘কয়েনের’ জন্য পাগল থাকত। বোঝাই যাচ্ছে বাজারে কয়েনের চাহিদা নেই। এর ফলে বাজার থেকে অনেক মুদ্রা উধাও হয়ে গেছে, গিয়ে জমা হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। অথবা অনেক মুদ্রা (কয়েন) হয়ত বাড়িঘরে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। হয়ত শিশুরা এগুলো নিয়ে লেখছে। হয়ত অকারণে বাচ্চাদের ‘গৃহ ব্যাংকে’ জমা হয়ে পড়ে আছে। যদি এসবের প্রয়োজন থাকত, চাহিদা থাকত তাহলে নিশ্চিতভাবেই তা বাজারে প্রচলিত থাকত, মুদ্রা থাকত হাতে হাতে। অবশ্য সব মুদ্রা বাজার থেকে এখনও উধাও হয়নি। উধাও হবে কী, আজকালের শিশুরা হয়ত জানেই না যে, আমাদের দেশে ‘এক পয়সার’ একটি মুদ্রা/কয়েন আছে। এক সময় দেশে ছিল তামার পয়সা, মাঝখানে তার ছিল একটা বড় ফুটো। সেসব এখন আর ‘লিগ্যাল টেন্ডার’ নয়। অতএব বাজারে থাকার কথা নয়। কিন্তু এক পয়সা, ৫ পয়সা, ১০ পয়সা, ২৫ পয়সা এবং ৫০ পয়সা এখনও ‘লিগ্যাল টেন্ডার’। কিন্তু কারও হাতে তা আছে কী? দোকানিদের হাতে আছে কী? থাকলে কয়জনের হাতে আছে? এক টাকার মুদ্রা, দুই টাকার মুদ্রা ও পাঁচ টাকার কয়েন (মুদ্রা) কিছু এখনও দেখা যায়। এসব এখনও বাজারে চলে, লেনদেনে কাজে লাগে। তবে বহুলভাবে কাজে লাগে না। তবে এক পয়সা, ৫ পয়সা ইত্যাদির মুদ্রা এখন চোখে পড়ে না। বলা হচ্ছে এসব এখন জমা হয়ে পড়ে আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে, কিছু হয়ত জমা হয়ে পড়ে আছে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ‘ভল্টেও’। ওপরে যে সমস্যার আলোচনা করেছি তার মূলে রয়েছে চাহিদা। চাহিদা নেই ছোট ছোট ‘কয়েনের’। কেন? কারণ এসব মুদ্রার ‘ক্রয় ক্ষমতা’ নেই। অর্থাৎ ‘পার্চেজিং পাওয়ার’ নেই। ধরা যাক পান, বিড়ি ও সিগারেটের কথা। এসবেই ছোট ছোট লেনদেন হয়। চা-বিস্কুট খেতে লেনদেন হয় ছোট ছোট লেনদেন। শাক-সবজির বাজারে হয় ছোট ছোট লেনদেন। বাচ্চাদের মুড়ি-মুড়কি, মোয়া, চকোলেট ও লজেন্সে হয় ছোট ছোট লেনদেন। ছোট ছোট লেনদেন হয় রিক্সা ভাড়ায়। দৈনন্দিন এরকম বিচিত্র ধরনের কাজে ছোট ছোট লেনদেন হয়। লেনদেন ছোট পরিমাণের। কিন্তু এসব লেনদেনের সংখ্যা লাখ লাখ, কোটি কোটি। তাও প্রতিদিন। কী মনে হয়? এসবে কী এক পয়সা, ৫ পয়সা, ১০ পয়সা, ২৫ পয়সা, এমনকি পঞ্চাশ পয়সা অথবা এক টাকার মুদ্রা কোন কাজে আসে এখন। রিক্সায় উঠলেই এখন ১০ টাকা নয়, রিক্সাওয়ালা কুড়ি টাকা চায়। তার কাছে ১৫ টাকা কোন ভাড়া নেই। এখন দশ টাকা ভাড়া কী মানুষ দশটা এক টাকার মুদ্রা দিয়ে মেটাবে, না একটা দশ টাকা নোট দিয়ে মেটাবে? বলাই বাহুল্য, এই দশ টাকার লেনদেন ‘পয়সা’র মুদ্রা দিয়ে মেটানো এখন সম্ভব নয়। তাহলে রিক্সাওয়ালাকে ছালার মধ্যে টাকা রাখতে হবে, আর সাধারণ মানুষকেও ছালা নিয়ে ঘুরতে হবে। এসব কী সম্ভব? একটা পান কিনতে যদি সর্বনিম্ন এক টাকাও লাগে ধরে নিই তাহলে দশ পয়সার দশটা কয়েন দিয়ে সেই লেনদেন সম্পন্ন করতে হবে। অথচ এক সময় এসব সম্ভব ছিল। পাঁচ পয়সায়, দশ পয়সায় পান খাওয়া যেত। এক আনা, (চার পয়সা) দুই আনায় চা খাওয়া যেত। চার পয়সায় এক হালি সবরিকলা পাওয়া যেত। সেটা বেশিদিন আগের কথা নয়। আমরা ছোটবেলায় ১০০ টাকার (রুপি) নোট দেখিনি খুব বেশি। দশ টাকার নোটই তো দেখতাম। এক টাকা, আট আনাতেই (৫০ পয়সা) প্রায় সবকিছু সারা যেত। আর এখন গ্রামের ছেলেমেয়েরাও ৫০০ টাকা, ১০০০ টাকার নোট দিয়ে খেলা করে। বড়রা ছোটদের ‘বকশিশ’ দেয় ৫০০ টাকা, ১০০০ টাকা। দেশের অনেক জায়গায় বাচ্চারা ডলার নোটও চেনে। চার আনা আট আনার মাছ এখন এক শ’, দুই শ’ টাকা। আজকালকার ছেলেমেয়েদের কাছে এসব বললে তারা বিশ্বাস করে না। চোখ তুলে তাকিয়ে থাকে। যেমন আমরা করতাম আমাদের ছোটবেলায়। তখন পাঠ্যবইয়ে পড়ানো হতো শের শাহ-এর আমলের কথা। তার আমলে টাকায় আট মণ চাল পাওয়া যেত। ভাবা যায়! টাকায় আট মণ চাল। বর্তমান বাজারে ঢাকায় ৮ মণ মোটাচালের দামই হবে কমপক্ষে ১১-১২ হাজার টাকা। চার-পাঁচ শ’ বছরে চালের দামের এই অবস্থা। চার পাঁচ শ’ বছরের দরকার সেই, বিগত ৪০-৪৫ বছরেই পরিবর্তন হয়েছে তা অনেক ক্ষেত্রে অবিশ্বাস্য। যে দুধ ঢাকায় আমরা এখন ৮০ টাকা লিটারে কিনি তা ৪০-৪৫ বছর আগে বিক্রি হতো গ্রামে এক টাকায় চার সের (কেজি থেকে সামান্য কম)। এসব দামের বর্ণনাতে গিয়ে লাভ নেই, কারণ মূল্য পরিবর্তনটা বিশাল। এই মূল্য পরিবর্তন মানে মূল্যবৃদ্ধি। প্রকৃত প্রস্তাবে মূল্যবৃদ্ধি নয়, এটা হচ্ছে টাকার মূল্যে অবমূল্যায়ন। অর্থাৎ টাকার ক্রয় ক্ষমতার হ্রাস। এক টাকায় যে পরিমাণ পণ্য/দ্রব্য পাওয়া যেত এখন তার ছটাকও পাওয়া যায় না। মূল্যস্ফীতির (ইনফ্লেশন) ফলে টাকার ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে এবং তা ক্রমাগতভাবে হ্রাস পাচ্ছে। এটা উন্নয়নের সহযোগী। দিন বদল হচ্ছে, উন্নয়নের ছোঁয়া লাগছে, রাস্তাঘাট হচ্ছে, অবকাঠামো হচ্ছে, সুযোগ-সুবিধা বাড়ছে, ‘জিডিপি’র প্রবৃদ্ধির হার বাড়ছে, সঙ্গে সঙ্গে মূল্যস্ফীতিও হচ্ছে অর্থাৎ জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, তাই কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতাও বাড়াতে হচ্ছে। নইলে তাদের সংসার চলে না। মজা হচ্ছে এই বেতন-ভাতা বৃদ্ধির ফলে আবার মূলস্ফীতির ওপর চাপ বাড়ছে। এই প্রক্রিয়ায় টাকার ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। আমরা যতই বলছি দ্রব্যমূল্যে হ্রাস করা দরকার, দ্রব্যমূল্য ততই বাড়ছে। এটাই বাস্তবতা। এর বাইরে যাওয়া খুবই কঠিন। দ্রব্যমূল্য বাড়ছে, মূল্যস্ফীতি ঘটছে, অতএব টাকার ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে, অতএব ছোট ছোট কয়েনের বাজারযোগ্যতা হ্রাস পাচ্ছে। অর্থাৎ তার ব্যবহার কমছে, ব্যবহারযোগ্যতা বিলীন হচ্ছে। বাস্তবতা হচ্ছে টাকার মূল্যমান বা ক্রয় ক্ষমতা ঠিক না রাখতে পারলে ছোট ছোট মুদ্রা চালু রাখা খুবই কঠিন। করতে হলে ‘মানিব্যাগ’ ছেড়ে দিয়ে ‘ছালা’ নিয়ে চলাফেরা করতে হবে। করতে হবে সবাইকেই। কারণ, দৈনন্দিন লেনদেন ‘পয়সা’র হিসাবে মেটানো আর সম্ভব নয়। ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া মানে মূল্যস্ফীতির ফল। ক্রমাগতভাবে মূল্যস্ফীতি ঘটার ফলে টাকার ক্রয় ক্ষমতা বিগত ৪৫-৪৬ বছরে বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। এক পয়সা, পাঁচ পয়সার কয়েন কেন পাঁচ টাকা দিয়েও এখন ছোট ছোট লেনদেন করা সম্ভব নয়। এমন অবস্থা হয়েছে যে, পাঁচ টাকার ব্যবহারও উঠে যায় যায়। এই প্রবণতা রোধ করতে হলে মূলস্ফীতি হ্রাস করতে হবে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ইদানীং মূলস্ফীতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আছে। তাও মূল্যস্ফীতি এখন ৫ শতাংশের মতো। এই হার অব্যাহত থাকলে পাঁচ টাকার নোটও ব্যবহারের বাইরে চলে যাবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন কাজ। এটা নানাভাবে ঘটে। আমাদের দেশে আমদানি বাণিজ্য মূল্যস্ফীতির অন্যতম কারণ। আমরা আমদানিনির্ভর দেশ। প্রায় সব জিনিসই আমরা আমদানি করি। অতএব বিদেশের বাজারে জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি ঘটলে এর প্রভাবে আমাদের বাজারে মূল্যবৃদ্ধি ঘটবেই। একে তো মূল্যবৃদ্ধি তার উপর সরকারের ট্যাক্স। ট্যাক্স না হলে সরকারে চলবে না। আমদানিকৃত দ্রব্যের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তেলের মূল্য। এর মূল্যবৃদ্ধি পেলে সব জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি পাবেই। দেশের ভেতরেও অনেক কারণ আছে। ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফারপ্রবণতা একটা কারণ। ব্যাংকের অতিরিক্ত ঋণদান আরেকটি কারণ। এমন সব কারণে মূল্যস্ফীতি ঘটেই চলেছে। ফলে ছোট ছোট মুদ্রা তাদের কার্যকারিতা হারাচ্ছে। এমতাবস্থায় মূল্যস্ফীতি রোধ না করতে পারলে লাঠিপেটা করেও ছোট ছোট মুদ্রা বাজারে চালু রাখা যাবে না। আর ছোট ছোট মুদ্রার ব্যবহার হ্রাস বা অবলুপ্তি মানেই সাধারণ মানুষের বারোটা। তাদের কপাল মন্দ। তাদের কষ্ট। অতএব সরকারের উচিত টাকার ক্রয় ক্ষমতা ঠিক রাখা। সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আয় বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা, যাতে তারা মূল্যস্ফীতির ধকল সামলাতে পারে। লেখক : সাবেক শিক্ষক, ঢাবি
×