ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব অর্থনীতি ও বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ২০ জানুয়ারি ২০১৭

বিশ্ব অর্থনীতি ও বাংলাদেশ

বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রধান তিনটি সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে, যা আগামী এক দশক বৈশ্বিক উন্নয়নে প্রভাব ফেলবে। অর্থনৈতিক অসাম্য, সামাজিক মেরুকরণ ও ঘনীভূত পরিবেশ ঝুঁকির সমস্যা তীব্র। তিনটি বৈশ্বিক ঝুঁকি উপস্থাপন হলেও এই তিনটিই হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার দৌড়ে বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই। ক্রমবর্ধমান আয় বৈষম্য ও সামাজিক মেরুকরণ সাধারণ মানুষের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া না গেলে চলতি বছর এ ঝুঁকি মারাত্মক আকার ধারণ করতে বাধ্য। সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে চলমান বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে এসব বিষয় আলোচিত হচ্ছে। এ জন্য প্রকাশিত ফোরামের দ্বাদশতম বৈশ্বিক ঝুঁকি প্রতিবেদনে এসব বিষয় উঠে এসেছে। তাদের পর্যবেক্ষণে অনেক কিছুই উঠে এসেছে। বিশ্বে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে আয় বৈষম্য ক্রমেই বাড়ছে। এ বৈষম্যের ব্যাপকতা মেলে সম্মেলন উপলক্ষে অক্সফামের প্রকাশিত সমীক্ষায়। যেখানে বলা হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী আট ব্যক্তির হাতে যত সম্পদ আছে, তার পরিমাণ পৃথিবীর অর্ধেক মানুষের সম্পদের সমান। যা উদ্বেগের কারণ বৈকি কি! বিশ্ব মন্দার প্রভাব কম-বেশি সারা বিশ্বেই পড়েছিল। মন্দার এক পর্যায়ে বাংলাদেশেও খাদ্য পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গিয়েছিল। সুতরাং চলতি বছর বৈশ্বিক ও অর্থনীতি কীভাবে অতিবাহিত হবে। তার ওপর বাংলাদেশের অর্থনীতিরও ভাল-মন্দ অনেকাংশে নির্ভর করছে। এক্ষেত্রে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবণতাগুলোর দিকে রাখতে হবে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে পূর্বাভাস বুঝে। অন্যথায় সমূহ বিপদ দাঁড়াবে সামনে এসে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সমন্বিত প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন সূচক অনুযায়ী বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় আরও এক ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন সূচকে এক বছরে আট ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বের উন্নয়নশীল ৭৯টি দেশের মধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে বাংলাদেশের অবস্থান বর্তমানে ছত্রিশতম। এক বছর আগে একই সূচকে এই অবস্থান ছিল ৪৪। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ভারত ও পাকিস্তানের ওপরে। গত পাঁচ বছরে এ দেশের মাথাপিছু জিডিপি বেড়েছে। কমেছে সরকারী ঋণ। কিন্তু সম্পদ বেড়েছে যথেষ্ট পরিমাণে। বাংলাদেশের শক্তির অন্যতম স্থানটি হচ্ছে অর্থায়নের জন্য ব্যাংক এবং শেয়ার বাজারে সহজ প্রবেশগম্যতা। এতে আত্মসন্তুষ্টির সুযোগ কম। দেশে আয় বৈষম্য প্রকট হওয়ার কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উচ্চ হার সত্ত্বেও এর তেমন সুফল পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। দেশে কর্মসংস্থান বাড়লে সাধারণের আয় বাড়তে বাধ্য। এক্ষেত্রে অগ্রগতি আশাপ্রদ নয়। লাল ফিতার দৌরাত্ম্য ও অনিয়ন্ত্রিত দুর্নীতির কারণে ব্যবসায় উন্নয়ন পিছিয়ে পড়ছে। একই সঙ্গে দুর্বল অবকাঠামোগত সমস্যাও রয়েছে। বাংলাদেশের জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন এবং মৌলিক সেবা খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার পরামর্শ রয়েছে প্রতিবেদনে। শ্রমিকদের কর্মদক্ষতার হিসেবে উন্নয়নশীল দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। আমাদের যে বাংলাদেশের আত্মসরণ করা অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পদ্ধতি একই আয়ের অন্য দেশের তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে দিন দিন গুরুত্ব বাড়ছে বাংলাদেশের। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মাঝেও অর্জিত অর্থনৈতিক, সামাজিক অগ্রগতি প্রশংসনীয়। দক্ষ সামাজিক ব্যবস্থাপনার ফলে রাজস্ব আহরণে উর্ধগতি এবং ঋণ গ্রহণে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতিও উল্লেখযোগ্য হারে কমছে। দেশের জনগণের সামর্থ্য ও মনোবল রয়েছে। প্রয়োজন তাদের জন্য দিগন্ত উন্মোচন করার। মনে রাখা সঙ্গত ২০১৬ সালটি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য নিষ্প্রভ হলেও নয় বছর বিশ্ব অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়ার পূর্বাভাস মিলেছে। অর্থনীতির খাত বাড়বে। সুতরাং বিদ্যমান সমস্যা ও স্থবিরতাগুলো কাটানোর বিকল্প নেই। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে হলে অগ্রগতির পথে যেতেই হবে।
×