ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘হারামখোর’ একজন সংগ্রামী অভিনয়শিল্পী

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ১৯ জানুয়ারি ২০১৭

‘হারামখোর’ একজন সংগ্রামী অভিনয়শিল্পী

সাম্প্রতিক বলিউডের একটি ছবিকে ঘিরে আলোচনা, সমালোচনা-বিতর্ক বেশ জমে উঠেছে। ছবির নাম ‘হারামখোর’। নামটি শোনামাত্র ধাক্কা খেতে হয়। নাহ, বলিউডের প্রচলিত ধারার বাণিজ্যিক সিনেমা নয় এটি। এ ছবিতে হিন্দী সিনেমা নামী-দামী জনপ্রিয় কোন সুপারস্টার নেই। বলিউডের মেধাবী তুখোড়, অভিনেতা নাওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী হারামখোর ছবিতে মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ইতোমধ্যেই ছবিটি বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়ে সেখানকার বোদ্ধা দর্শক, সমালোচকের প্রশংসা অর্জনের পাশাপাশি অনেক পুরস্কারও অর্জন করেছে। নিউইয়র্ক ইন্ডিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ১৫তম উৎসবে প্রথম হারামখোর ছবিটি প্রদর্শিত হয়। এখানে ছবির প্রধান অভিনেতা নাওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী সেরা অভিনেতার পুরস্কার লাভ করেন। এ ছাড়াও লসএ্যাঞ্জেলসে ইন্ডিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘হারামখোর’ ছবিটি প্রচ- সাড়া জাগিয়েছে। গুজরাটের এক প্রত্যন্ত এলাকার স্কুল শিক্ষক শ্যাম এবং তার ছাত্রী সন্ধ্যার প্রেম কাহিনী নিয়ে আবর্তিত এ ছবিতে সেখানকার সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট উঠে এসেছে। নতুন নির্মাতা শ্লোক শর্মা পরিচালিত এ ছবিতে জোরালো কিছু বক্তব্য রয়েছে। ভারতের মহারাষ্ট্র টেক্সটবুক ব্যুরোর পক্ষে আলোচ্য ছবির বিরুদ্ধে তাদের বইয়ে ব্যবহৃত লোগো অবৈধভাবে ব্যবহারে অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ নিয়ে বেশ ক’দিন তেমন হৈচৈ হলেও শেষ পর্যন্ত ছবিটি রুপালি পর্দায় আসছে এ সপ্তাহে। গ্রামের এক স্কুলছাত্রীর সঙ্গে শিক্ষকের প্রেমের বিষয়টি হারামখোর ছবিতে উঠে আসায় দর্শকদের মধ্যে দারুণ কৌতূহল জেগেছে। সবাই অধীরভাবে অপেক্ষা করছেন ‘হারামখোর’-এর জন্য। এ ছবিতে গ্রামের স্কুলশিক্ষক শ্যামের ভূমিকায় নাওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। তার সঙ্গে স্কুলছাত্রী সন্ধ্যা চরিত্রে রূপদান করেছেন শ্বেতা ত্রিপাঠি। স্কুলছাত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করলেও শ্বেতার বয়স এখন ৩১ চলছে। দিল্লীর মেয়ে শ্বেতা ত্রিপাঠিকে দর্শক আরও আগে থেকেই চেনে ডিজনি চ্যানেলের বহুল আলোচিত সিরিয়াল ‘ক্যায়া মাস্ত হ্যায় লাইফ’-এর প্রধান অভিনেত্রী হিসেবে। এ ছাড়াও টাটা স্কাই, ম্যাকডোনাল্ড, টাটা চা এর এ্যাডে মডেল হিসেবে সবার নজর কেড়েছেন তিনি। ২০১৫ সালে দেশ বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করা ভারতীয় সিনেমা ‘মাসান’ এ একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে তাকে দেখা গেছে। এক সময় বিখ্যাত ম্যাগাজিন ‘ফেমিনা’র ফটো এডিটর হিসেবে কাজ করেছেন শ্বেতা ত্রিপাঠি। ‘হারামখোর’ ছবির মাধ্যমে তার অভিনয় জীবনে নতুন মোড় সৃষ্টি হবে ধারণা করা যায়। যারা ইতোমধ্যে ছবিটি দেখেছেন তাদের অভিমত হলো, ভিন্ন ধারার সিনেমার পাশাপাশি বলিউডের মূল ধারার বাণিজ্যিক সিনেমায়ও শ্বেতা চাইলে নিজের জন্য জায়গা করে নিতে পারেন। ‘হারামখোর’ ছবির প্রধান অভিনেতা নাওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী ২০১২ সালে সেরা পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। দিল্লীর ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা থেকে গ্র্যাজুয়েশন করে অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত হওয়া নাওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী বলিউডে পা রাখার আগে অনেক সংগ্রাম করেছেন। অভিনয়ে গ্র্যাজুয়েশন করার পরও কোন কাজ পাননি। না খেয়ে কাটাতে হয়েছে অনেক বেলা। মুম্বাইয়ে থাকার জন্য বাড়ি ভাড়া দেয়ার মতো সামর্থ্য ছিল না। একজন সিনিয়র বন্ধু রান্না করে দেয়ার বিনিময়ে তাকে নিজের এ্যাপার্টমেন্টে থাকার সুযোগ দিয়েছিলেন। ১৯৯৯ সালে আমির খান অভিনীত ‘সারফা রোশ’ ছবিতে ছোট একটি রোলে অভিনয়ের মাধ্যমে নাওয়াজউদ্দিনের অভিষেক হয়েছিল বলিউডে। এরপর সামান্য একটু অভিনয়ের সুযোগ লাভের আশায় স্টুডিও এবং শূটিং স্পটে ঢুঁ মারতেন, কিন্তু তেমন ভাল সুযোগ তার কপালে জোটেনি। অনুরাগ কাশ্যপের ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ ছবিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে শক্তিশালী অভিনয়ের মাধ্যমে প্রথম সবার নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছিলেন নাওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী। এরপর ‘দেব ডি’, ‘নিউইয়র্ক’, ‘পিপলি লাইভ’, ‘কাহানি’, ‘গ্যাংস অব ওয়াসেপুর’, ‘মিস লাভলি’, ‘তালাশ’, ‘কিক’, ‘বজরঙ্গীভাইজান’, ‘মাঝি দ্য মাউন্টেনম্যান,’ ‘বাদলাপুর’ প্রভৃতি ছবিতে একে একে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে খ্যাতি ও জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে এসেছেন এই মেধাবী, শক্তিমান অভিনেতা। একই সঙ্গে মূল ধারার বাণিজ্যিক সিনেমা এবং অফ ট্যাকের প্যারালাল সিনেমায় তিনি নিজেকে চাহিদাসম্পন্ন করে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। ‘হারামখোর’ ছবিটি বলিউডের প্রচলিত ধারার বাইরে ভিন্ন স্বাদের একটি সিনেমা হিসেবে ইতোমধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। যার মূল আকর্ষণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন নাওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী। মাত্র ১৬ দিনে শেষ হয়েছিল ‘হারামখোর’ ছবির শূটিং। অল্প দিনে ছবির শূটিং হলেও ছবির পরিচালক শ্লোক শর্মাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে এ ছবির একটি গান লেখার জন্য। এ জন্য দেড় হাজার স্কুলছাত্রীর সাক্ষাতকার নিয়েছেন তিনি। ‘হারামখোর’ ছবির একটি গান ‘কিদরে জাওয়া’য় কিশোরীদের প্রথম প্রেমের অনুভূতি ও শৈশব থেকে কৈশোরে উত্তীর্ণ হওয়ার সময় যে আবেগের জন্ম হয় তা ফুটে উঠেছে। দেখা যাক, ‘হারামখোর’ ছবিটি দর্শক মনে কতটা সাড়া জাগায়।
×