ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সব্যসাচী দাশ

নান্দনিক ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ১৯ জানুয়ারি ২০১৭

নান্দনিক ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব

দীর্ঘদেহী সঙ্গে সুন্দর মুখশ্রীর নায়ক কিবাং নায়িকার রসালো রসায়ন। নায়ক চরিত্রটির অতিমানবীয় মারপিট! নায়িকার আবেগী আচরণ কিংবা একটু মনো মালিন্য। আমাদের দেশে চলচ্চিত্র বা সিনেমা সম্পর্কে বেশিরভাগ সাধারণের এমন ধারণা এখন আর নেই। সময়ে সময়ে সারা পৃথিবীতে এর সংজ্ঞা বদলেছে। দেশ, সমাজ বা জীবনের গল্পই এখন চলচ্চিত্র। বলা হয় শিল্পের সব থেকে জটিল মাধ্যম চলচ্চিত্র। মৌলিক শিল্পকলা ছাড়া এ শিল্প অসম্ভব। স্বাধীনতার বেশ আগে থেকেই আমাদের এই শিল্পের যাত্রা। ১৯৫৫ সালের জুন মাসে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) প্রতিষ্ঠিত হয় সরকারী ফিল্ম স্টুডিও। ঢাকার তেজগাঁয়ে। পরের বছর ১৯৫৬। আবদুল জব্বার খান। নিজের ভু-খ-ের জন্য বাংলা ভাষায় নির্মাণ করেন সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’। এই চলচ্চিত্রই হচ্ছে ঢাকাই চলচ্চিত্রের প্রথম সন্তান। অবশ্য অবিভক্ত বাংলায় প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে হীরালাল সেনের নাম স্বীকৃত। আমাদের এই শিল্পের বয়স এখন, গুনে গুনে বাষট্টি বছর। জাতি হিসেবে নিজেদের সাহিত্য, সংস্কৃতি, ও স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, অমানবিক বৈষম্য ও অত্যাচার ভোগ করতে হয়েছে, বেশ লম্বা সময়। অতপর রক্তদিয়ে লিখতে হয়েছে নিজেদের নাম । বাংলাদেশ। জন্মের পর দারিদ্র্য, ক্ষুধা, সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল আমাদের সব থেকে বড় প্রতিপক্ষ। তবে জাতি হিসেবে আমরা চিন্তা-চেতনায় কখন অসংস্কৃতিক ছিলাম না। তার বড় প্রমাণ। সকল ক্রান্তিকালে আমারা নির্মাণ করেছি আমাদেরই প্রতিচ্ছবি। একাডেমিক এ্যাওয়ার্ড, কান কিংবা সিয়াটলের মতো আন্তর্জাতিক উৎসবে বাংলা চলচ্চিত্র নিয়মিত অংশগ্রহণ করছে। সুনামের সঙ্গে। চলচ্চিত্র নির্মাণে আমাদের চিন্তা ও চেষ্টা সব সময় বিশ্বমানের। এ সবের ধারাবাহিকতায় গত চৌদ্দ বছর ধরে আমরা আয়োজন করে আসছি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। ২০১৭ সাল। পঞ্চদশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। আয়োজক রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ। জীবিকার তাগিদে বিদেশে পারি দেয়া এক শ্রমিক ও তার পরিবারের করুন কাহিনী নিয়ে নির্মিত জীবন গল্প ‘অজ্ঞাতনামা’। একাধিক চরিত্রের ছদ্মবেশ এবং মানবিক মূল্যবোধের চলচ্চিত্র ‘আয়নাবজি’। এবং পিতৃহীন বালকের মায়ের প্রতি অগাধ ভালবাসার গল্প ‘মাটির প্রজার দেশে’। এই তিন ভাল গল্পের চলচ্চিত্র নিয়ে এবারের উৎসবে আমাদের অংশগ্রহণ। এছাড়া ভিন দেশের বরেণ্য চলচ্চিত্রকারের সমৃদ্ধ গল্পের সিনেমাতো আছেই। সদ্য প্রায়ত বিখ্যাত ইরানের চিত্র পরিচালক আব্বাস কিয়ারোস্তামির ক্লোজ আপ, টেস্ট আব চেরি, দ্য উইন্ড উইল ক্যারি আস, সার্টিফাইড কপি, লাইক অন দেয়ার সোলজার ও লাইক সামওন ইন লাভ এর মতো উচ মানের চলচ্চিত্র এবারের উৎসবের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। তুরস্কের নির্মাতা ইয়েসিম উস্তাওগুলের ওয়েটিং ফর দ্য ক্লাউন, আরাফ, জার্নি টু দ্য সান, প্যান ডোরা বক্সের মতো একাধিক অসাধারণ চলচ্চিত্র। ভারত, নেপাল, রাশিয়া, ইল্যান্ড, ব্রেজিল, আজেন্টিনাসহ ৬৭টি দেশের ১৮৮টি চলচ্চিত্র উপভোগের সুযোগ রয়েছে এবারের উৎসবে। নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল র্দশক, আলোকিত সমাজ। এই সেøাগানে গত ১২ জানুয়ারি ২০১৭ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হমিদ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন করেন। উৎসবের অভিষেক ঘটে, ৮৯তম একাডেমি এ্যাওয়ার্ডে বিদেশী ভাষায় মনোনয়ন পাওয়া চলচ্চিত্র ‘থ্রি থাওজেন্ট নাইটস’ দিয়ে। পরিচালক লেবানিস নির্মাতা মাই মাসরি। উৎসবের জুরি বোর্ডে রয়েছে ইরানের আমির এস্ফানদিয়ারি, তাজিকিস্তানের শরোফাত আরাবোভা ও বংলাদেশের দিলরুবা হোসেন দোয়েল প্রমুখ। উৎসব চলবে আগামী ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রায় আঠারো কোটি জনসংখ্যার দেশ আমাদের বাংলাদেশ। অনেক প্রতিকূলতা পিছুহটে সবসময়। এ সত্ত্বেও সৃজনশীল জাতি হিসেবে আমরা কখনও পিছিয়ে থাকিনি। সবকিছুর উর্ধে রাষ্ট্রের আশীর্বাদ ছায়া সঙ্গী হয়ে থাকে সবসময়। আমাদের মেধা ও মনন এই উৎকর্ষে পরিপূর্ণ হোক, পাশাপাশি আরও এগিয়ে যাক আমাদের চলচ্চিত্র বিশ্ব দরবারে।
×