ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মোহাম্মদ কামরুল হাসান

নতুন প্রজন্মের ফিডব্যাক

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ১৯ জানুয়ারি ২০১৭

নতুন প্রজন্মের ফিডব্যাক

ফিডব্যাক বাংলাদেশের জনপ্রিয় ও বিখ্যাত ব্যান্ড। ‘বাংলারক’ গ্রুপের অন্যতম পথিকৃৎ কিংবা বলা যায় ব্যান্ড সঙ্গীতের জীবন্ত ইতিহাস। বাংলারক সঙ্গীতে এই গ্রুপটির মতো সাফল্য ও ব্যতিক্রম অর্জন দু’ বাংলায় বিরল। তাদের গাওয়া গান ‘মেলা যাইরে’ ততদিন বেঁচে থাকবে যতদিন বাংলাদেশ ও বাংলাভাষা টিকে থাকবে। অত্যুক্তি মনে হতে পারে! কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। একবার ভেবে দেখুন, পহেলা বৈশাখ কিংবা যে কোন মেলা-উৎসব-পর্বণে ‘মেলা যাইরে’ গানের মতো আধুনিক ও যথোপযুক্ত গান খুঁজে পাওয়া বিরল। কেবল একট গানের জন্যই ব্যান্ডটিকে ইতিহাসের স্থান দেয়ার পক্ষে সাফাই গাইছি না। বরং গ্রুপটির পক্ষে কিংবা তাদের ব্যতিক্রম হিসেবে উপস্থাপনের যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলেই ফিডব্যাকের ঝান্ডা তুলে ধরছি। ক্লাসিক্যাল সঙ্গীত নিয়ে যেসব পাঠকের আগ্রহ ও জানাশোনা রয়েছে তারা বোধকরি ‘এইচ এম ভি’ নামটি শুনে থাকবেন। ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে পুরনো ও পথপ্রদর্শক একটি রেকর্ডিং কোম্পানি। ক্লাসিক্যাল মিউজিকের এ্যালবাম রিলিজ করা এই রক্ষণশীল রেকর্ডিং কোম্পানি পাশ্চাত্য ধারার সঙ্গীতে অনুপ্রাণিত গানের রেকর্ড বের করবে তা কখনও কি ভাবা যায়! তাও আবার কোন ভারতীয় ব্যান্ড নয়, বরং বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটি ব্যান্ড যার নাম ফিডব্যাক। এতসব অর্জনে সীমাবদ্ধ থাকলেও চলত কিন্তু ‘বাংলারকের’ ইতিহাসে তাদের রয়েছে আরও একটি অর্জন। তা হলো ফিউশন। ফিডব্যাক বাংলাদেশের প্রথম কোন রক ব্যান্ড যারা বাউল সঙ্গীতের সঙ্গে পাশ্চাত্য সঙ্গীতের ফিউশন ঘটিয়ে বাংলারকে নতুন মাত্রা যোগ করেছিলেন। জনপ্রিয়তার বিবেচনায়ও পিছিয়ে ছিল না ব্যান্ডটি। মাকসুদ থাকার সময়ে সবচেয়ে দর্শকনন্দিত ব্যান্ড ছিল ‘ফিডব্যাক’। তা কেবল ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামে নয়, বরং সমভাবে ওপার বাংলায়। ফিডব্যাক বাংলাদেশের প্রথম সারির ও বাংলারকের প্রথম দিককার ব্যান্ড। স্বাধীনতার আগে এই দেশে বাংলারকের কোন প্রচলন ছিল না। যুদ্ধের পর আজম খান, ফিরোজ সাঁইসহ বহু প্রথিতযশা সঙ্গীতকারের প্রচেষ্টায় এই ধারা চালু হয়। আনন্দকণ্ঠের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতকারে এমন তথ্য জানান ফোয়াদ নাসের বাবু। বাবু ফিডব্যাক ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। আজ অবধি তার সংশ্লিষ্টতা আছে ব্যান্ডের সকল কর্মকা-ে। ১৯৭৬ সালে ‘আলট্রাসোনিকস’ নামের একটি ব্যান্ডের কয়েক সদস্য ও নতুন কয়েক মিউজিশিয়ানের প্রচেষ্টায় গঠিত হয় ব্যান্ড ‘ফিডব্যাক টুয়েন্টিথ সেঞ্চুরি।’ প্রথম দিকে এই ব্যান্ডের সদস্য ছিলেন। এরশাদ মঈনুদ্দিন পপ্সি (ড্রামস), মুরাদ রহমান (বেইস), সেলিম হায়দার (লিড), কিংসলে রিক্টার (ভোকাল), সান্ড্রা হফ (ভোকাল), জাকিউর রহমান (গিটার), ফোয়াদ নাসের (কি- বোর্ড) এবং হাফিজুর রহমান (ম্যানেজার)। মূলত তারা ‘কাভার সঙ’ করতেন। ঢাকার একমাত্র পাঁচ তারকা হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালের সঙ্গে তাদের পারফর্ম করার চুক্তি হয়। সপ্তাহে তিন দিন তারা গান পারফর্ম করবেন। ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত এই ধারা বলবত থাকে। এর মাঝে ব্যান্ডের নাম ও লাইনআপে ব্যাপক রদবদল ঘটে। পড়াশোনা ও ক্যারিয়ারের কাজে তখন অনেক সদস্যই বিদেশ পাড়ি দেন। ব্যান্ডে যোগ দেন পিয়ারু খান ও মাকসুদুল হক। ‘টুয়েন্টি সেঞ্চুরি’ ঝেড়ে ব্যান্ড হয় কেবল ‘ফিডব্যাক’। মাকসুদুল হক কিংবা ‘মাকসুদ’ ফিডব্যাক ব্যান্ডের ‘রজার ওয়াটার’। পিঙ্ক ফ্লয়েড যেমন রজার ওয়াটার ছাড়া অসম্পূর্ণ তেমনি বাংলাদেশের ফিডব্যাক ব্যান্ড মাকসুদ ছাড়া অপরিপূর্ণ। ফিডব্যাক ব্যান্ডের অধিকাংশ জনপ্রিয় গান মাকসুদের লেখা ও গাওয়া। মাকসুদের গায়কী ভঙ্গিমা আপামর দর্শকের কাছে ব্যান্ডটিকে পরিচিত ও জনপ্রিয় করেছিল। সেই সঙ্গে তার সুমিষ্ট কণ্ঠস্বর ছিল বাংলার সঙ্গীতপিপাসুদের বাড়তি পাওয়া। ১৯৭৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ফিডব্যাক প্রথম নিজেদের অচলায়তন ডিঙ্গিয়ে পাবলিক কনসার্টে অংশ নেয়। লিও ক্লাবের উদ্যোগে শিল্পকলা একাডেমির কনসার্ট এখনও ফোয়াদ নাসের বাবুর কাছে জীবন্ত এক স্মৃতি। সেই স্মৃতি রোমাঞ্চ করতে গিয়ে ফোয়াদ নাসের বাবু জানান, গান রেকর্ডিং এখনকার মতো তখন এতটা সহজ ছিল না। গিটারের স্ট্রিংও খুঁজে পাওয়া যেত না। বিদেশে থাকা পরিচিতজন মারফত গিটার স্ট্রিং আনা হতো। ইনস্ট্রুমেন্ট তো অনেক দূরের বিষয়। ফোয়াদ নাসের বাবু জানান, তখন রেকর্ডিং স্টুডিও ছিল কেবল সারগাম। তাই অন্য মিউজিশিয়ানদের সঙ্গেও তাদের সংশ্লিষ্টতা ছিল ব্যাপক ও ঘনিষ্ঠ। এখন কেবল কনসার্টে গিয়ে মিউজিশিয়ানদের সঙ্গে পরিচিত হোন। বাংলাদেশের অগণিত দর্শকদের ফিডব্যাক হৃদয় জয় করেন ‘উল্লাস’ এ্যালবামের মাধ্যমে। ১৯৮৭ সালে এ্যালবামটি সারগামের ব্যানারে বাজারে আসে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সামনে কেবলই ইতিহাস ও অর্জন। যা ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বলবত ছিল। কিন্তু সলো ক্যারিয়ারের নেশায় মাকসুদ ব্যান্ড ছেড়ে আসলে কিছুটা পিছিয়ে পড়ে ইতিহাসগড়া বাংলারকের এই পথিকৃৎ ব্যান্ড। তবে নতুন আঙ্গিকে দ্বিতীয় প্রজন্মের মিউজিশিয়ানদের মুন্সিয়ানায় আবারও দর্শক হৃদয়ে ফিরে এসেছে ফিডব্যাক। লাবু রহমান ও ফোয়াদ নাসের ছাড়া বাকি পাঁচ সদস্যই বয়সে তরুণ। নতুন প্রজন্মের হাতেই ব্যান্ডের দায়িত্ব তুলে দিতে চান ‘কি-বোর্ড’ বাদক ফোয়াদ নাসের। দীর্ঘ চল্লিশ বছরের অধিক সময় ধরে মিউজিক করা এই সুরকারের তেমন ইচ্ছা। তরুণ বয়সে এলিফ্যান্ট রোডের রাস্তায় প্রথম যখন নিজের গাওয়া গান পাবলিক স্পেসে শুনে বিমোহিত হয়েছিলেন, তেমনভাবে মুগ্ধ হতে চান বৃদ্ধ বয়সে দর্শক সারিতে বসে নতুন প্রজন্মের গাওয়া গান ও বাজনায়। বর্তমান সদস্য লাবু রহমান (গিটার ও ভোকালস) শাহানুর রহমান লুমিন (ভোকালস) এনাম এলাহী টন্টি (ড্রামস ও পারকাশন) রায়হান আল হাসান (ভোকালস ও একোয়াস্টিক গিটার) ফোয়াদ নাসের (কি-বোর্ড) মোহাম্মদ দানেশ (বেইস) প্রাথমিক সদস্য এরশাদ মঈনুদ্দিন পপ্সি (ড্রামস) মুরাদ রহমান (বেইস) কিংসলে রিক্টার (রিদম গিটার ও ভোকালস) সেলিম হয়দার (লিড গিটার) স্যান্ড্রা হফ (ভোকালস) জাকিউর রহমান (গিটার ও ভোকালস) ফোয়াদ নাসের (কি-বোর্ডস) হাফিজুর রহমান (ম্যানেজার) অতীত সদস্য এরশাদ মঈনুদ্দিন পপ্সি মুরাদ রহমান জাকিউর রহমান মাকসুদুল হক সেলিম হয়দার পিয়ারু খান সিকান্দার আহমেদ খোকা এ জেড খান রোমেল সানু রিক্টার ওমর খালেদ রুমি মুসা রহমান দস্তগীর হক শাহরিয়ার সুলতান পিয়াস রেশাদ মাহমুদ আতিকুজ্জামান খান বুলবুল কিংসলে রিক্টার স্যান্ড্রা হফ হাফিজুর রহমান
×