ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দিরাই জলমহাল দখল সংঘর্ষের নেপথ্যে সুরঞ্জিত-মতিউর দ্বন্দ্ব

প্রকাশিত: ০৬:২০, ১৯ জানুয়ারি ২০১৭

দিরাই জলমহাল দখল সংঘর্ষের নেপথ্যে সুরঞ্জিত-মতিউর দ্বন্দ্ব

নিজস্ব সংবাদদাতা, সুনামগঞ্জ ১৮ জানুয়ারি ॥ সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে জলমহাল দখলকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে ৩জন নিহতের ঘটনায় বুধবার দুপুর পর্যন্ত কোন মামলা দায়ের হয়নি। পুলিশ এখন পর্যন্ত একজন আসামিকেও গ্রেফতার করতে পারেনি। বুধবার দুপুরে সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। যে কোন সময় আবারও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে বলে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে। তবে পুলিশের দাবি পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। সব ধরনের সংঘাত সংঘর্ষ যাতে না ঘটে সেজন্য ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। সংঘর্ষে মারা যাওয়া তিন জনের মধ্যে দুই জনের লাশ বুধবার সকালে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত হয়েছে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দিরাই উপজেলার গোড়ামারা সাতপাখিয়া প্রকাশিত জারলিয়া নদীর বন্দোবস্তধারী উত্তর নাগেরগাঁও মৎস্যজীবী সমিতি। এই জলমহালের দখল নিয়ে যুবলীগ নেতা একরার হোসেন এবং তার ভাই ছাত্রদল নেতা আজাদুল ইসলাম রানার সঙ্গে উত্তর নাগেরগাঁও মৎস্যজীবী সমিতির দ্বন্দ্ব চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এই বিরোধের জেরে ধরে জলমহালে গত ২৬ ডিসেম্বরও দুই পক্ষের মধ্যে গুলাগুলি হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ১১ টায় জলমহালের দখল নিতে দুই পক্ষের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়। এ সময় ঘটনাস্থলেই তাজুল ইসলাম (৩২)-এর মৃত্যু হয়। আহত হয় আরও অন্তত ১৫ জন। এরা হলেন, দক্ষিণ সুরিয়ার পাড়ের সাহেব আলীর ছেলে মালেক মিয়া (৪০) ও রহিম উল্লার ছেলে মিনার (৩৫), হাতিয়া গ্রামের মিরাস আলীর ছেলে আল-আমিন (২৪) ও সোনাফর মিয়া (২৭), আখিলনগর গ্রাামের ইসহাক মিয়ার ছেলে শাহরুল (২৮) এবং আখিলনগর গ্রামের আমান উল্লার ছেলে উজ্জ্বল মিয়া (২৫)। দুপুর ২টায় তাজুল ইসলামের লাশ দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হলে, শরীরে গুলির আঘাত দেখা গেছে। এ সময় কর্তব্যরত ডাক্তার সাবরিনা আক্তার বলেছেন ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়েছে এবং লাশের শরীরে গুলির চিহ্ন রয়েছে। বিকাল সাড়ে ৩ টায় সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান শাহরুল (২৫) এবং বিকাল সাড়ে ৪ টায় সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে উজ্জ্বল মিয়া (২৮) নামের আরও একজনের মৃত্যু ঘটে। অন্যদের সিলেটের বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে বলে বিশ^স্ত একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। বাকিদের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি। স্থানীয় এলাকাবাসীর সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, উপজেলার কুলঞ্জ ইউনিয়নের হাতিয়া গ্রাম সংলগ্ন জারলিয়া (গোড়ামারা সাতপাখিয়া) জলমহাল দখল নিয়ে সুরঞ্জিত অনুসারী যুবলীগ নেতা একরার হোসেন ও আওয়ামী লীগ নেতা মাসুক মিয়ার মধ্যে প্রতি বছরই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ বিরোধ আরও চরম আকার রূপ নেয় বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে। বিগত ইউ পি নির্বাচনে কুলঞ্জ ইউনিয়নে একরার হোসেন নৌকা মার্কা পেতে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সমর্থন না পেয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সাংসদ মতিউর রহমানের গ্রুপে যোগ দেয়। মতিউরের সমর্থন নিয়ে আওয়ামী বিদ্রোহী হয়ে ইলেকশন করে পরাজিত হন। এর পর থেকেই কুলঞ্জ ইউনিয়নে সুরঞ্জিত-মতিউর দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে। সদ্যসমাপ্ত জেলা পরিষদ নির্বচনে সুরঞ্জিত সমর্থিত প্রার্থীদের ভরাডুবি হলে এই দ্বন্দ্ব আরও চরমে পৌঁছায়। এত করে মতিউর গ্রুপ আরও শক্তিশালী হয়। এলাকার বিভিন্ন জলমহাল দখল পাল্টা দখল নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে এই সংঘর্ষের দানা বাঁধে। মঙ্গলবারের ঘটনা তারই অংশ হিসেবে এলাকাবাসী মনে করছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা মনে করেন এই সংঘর্ষ ও হতাহতের পেছনে রয়েছে সুরঞ্জিত-মতিউরের আধিপত্য বিস্তার চেষ্টা।
×