ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামকে গ্রীন পোর্টে রূপান্তরের উদ্যোগ, অর্থ দিচ্ছে এডিবি

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৯ জানুয়ারি ২০১৭

চট্টগ্রামকে গ্রীন পোর্টে রূপান্তরের উদ্যোগ, অর্থ দিচ্ছে এডিবি

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ দেশের বৃহত্তম চট্টগ্রাম বন্দরে অগণন জাহাজের চলাচলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতিকর কার্বন নিঃসরণের ঘটনার বিপরীতে প্রতিরোধের কোন ব্যবস্থা গত শতাব্দীজুড়ে গড়ে উঠেনি। এর ফলে এ বন্দরে ক্ষতিকারক কার্বন নিঃসরণে পরিবেশের যে বিপর্যয় ডেকে আনছে তা নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা রয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলগুলোতে। চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানিয়েছে, বিষয়টি ব্যাপকতর পর্যায়ে চলে আসায় এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরকে গ্রীন পোর্ট হিসেবে গড়ে তুলতে প্রাথমিক পর্যায়ে জরিপ কার্যক্রম চালাতে এক মিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তা দিতে সম্মত হয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। শীঘ্রই এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে বলে বন্দর সূত্রে জানানো হয়েছে। এর পাশাপাশি কার্বন নিঃসরণকারী জাহাজগুলোকে কার্বন ট্যাক্সেশনের আওতায় আনার লক্ষ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষ ডাটাবেজ কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক কর্মসূচীর আওতায় এবং আর্থিক সহায়তায় চট্টগ্রাম বন্দরে আসা-যাওয়া জাহাজগুলোর তথ্য সংগ্রহ করা হবে। পাশাপাশি এসব জাহাজের যন্ত্রপাতি থেকে পরিবেশের ওপর কি কি ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে সে তথ্যও ডাটাবেজে নিয়ে আসা হবে। বন্দর সূত্র জানায়, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে বছরে গড়ে আড়াই হাজারেরও বেশি ছোট বড় আমদানি-রফতানির পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল করে থাকে। এসব জাহাজ থেকে পরিবেশের কি পরিমাণ কার্বন ক্ষতিকর নিঃসরণ হচ্ছে তা নিরূপণের কোন ব্যবস্থা নেই। এমনকি সুনির্দিষ্টভাবে বছরে কত জাহাজ আসা-যাওয়া করছে এর পরিসংখ্যানের কোন ডাটাবেজ প্রোগ্রামও নেই। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের ৮০ ভাগেরও বেশি আমদানি-রফতানির পণ্য পরিবাহিত হয়ে থাকে। বিভিন্ন সময়ে এ বন্দরের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্প্রসারিত হলেও কার্বন নিঃসরণ রোধে কোন ব্যবস্থা অদ্যাবধি গড়ে উঠেনি। অথচ মাদার ভেসেল থেকে শুরু করে বিভিন্ন সাইজের ছোট বড় জাহাজগুলো উচ্চমাত্রার জ্বালানি পোড়াচ্ছে, যা পরিবেশকে ক্রমাগতভাবে ক্ষতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সাধারণত, জাহাজ বন্দর বা বহির্নোঙ্গরে ভেড়ার পরও এর ইঞ্জিন সচল রাখতে হয়। এ সচল রাখার বিপরীতে প্রতিনিয়ত জ্বালানি পুড়ে ক্ষয় হয়। বিশ্বের উন্নততম বন্দরগুলোতে জাহাজ থেকে কার্বন নিঃসরণ বিষয়ে কঠোর বাধানিষেধ রয়েছে। শুধু তাই নয়, এ ধরনের জাহাজগুলো থেকে ওসব বন্দর কর্র্তপক্ষ মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণও আদায় করে থাকে। এ জন্য রয়েছে ডাটাবেজ প্রযুক্তি। বন্দর সূত্র জানায়, কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে জাহাজ চলাচলকারী বিভিন্ন সংস্থার পক্ষের সুপারিশ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে আসছে। কিন্তু আর্থিক সহায়তার সীমাবদ্ধতার কারণে এ নিয়ে কোন পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। ফলে কার্বন নিঃসরণকারী কত সংখ্যক জাহাজ এর আওতায় পড়ছে তা ধরা যাচ্ছে না। যেহেতু ডাটাবেজ কর্মসূচী নেই সে কারণে এ নিয়ে কোন পদক্ষেপও নেয়া যাচ্ছে না। বর্তমান সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ বন্দরকে বিশ্বমানের গ্রীন পোর্টে রূপান্তরের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে তাতে এর কোন বিকল্প নেই। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে পত্র চালাচালি হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ডাটাবেজ তৈরি কর্মসূচীতে সবুজ সংকেত দিয়েছে জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইউএনইপি। এ সংস্থার পক্ষ থেকে গঠন করা হয়েছে উচ্চ পর্যায়ের ১০ সদস্যের একটি কমিটি। বন্দরের পরিকল্পনা ও বিভাগীয় প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, বন্দরকে পরিবেশবান্ধব করতে প্রয়োজন ডাটাবেজ কর্মসূচী। কিন্তু এ নিয়ে শতাব্দীজুড়ে এ ধরনের কোন কর্মসূচী অনুপস্থিত। বিষয়টি নিয়ে পরিবেশ সচেতন মহলের সচেতনতা ও এর কার্যকরের ব্যবস্থা নিয়ে ক্রমাগতভাবে সোচ্চার ভূমিকা রয়েছে। এর ফলে বন্দর কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে করণীয় নিয়ে তৎপর হয়েছে। এ প্রকল্পে প্রথম পর্যায়ে টানা ছয় মাস এ বন্দরে আসা-যাওয়ার জাহাজগুলোর ওপর জরিপ চালানো হবে। এরপরই জানা যাবে কি পরিমাণ কার্বন ওইসব জাহাজ থেকে নিঃসরণ হচ্ছে। এর পাশাপাশি বন্দরের জেটি এলাকাজুড়ে পরিবেশের পরিস্থিতিও সংগৃহীত হবে। উল্লেখ করা যেতে পারে, আন্তর্জাতিক চলাচল সংস্থার পক্ষ থেকে জাহাজের লাইফ টাইম উপেক্ষা করে তা চলাচলে রাখা হয়ে থাকে। অথচ আইএমওসহ বিভিন্ন সংস্থার এ সংক্রান্তে নিষেধাজ্ঞা ও বিধিনিষেধ রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশে এ বিষয়টি বরাবরই উপেক্ষিত হয়ে আছে। যার কারণে প্রতিবছর যে আড়াই হাজারেও বেশি জাহাজ এ বন্দর ঘিরে চলাচল করছে তাতে কি পরিমাণ কার্বন নিঃসরিত হয়ে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে তা নির্ধারণ করার কোন সুযোগ নেই। এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচলকারী সংস্থাগুলো।
×