ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

অবৈধ আয় ঠেকাতে এনবিআরের সহায়তা চায় দুদক

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১৯ জানুয়ারি ২০১৭

অবৈধ আয় ঠেকাতে এনবিআরের সহায়তা চায় দুদক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবৈধ আয় যাতে আর কেউ করতে না পারে সেজন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্মকর্তাদের উদ্যোগ ও সহযোগিতা চেয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। বুধবার এনবিআর সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘শুদ্ধাচার ও নৈতিকতা বিষয়ক’ সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সহযোগিতা কামনা করেন। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান মোঃ নজিবুর রহমান। দুর্নীতি নির্মূলে কর্মকর্তাদের সহায়তার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অবৈধ টাকা বাতাসে উড়ে বেড়ায়। এ বিষয়ে নিজেদের সতর্ক হতে হবে। এখন কাউকে ছাড় দেয়ার সময় নেই। অবৈধ আয় যাতে কেউ করতে না পারে সেজন্য এনবিআরের সহযোগিতা চাই, উদ্যোগ চাই, চাই কর্মদক্ষতার উন্নয়ন। এনবিআর কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সময় এসেছে সত্য বলার। এনবিআরের আয়কর, কাস্টমস সম্পর্কে মানুষের কী ধারণা, তা আপনারা জানেন। দুদক বা এনবিআরের বিরুদ্ধে এ ধারণা কেন থাকবে?’ তিনি বলেন, এনবিআর কর্মকর্তাদের কারণে সম্পদের হিসাব নিতে পারছি না। ট্যাক্সের কোন বেজ পাচ্ছি না। এনবিআর কর্মকর্তারা ট্যাক্স সনদ দিচ্ছেন। আবার আমাকে জিজ্ঞাসা করতে হচ্ছে, এর উৎস কী। এ প্রশ্ন করতে চাই না। তিনি বলেন, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সময় এখনই। এনবিআর রাষ্ট্রের রক্ত। তাই এ সংস্থার কর্মকর্তাদের মধ্যে যদি অনৈতিকতা থাকে, তবে সেটা দেশের জন্য মারাত্মক সমস্যা। ইকবাল মাহমুদ বলেন, ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষেত্রে স্মার্ট। কিন্তু এনবিআর কিংবা দুদক কর্মকর্তারা সে ধরনের স্মার্ট নয়। তাই ব্যক্তিগত ও পদ্ধতির পরিবর্তন করা প্রয়োজন। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমরা যেন আটক বা গ্রেফতার না হই, জেলখানায় না যাই। কারাগারের কষ্টের কথা বিবেচনা করে সবাইকে দুর্নীতি করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আমি আমার কাজ যদি ঠিক মতো করি, তাহলে আমার কোন দোষ বা অপরাধ থাকার কথা না। ইকবাল মাহমুদ বলেন, মানুষ কেন ট্যাক্স কম দেয়? এটা লজ্জাজনক। আমাদের দেশে ১৬ কোটি লোক অথচ ট্যাক্স দেয় মাত্র ১২ লাখ মানুষ। যা ভুটানের চেয়েও কম। এটা খুবই লজ্জার। আরও লজ্জার বিষয় এনবিআর ট্যাক্স আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে মাত্র ১১/১২ শতাংশ। আমাদের তো সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। একটি ইউনিয়ন পরিষদ দুইশ বছর ধরে যদি খানা ট্যাক্স আহরণ করতে পারে, তাহলে এনবিআর কেন প্রতিটি খানা ফাইলের অধীনে একটি ট্যাক্স ফাইল করতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, দেশের খারাপ মানুষ থাকবে এটা স্বাভাবিক। খারাপ মানুষ আছে বলেই ভাল মানুষের মর্যাদা বোঝা যায়। আপনি এ দেশের মালিক তখনই হবেন যখন আপনি সরকারকে ট্যাক্স বা কর দেবেন। শুধু ন্যাশনাল আইডি কার্ড থাকলেই দেশের মালিক হওয়া যায় না। মালিক হতে হলে সরকারকে নিয়মিত ট্যাক্স বা কর দিতে হবে। এ সময় তিনি এনবিআরকে দেশের ধনী-দরিদ্রের এবং গ্রাম-শহরের বৈষম্য কমানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, এসব বৈষম্য রাষ্ট্রের জন্য বড় সমস্যা। এই বড় সমস্যা সমাধানে এনবিআরকেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। দামি গাড়ি প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, অনেকে নেক্সাস, বিএমডব্লিউ গাড়ি চালান। কিন্তু ট্যাক্স দেন মাত্র এক/দুই লাখ টাকা। এটা হতেই পারে না। সমস্ত কালো টাকা জমি ক্রয়ে চলে যাচ্ছে উল্লেখ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, গুলশানে ১০ কোটি টাকার সম্পত্তি দুই কোটি টাকায় রেজিস্ট্রেশন হয়। ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘ট্যাক্স বিভাগ যখন একজনকে সনদ দিয়ে দেয়, দুদক তখন কিছু বলতে পারে না। এটা নৈতিকতার প্রশ্ন। সম্পত্তির পরিমাণ দেখে সনদ দেয়া হয় না। সংবিধানে বলা হয়েছে, অবৈধ আয় চলবে না। ব্যাংকে অনেক টাকা পড়ে রয়েছে। এ টাকার উৎস বের করতে পারছি না, এটার মূল কারণ কর বিভাগ। দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। দুর্নীতি করবেন, ঘুষ নেবেন, এদেশের মানুষ তা আর গ্রহণ করবে না। অবৈধ আয় হলো নেশা, এ নেশা বন্ধ হওয়া দরকার বলেও জানান তিনি। সেমিনারে এনবিআর ও দুদকের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সেমিনার শুরুর আগে দুদক চেয়ারম্যান ও সচিবকে ফুল দিয়ে বরণ করেন এনবিআর চেয়ারম্যান।
×