ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

মোট ৩১ রাজনৈতিক দলের আলোচনায় অংশগ্রহণ

নির্বাচন কমিশন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সংলাপ শেষ

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৯ জানুয়ারি ২০১৭

নির্বাচন কমিশন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সংলাপ শেষ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ ৩১ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের ধারাবাহিক সংলাপ বুধবার শেষ হয়েছে। আলোচনার শেষ দিন তিনটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনাকাল রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিতে সকল রাজনৈতিক দলকে সহযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও প্রস্তাব বিবেচনা করে একটি শক্তিশালী ও কার্যকর নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব হবে। বুধবার আলোচনা শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মোঃ জয়নাল আবেদীন বুধবার জনকণ্ঠকে বলেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ধারাবাহিক আনুষ্ঠানিক আলোচনা শেষে হয়েছে। এখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যেসব মতামত ও প্রস্তাব দিয়েছে সেগুলো পর্যালোচনা করে রাষ্ট্রপতি পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। কীভাবে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন হবে এ ব্যাপারে বঙ্গভবন থেকে আনুষ্ঠানিক কোন বক্তৃতা কিংবা বিবৃতি না দিলেও নানা সূত্রে জানা গেছে, দ্রুতই রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে উদ্যোগ নিতে পারেন। গঠিত সার্চ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনারদের (ইসি) নাম ঘোষণা করবেন রাষ্ট্রপতি। কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী পাঁচ বছর মেয়াদী নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের এখতিয়ার একমাত্র রাষ্ট্রপতির। সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে বলা আছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে এই নির্বাচন কমিশন হবে। এ বিষয়ে প্রণীত আইনের বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কমিশন নিয়োগ দেবেন। কিন্তু সংবিধানের আলোকে ওই আইন ৪৫ বছরেও না হওয়ায় প্রতিবারই নির্বাচন কমিশন গঠনে জটিলতা দেখা দেয়। গতবার নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সার্চ কমিটির গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম জিল্লুর রহমান। সুপ্রীমকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান করে গঠিত ওই সার্চ কমিটি সিইসি পদের জন্য দু’জন এবং নির্বাচন কমিশনার পদে আট জনের নাম প্রস্তাব করে। তাদের মধ্যে থেকে সাবেক সচিব কাজী রকিবউদ্দীন আহমদকে সিইসি এবং আবদুল মোবারক, আবু হাফিজ, জাবেদ আলী ও মোঃ শাহনেওয়াজকে কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেন জিল্লুর রহমান। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদের শেষ পর্যায়ে এসে এবারও একইভাবে সংলাপের আয়োজন করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। বিএনপির সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে গত ১৮ ডিসেম্বর এ আলোচনা শুরু হয়। এরপর গত এক মাসে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগসহ ৩১টি দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে নতুন ইসি গঠনে কথা বলেছেন রাষ্ট্রপতি। বৈঠকে অধিকাংশ দলই ইসি পুনর্গঠনে নতুন আইন প্রণয়নের দাবি জানালেও সময় স্বল্পতার কারণে এবার ইসি গঠনে তা সম্ভব হবে না বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হকও বলেছেন, স্পর্শকাতর এ বিষয়ে তড়িঘড়ি করে নতুন আইন প্রণয়ন করা সমীচীন হবে না। তাই বাস্তবতার কারণেই এবার সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হতে পারে। তবে আগামীতে ইসি পুনর্গঠন যাতে নতুন আইনের ভিত্তিতেই হয় সে ব্যাপারে সরকার উদ্যোগ নেবে বলে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। শেষ দিনে তিনটি দলের সঙ্গে সংলাপ ॥ বুধবার বঙ্গভবনের দরবার হলে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) এবং জাকের পার্টির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সংলাপ করেন রাষ্ট্রপতি। বৈঠক শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মোঃ জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের জানান, দলগুলোর সঙ্গে পৃথক আলোচনায় রাষ্ট্রপতি বলেন, ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সার্চ কমিটি ও নির্বাচন কমিশন গঠনে অনেক সুচিন্তিত প্রস্তাব ও মতামত দিয়েছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন এসব প্রস্তাব ও মতামত বিবেচনা করে একটি শক্তিশালী ও কার্যকর নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব হবে। রাষ্ট্রপতিকে উদ্ধৃত করে প্রেস সচিব বলেন, রাষ্ট্রপতি দেশের গণতান্ত্রিক অগযাত্রাকে এগিয়ে নিতে সকল রাজনৈতিক দলকে সহযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান। ইসির আর্থিক স্বাধীনতা চায় ইসলামী ফ্রন্ট ॥ বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান মাওলানা এম এ মান্নানের নেতৃত্বে নয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসি পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনা করেন। তারা রাষ্ট্রপতির কাছে নির্বাচন কমিশন গঠনে ছয় দফা প্রস্তাব পেশ করেন। সংলাপকালে ফ্রন্টের নেতারা বলেন, স্বাধীন, শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারে। তারা নির্বাচন কমিশনের জন্য পৃথক সচিবালয় গঠন এবং কমিশন সচিবালয়ের আর্থিক স্বাধীনতা প্রদানসহ ছয় দফা প্রস্তাব পেশ করেন। তারা আশা প্রকাশ করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে, যার মাধ্যমে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন জানান, আলোচনায় রাষ্ট্রপতি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাব ও মতামত শক্তিশালী নির্বাচন গঠনে ইতিবাচক অবদান রাখবে। এরপরে বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের সঙ্গে দরবার হলে আলোচনায় বসেন। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দলের সভাপতি এ এইচ এম কামরুজ্জামান খান। প্রেস সচিব জানান, আলোচনকালে বিএমএল নেতারা বলেন, দেশের উদার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন জরুরী। বৈঠকে বাংলাদেশ মুসলিম লীগের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে দৃঢ় মনোবৃত্তি সম্পন্ন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেন। এছাড়া নির্বাচন কমিশনে একজন নারী কমিশনার রাখারও প্রস্তাব দেয় দলটি। সবশেষ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে বসেন জাকের পার্টির প্রতিনিধিরা। দলের চেয়ারম্যান মোস্তফা আমির ফয়সলের নেতৃত্বে দশ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে দরবার হলে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনায় জাকের পার্টির নেতারা আশা প্রকাশ করে বলেন, সংবিধান অনুযায়ী একটি গ্রহণযোগ্য, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির চলমান উদ্যোগ সফল হবে। বৈঠক শেষে প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন জানান, জাকের পার্টি সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল থেকে একজন করে প্রতিনিধি সমন্বয়ে সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন। এছাড়া স্বাধীন, স্বতন্ত্র ও আর্থিকভাবে স্বয়সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশন গঠনেরও প্রস্তাব করা হয়।
×