ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হারনেসিং রিজিওনাল কো-অপারেশন ইন সাউথ এশিয়া সেশনে মতবিনিময়

সার্কের কার্যকারিতা এখনও শেষ হয়ে যায়নি ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৯ জানুয়ারি ২০১৭

সার্কের কার্যকারিতা এখনও শেষ হয়ে যায়নি ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাউথ এশিয়ান এ্যাসোসিয়েশন ফর রিজিওনাল কো-অপারেশনের (সার্ক) কার্যকারিতা হারানোর অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, এই আঞ্চলিক জোট ‘খুব ভালভাবেই সক্রিয় আছে’। তিনি বলেন, সার্কের কার্যকারিতা এখনও শেষ হয়ে যায়নি, আট জাতির এই আঞ্চলিক সংস্থাটি খুব ভালভাবে সক্রিয় আছে এবং আমি মনে করি দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য এর মাধ্যমে আরও অনেক কাজ করার সুযোগ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই অঞ্চলের জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সুইজারল্যান্ডের ডাভোস কংগ্রেস সেন্টারে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ৪৭তম বার্ষিক সম্মেলনে ‘হারনেসিং রিজিওনাল কো-অপারেশন ইন সাউথ এশিয়া’ শীর্ষক একটি ইন্টারেক্টিভ সেশনে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন। খবর বাসস’র। এই ইন্টারেক্টিভ সেশনে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে, ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ও সার্কভুক্ত বিভিন্ন দেশের জনপ্রতিনিধি এবং সুশীল সমাজের সদস্যগণ যোগদান করেন। প্রধানমন্ত্রী, এই অঞ্চলের প্রধান শত্রু হিসেবে দারিদ্র্যকে আবারও চিহ্নিত করে বলেন, ‘আমরা কীভাবে দারিদ্র্য নির্মূল করতে পারি সেদিকেই আমাদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া উচিত।’ তিনি বলেন, দারিদ্র্য বিমোচনে সার্কভুক্ত দেশগুলোকে ব্যবসা-বাণিজ্য জোরদার করতে হবে এবং মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ বাড়াতে হবে। ‘আমরা দারিদ্র্য নির্মূল করতে কাজ করে যাচ্ছি’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ জন্য বিবিআইএন, বিসিআইএম-ইসি ও বিমসটেক ফোরাম প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। তিনি বলেন, ব্যবসাবাণিজ্য গতিশীল করতে সাফ্টা শক্তিশালী হচ্ছে। বৃহত্তর পরিসরে দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে চীনকে একীভূত করার জন্য বিসিআইএম-ইসি ফোরাম গঠন করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এ অঞ্চলে টেলিযোগাযোগ উন্নয়নের জন্য কক্ষপথে একটি সার্ক স্যাটেলাইট চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে বাংলাদেশে বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিকদের ফাঁসি দেয়া হয়েছে- এ সংক্রান্ত পাকিস্তানের সুশীল সমাজের এক প্রতিনিধির প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যাদের আপনি বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক বলে সম্বোধন করছেন, তারা সকলেই ১৯৭১ সালে অপরাধ সংগঠনের সময়ে নবীন ছিলেন এবং তারাই এই গণহত্যা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা সে সময় জঘন্যতম হত্যাকা-, ধর্ষণ, ঘরবাড়ি ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে সম্পৃক্ত ছিলেন। এসব অপরাধেই তাদের দেশের প্রচলিত আইনে বিচার এবং দ- প্রদান করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর তাদের বিনিয়োগ ফিরিয়ে নেয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এক দেশ থেকে বিনিয়োগ অন্যত্র সরিয়ে নেয়াটা কোন অংশেই সহজ কাজ নয়। এ সময় দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে পরিণত করতে তাঁর সরকারের উদ্যোগে গৃহীত বিভিন্ন প্রকার প্রশিক্ষণ কর্মসূচী উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত মোকাবেলা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ৪শ’ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে। এছাড়াও জলবায়ু সম্পর্কিত অভিযোজন মোকাবেলায় ১৩৪টি এ্যাকশন প্লান গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাতের জন্য দায়ী উন্নত বিশ্বের দেশগুলোকে জলবায়ু ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোর সাহায্যে এগিয়ে আসার আবারও আহ্বান জানান। বাংলাদেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে পরিবেশের ওপর বিরূপ কোন প্রভাব পড়বে কি না-এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দূষণকে সর্বনি¤œ পর্যায়ে রাখার জন্যই এই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে উন্নততর এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সাল নাগাদ আমাদের সরকারের লক্ষ্য অনুযায়ী বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার জন্য আমাদের ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন সক্ষমতার প্রয়োজন। আর এই পরিমাণ বিদ্যুত উৎপাদনে কয়লাকে ব্যবহার করতেই হবে। শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানির সাহায্যে বিদ্যুত উৎপাদনে পরামাণুভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণেরও উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি আমাদের উৎপাদন বৃদ্ধিতে কয়লার ব্যবহারও বাড়াতে হবে। প্রবাসী বাংলাদেশীদের অভিনন্দন ॥ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশী প্রবাসীরা সুইজারল্যান্ড সফর উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাতে মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন শহর এবং এর পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর প্রবাসী বাংলাদেশীরা প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানস্থল স্থানীয় সিল ভেরেত্তা পার্ক হোটেলের সামনে এসে সমবেত হন। এ সময় তারা প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে এবং ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক সম্মেলনে তাঁর অংশগ্রহণের সাফল্য কামনা করে বিভিন্ন স্লোগান দেন। আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে যোগদানের ফলে বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ¦ল হলো। প্রবাসীরা ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলনে যোগদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ফোরামের নির্বাহী চেয়াম্যান প্রফেসর ক্লাউস সোয়াবকে ধন্যবাদ জানান।
×