ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শান্ত সিং

ওদের ফেরাতে হবে

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ১৯ জানুয়ারি ২০১৭

ওদের ফেরাতে হবে

কিশোর সন্ত্রাসবাদ একটি সামাজিক অবক্ষয়। আজ কিশোররাই কিশোরদের হুমকি দিচ্ছে বা এক জন অন্য জনের ওপর আগ্রাসী মনোভাব পোষণ করছে বা আগ্রাসী হয়ে পড়ছে। তাদের এই সন্ত্রাসী কার্যক্রম ভবিষ্যত প্রজন্ম সম্পর্কে আমাদের সন্দিহান করে তুলছে। কিশোরদের এই উগ্রতা হঠাৎ করেই উদ্ভব মনে হলেও এর ভিত্তি কিন্তু অনেক আগেই সূচিত হয়েছে। যার সঙ্গে আমাদের পরিবার ও সমাজ ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল বা প্রতিহিংসা জড়িত রয়েছে। কারণ কিশোররা এ সমস্ত বেড়াজালে আবদ্ধ। বহু পিতা-মাতাই তাদের সন্তানের প্রতি উদাসীন। তারা তাদের পদমর্যাদা, চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি নিয়েই ব্যস্ত থাকে। অনেকেই তাদের সন্তানের প্রতি কর্তব্যের ব্যাপারে সচেতন নন। বহু কিশোর তাদের বাবা-মা কিংবা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গ না পেয়ে চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ থাকে। যাদের দিনের একটা বড় সময় কাটে হিংসাত্মক কার্টুন বা এ জাতীয় চিত্র দেখে। এতে তারা যেমন নির্দয় হয়ে উঠছে একই সঙ্গে সুষ্ঠু সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে পারছে না। সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে না পারাটাও কিশোর সন্ত্রাসের অন্যতম কারণ। তাছাড়া দাম্পত্য কলহ, বিয়েবিচ্ছেদ, সন্দেহ, সমঝোতার অভাব ইত্যাদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। প্রতিনিয়ত আমাদের চোখের সামনে তা অহরহ ঘটে যাচ্ছে। কারণ আমরা আমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকি না। যখন ঘটে যায় তখন উদ্বেগ প্রকাশ করি। শিক্ষা ব্যবস্থা আজ কোচিং প্রাইভেট নির্ভর হওয়ায় উপযুক্ত শিক্ষার সঙ্কট চলছে। ছোট ক্লাসের শিক্ষার্থীদের জন্য অপ্রয়োজনীয় বইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি, পাবলিক পরীক্ষার নামে কোমলতি শিক্ষার্থীদের ওপর পরীক্ষার চাপ শিক্ষা ব্যবস্থায় ত্রুটি করে তুলেছে। যার জন্য শিক্ষার্থীরা সারাদিন কোচিং বা প্রাইভেট নিয়েই সময় পার করছে। এতে তাদের সুন্দর জীবন গঠনের সহায়ক নির্মল বিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষণের চেয়ে প্রতিযোগিতামূলক হওয়ায় কোচিং, প্রাইভেট এমনকি স্কুলগুলোতেও নির্ধারিত কিছু অংশ শুধু পড়ানো হয়। এতে করে বাদ পড়ে যাচ্ছে কোন অংশ সেখানে হয়ত দুটি নীতি কথার উল্লেখ রয়েছে। জিপিএ-৫ পাওয়া মুখ্য হওয়ায় নৈতিক বিষয়ক বা কর্মশালার বিলোপ সাধন হচ্ছে। পাসের হারের আড়ালে প্রকৃত শিক্ষা হ্রাস পাচ্ছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসাও কিশোর সন্ত্রাস উদ্ভবের কারণ। ২০১৫ সালে আমরা দেখেছি কীভাবে কিছু স্বার্থান্বেষী রাজনীতিবিদ তাদের নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য কিশোরদের হাতে লাঠি তুলে দিয়েছিল রাস্তায় পিকেটিং করার জন্য। যাদের অনেকে হয়ত আজ পাকা কিশোর সন্ত্রাসে রূপ নিয়েছে। তারাই আজ আধিপত্য বিস্তারে গ্রুপ তৈরি করছে। নাবালক হয়েও শহরের অলিগলিতে বাইক নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। রাস্তা শিস কাটে ও মেয়েদের উত্ত্যক্ত করছে। আমরা যদি একটু সচেতন থাকতাম তবে এই শ্বাসরুদ্ধ পরিবেশের সৃষ্টি হতো না।সে জন্য আমাদের প্রত্যেকেই সচেতন হতে হবে। অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে তাদের সন্তানদের ব্যাপারে। তাদের সঙ্গ দিতে হবে। সংস্কৃতিমনা হয়ে বেড়ে উঠতে সাহায্য করতে হবে। সুস্থ সংস্কৃতিচর্চা করতে উৎসাহিত করতে হবে। নটর ডেম কলেজ, ঢাকা থেকে
×