ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লবণের দাম বাড়ছে কেন

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ১৯ জানুয়ারি ২০১৭

লবণের দাম বাড়ছে কেন

লবণের দাম বাড়ছে দিন দিন। দামে অস্থিরতা কমেনি। বিশেষ করে গত ঈদ-উল-আযহাকে সামনে রেখে টালমাটাল হয়ে ওঠে লবণের বাজার। প্রতি কেজি লবণ এমন কি ৫০-৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রির অভিযোগ ওঠে। ট্যানারি ও চামড়া শিল্পে বিপুল পরিমাণ লবণের প্রয়োজন পড়ে। আর এরই সমূহ সুযোগ নেন লবণ আমদানিকারক, মিল মালিক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। ঘর-গৃহস্থালি, রান্না-বান্নার কাজে লবণ একটি অতি অপরিহার্য দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় উপাদান। এমনকি পাতে লবণ না হলেও চলে না বাঙালীর। ফলে লবণের দাম শনৈঃশনৈঃ বাড়লে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেই। হয়েছেও। জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার তথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জরুরীভিত্তিতে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে দু’দফায় আড়াই লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি দেয়। দুঃখজনক হলো, এ নিয়েও বাণিজ্যে নেমে পড়েন লবণ আমদানিকারকরা। প্রথমে তারা অভ্যন্তরীণ বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে সময়মতো লবণ আমদানিতে প্রদর্শন করেন শৈথিল্য। কয়েকটি বড় শিল্প গ্রুপ এই কারসাজিতে জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন মিল মালিক ও লবণ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরাই। কেউ কেউ এমন কি এলসি খুলে তা বিক্রি করে দিয়েছেন অন্যের কাছে। এরাই মূলত নিয়ন্ত্রণ করে থাকে অভ্যন্তরীণ বাজার। ক্রেতারা তো কোন ছাড়, এমন কি সরকারও সময় সময় এদের কাছে অসহায় হয়ে পড়ে। ভারত থেকে আমদানিকৃত প্রতি কেজি অপরিশোধিত লবণের দাম পড়ে ১ টাকা ৬২ পয়সা। সেই লবণ পরিবহন খরচ, শোধনসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় যোগ করলে মূল্য প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ১৫-১৭ টাকা হওয়ার কথা। তবে বর্তমানে বাজারে মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকার ওপরে। কোন কোন ব্র্যান্ডের দাম এমনকি ৫৫ টাকা। তদুপরি আয়োডিন মেশানো বাধ্যতামূলক হলেও বাজারের অনেক লবণে আয়োডিন নেই। গত বছর মানভেদে এই লবণ বিক্রি হয়েছে ১৫-২৮ টাকায়। এক্ষেত্রে দাম বৃদ্ধির হার ৪৭ শতাংশ। অর্থাৎ, গত বছরের তুলনায় এ বছর দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। বিসিকের মতে, দেশে লবণের বার্ষিক চাহিদা ১৬ লাখ ৫৮ হাজার টন। তবে লবণ ব্যবসায়ীদের মতে, এই হিসাব ঠিক নয়। চাহিদা প্রায় ২২ লাখ টন। অথচ দেশে লবণ উৎপাদন হয় মাত্র ১৬ লাখ টন। চাহিদা ও জোগানের এই বিপুল ব্যবধানই লবণের দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে মনে করা হয়। তাই বলে জরুরীভিত্তিতে আড়াই লাখ টন লবণ আমদানির পরও বাজারে তার কোন ইতিবাচক প্রভাব পড়বে না কেন? বাংলাদেশের লবণে স্বয়ংসম্পূর্ণ না হওয়ার কোন কারণ নেই। গত কয়েক বছর ধরে ঝড়-ঝঞ্ঝা-বৃষ্টিপাত-জলোচ্ছ্বাসের প্রকোপও কমেছে অনেকাংশে। দেশীয় লবণ চাষীদের বিনা সুদে অথবা স্বল্পসুদে ঋণ দিয়ে আরও বেশি করে লবণ চাষে অনুপ্রাণিত করতে হবে। শুধু আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়ার জন্য দেশীয় লবণ শিল্পের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করা বাঞ্ছনীয় নয়।
×