ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জঙ্গী বিচার বিলম্বিত

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ১৯ জানুয়ারি ২০১৭

জঙ্গী বিচার বিলম্বিত

জঙ্গী দমনে যতটা তৎপর ও সক্রিয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, জঙ্গীদের বিচারের কাজ ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে ততই সময়ক্ষেপণ ও ঝুলিয়ে রাখায় অভ্যস্ত। দেশে জঙ্গীবাদী অপরাধের তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে তাই প্রশ্ন ওঠে বার বার। খুবই যুক্তিসঙ্গত প্রশ্ন যে, জঙ্গীরা হত্যার মতো গুরু অপরাধ করার পরও কেন বিচার প্রক্রিয়ার বাইরে থাকতে পারছে। এক হিসাবে দেখা যায়, গত এগারো বছরে জঙ্গী অপরাধের বিরুদ্ধে যে সব মামলা হয়েছে, সেগুলোর অর্ধেকের বেশির তদন্ত প্রক্রিয়া প্রায় থেমে আছে কিংবা চলছে ধীরগতিতে। আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না পাওয়ার কারণে অনেক জঙ্গীর বিরুদ্ধে তদন্ত ও মামলা পরিচালনা করা যাচ্ছে না। মন্ত্রণালয় পর্যালোচনা করে অনুমতি না দেয়ায় এসব ঝুলে আছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা শুধু নয়, মতাদর্শগত সমস্যার কারণেও মামলার অনুমতির জন্য চাওয়া আবেদনগুলো ফাইলবন্দী পড়ে আছে। প্রশাসনের অন্দরে জঙ্গী সমর্থক থাকা বিচিত্র কিছু নয়। বিএনপি-জামায়াত জোট শাসনামলে জঙ্গীবাদের বিকাশ ঘটানো শুধু নয়, জঙ্গী মতবাদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সমর্থকরাও প্রশাসনে ঠাঁই পেয়েছে। তাই জঙ্গীরা অবলীলায় জামিন পেয়ে যায় এবং মুক্ত হয়ে আবার জঙ্গী হামলা চালিয়ে আসছে। তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে দায়ের করা মামলাগুলোর নিষ্পত্তি তো হচ্ছেই না, বরং গ্রেফতারের পরও জামিন নিয়ে পালিয়ে গেছে দুই শতাধিক জঙ্গী। গত বছর সংঘটিত জঙ্গী হামলাগুলোর পেছনে জামিনে মুক্তদেরও ভূমিকা ছিল। জঙ্গীদের সংঘটিত হত্যা ও সন্ত্রাসী মামলাগুলোর তদন্ত প্রক্রিয়ার ধীরগতি সম্পর্কে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যে সব যুক্তি হাজির করে তা গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে না বাস্তবতা বিবর্জিত হওয়ার কারণে। বিচার কাজ বিলম্বের প্রধান কারণ দেখানো হচ্ছে যে, সাক্ষীরা ভয়ে আদালতে হাজির হচ্ছেন না। তারা জঙ্গী সন্ত্রাসীদের ভয়ে ঝুঁকি নিতে চাইবেন না, এটাই স্বাভাবিক। মামলা পরিচালনার স্বার্থে সাক্ষীদের সুরক্ষা দেয়া আদালতের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সাক্ষীরা গরহাজির হলে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে তাদের হাজির করানো যায়। জঙ্গীদের বিচারে সময়ক্ষেপণের নানা কৌশল গ্রহণের অভিযোগ অনেক দিনের। আইনগত ফাঁক-ফোকর দিয়ে জঙ্গীরা জামিন পেয়ে যায়। তদন্ত প্রতিবেদন এমন দুর্বলভাবে উপস্থাপন করা হয় যে, জঙ্গীরা অনায়াসে পার পাচ্ছে। জঙ্গীদের পক্ষে কোন আইনজীবী না থাকা সত্ত্বে¡ও এরা মুক্ত হচ্ছে। বিচারহীনতা অথবা বিচারের দীর্ঘসূত্রতা জঙ্গীদের নতুন অপারেশনে উৎসাহিত করে বৈকি। সময়মতো সাক্ষী না আসা, নিরাপত্তার অভাব, সমন জারি না হওয়া, পুলিশের উদাসীনতাই জঙ্গীদের বিচারে ধীরগতির কারণ। প্রচলিত আইনে যদি গলদ থাকে, তবে সে আইন সংশোধন করা জরুরী। জঙ্গী উপসর্গের সঙ্গে পুরনো আইন খাপ খাচ্ছে কি না তা বিবেচনা করা সঙ্গত, দুর্ধর্ষ জঙ্গীরা কীভাবে জামিন পায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কেন মামলা দায়েরের অনুমতি ঝুলিয়ে রাখে, তদন্ত প্রতিবেদন কেন দুর্বল হয়, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সক্ষমতায় ঘাটতি আছে কিনা বা বিচার বিবেচনার কাজটি করার কোন কর্তৃপক্ষ কার্যকর কিনা তা অস্পষ্ট। জঙ্গীরা জেলখানায় বেশ বহাল তবিয়তে রয়েছে। বাইরের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে এবং নাশকতার নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে বলে প্রচার রয়েছে। যার সত্যতাও মেলে। জঙ্গীবাদ আন্তর্জাতিক উপসর্গ হলেও দেশী জঙ্গীদের নির্মূল সাধনের পাশাপাশি বিচার দ্রুত হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে গাফিলতি, অবহেলা ও দায়িত্বহীনতায় জড়িতদেরও সন্দেহের তালিকায় রাখা উচিত। জঙ্গীমুক্ত দেশ রাখতে হলে সুশৃঙ্খল, সুপরিকল্পিত ও আন্তরিক প্রচেষ্টা জরুরী। শুধু কথায় নয়, বাস্তবেও আক্ষরিক অর্থে জঙ্গীমুক্ত হোক দেশ।
×