ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশকে তুলে ধরতে সভার আয়োজন করুন॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৭:৫৩, ১৮ জানুয়ারি ২০১৭

বাংলাদেশকে তুলে ধরতে সভার আয়োজন করুন॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিশ্ব নেতৃবৃন্দ সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ৪৭তম বার্ষিক সভায় যোগ দিয়েছেন। সুইজারল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলীয় আল্পস অঞ্চলে গ্রাউবান্ডেনে পার্বত্য রিসোর্ট ডাভোসে চার দিনব্যাপী এ সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ এবং এর আঞ্চলিক অর্থনীতিকে তুলে ধরতে বাংলাদেশে একটি সভা আয়োজনে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম’র (ডব্লিউইএফ) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশে এ ধরনের সভা আয়োজনে প্রস্তুত রয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডব্লিউইএফের নির্বাহী চেয়ারম্যান প্রফেসর ক্লাউস সোয়াবের সঙ্গে বৈঠককালে এ কথা বলেন। খবর বাসসর। ডব্লিউইএফের ৪৭তম বার্ষিক সভার সাইড লাইনে মঙ্গলবার ডাভোসের কংগ্রেস সেন্টারে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেস সচিব মোঃ নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বলেন, শেখ হাসিনা ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বৈঠক চলাকালে বাংলাদেশে অধিক হারে বিনিয়োগে এগিয়ে আসার জন্য উদ্যোক্তাদের আহ্বান জানাতেও প্রফেসর ক্লাউসের প্রতি অনুরোধ জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিদেশী উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে দেশে নানারকম সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করেছি। তাদের সেই সুযোগটা গ্রহণ করা উচিত। এ প্রসঙ্গে শিল্পায়নের বিকাশ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তার সরকারের উদ্যোগে দেশে এক শ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতকে তার সরকার বেসরকারী খাতে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। বাংলাদেশে বিশ্ব বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ব্র্যান্ডিং করাটা খুব জরুরী বলে এ সময় প্রফেসর ক্লাউস উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করে এ সময় ক্লাউস বলেন, বাংলাদেশের কয়েকটি ক্ষেত্রে উন্নয়ন খুব বিস্ময়কর। বিশেষ করে বিশ্ব মন্দার মাঝেও ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন খুব বড় বিষয়। ডব্লিউইএফের ৪৭তম বার্ষিক সভায় অংশগ্রহণে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রফেসর ক্লাউস সোয়াবকে ধন্যবাদ জানান। প্রফেসর ক্লাউস বলেন, বাংলাদেশকে নিয়ে এখন অনেকেই ইচ্ছা পোষণ করেন এবং দেশটির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের বিষয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের অনেকেই আশাবাদী। আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এবং সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও জাতিসংঘ কার্যালয়ে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি শামীম আহসান এ সময় উপস্থিত ছিলেন। তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে তার সরকার দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই শিল্পে শ্রমিক অধিকার, কর্মস্থলের নিরাপত্তা ও পরিবেশগত মানসহ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার ব্যাপারে আমরা দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, মূল বেতন ৭৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্লোবাল ব্র্যান্ড এবং রিটেইলারদের সুপারিশের ভিত্তিতে তিন হাজার ৭৮০ কারখানার সমীক্ষা শেষ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার ডাভোসের কংগ্রেস সেন্টারে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ৪৭তম বার্ষিক সভার ‘শেপিং এ নিউ ওয়াটার ইকোনমি’ শীর্ষক এক কর্মশালায় প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। ‘ওয়ার্ল্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট’র প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান নির্বাহী এন্ড্রু স্টিয়ারের সঞ্চালনায় কর্মশালায় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে যোগদানকারী বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা অংশগ্রহণ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেকটি কারখানায় পেশাগত নিরাপত্তা কমিটি রয়েছে, যেখানে শ্রমিক ও কর্মচারীরা একসঙ্গে কাজ করছে। শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের ৩৮ কারখানার এলইইডি সনদপত্র রয়েছে। বিশ্বের ১০টি শীর্ষস্থানীয় পরিবেশবান্ধব কারখানার মধ্যে সাতটি বাংলাদেশে রয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, তৈরি পোশাক খাতে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী দূষিত পানি শতভাগ শোধন এবং পানি ব্যবহারে দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকার ‘২০৩০ ওয়াটার রিসোর্স গ্রুপ’ (ডব্লিউআরজি)- এর সঙ্গে কাজ করছে। পানি সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের প্যানেলের একজন সদস্য হিসেবে তিনি বলেন, ‘২০৩০ ডব্লিউআরজি’র মতো উদ্ভাবনী অবকাঠামোর ব্যাপারে তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পানি সম্পদের সঙ্কটের বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ২০০৮ সালে ‘২০৩০ ওয়াটার রিসোর্স গ্রুপ’ গঠন করা হয়। নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তার সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি সকলের জন্য নিরাপদ পানি এবং পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে। ডব্লিউইএফের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর যোগদান ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিশ্ব নেতৃবৃন্দ সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ৪৭তম বার্ষিক সভায় যোগ দিয়েছেন। সুইজারল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলীয় আল্পস অঞ্চলে গ্রাউবান্ডেনে পার্বত্য রিসোর্ট ডাভোসে চার দিনব্যাপী এ সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারের সভার প্রতিপাদ্য হচ্ছেÑ ‘প্রতিবেদনশীল এবং দায়িত্বশীল নেতৃত্ব’। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এ সভায় যোগ দিয়েছেন। ডব্লিউইএফ প্রতিষ্ঠার ৪৭ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম চীনের কোন প্রেসিডেন্ট এতে যোগ দিলেন। অন্যান্য সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভার প্রারম্ভিক প্লেনারি সেশনসহ অন্যান্য সেশনে অংশগ্রহণ করবেন। ডব্লিউইএফের নির্বাহী চেয়ারম্যান ক্লাউস সোয়াবের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই প্রথম বাংলাদেশের কোন নির্বাচিত নেতৃত্ব হিসেবে এই হাইপ্রোফাইল ফোরামে যোগদান করলেন। ডব্লিউইএফের ৪৭তম এই বার্ষিক সভায় সূচনা বক্তব্য দেন ডব্লিউইএফের নির্বাহী চেয়ারম্যান ক্লাউস সোয়াব। বুধবার অনুষ্ঠেয় মূল অধিবেশন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে সঙ্গে নিয়ে উদ্বোধন করবেন সুইজাইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট ডরিস লিউথার্ড। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভার ওয়াটার ইকোনমি, টেকসই উন্নয়ন, আঞ্চলিক সহযোগিতা, নারী নেতৃত্ব এবং তাদের কর্মসংস্থান বিষয়ক প্লেনারি সেশনে যোগ দেবেন। ফোরাম সভার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট ডরিস লিউথার্ডের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করেন।
×