ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ১৮ জানুয়ারি ২০১৭

উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে

ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০০৯ সালে আমেরিকার গ্রীন হাউজ গ্যাস নির্গমন হ্রাসের আহ্বান জানিয়ে একটি গণচিঠিতে স্বাক্ষর দিয়েছিলেন। ২০১২ সালেই তিনি আবার জলবায়ু পরিবর্তনকে চীনাদের তৈরি এক ভাঁওতা বলে আখ্যা দেন। এবারের নির্বাচনী প্রচারে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে নির্বাচিত হলে তিনি বৈশ্বিক উষ্ণায়ন মোকাবেলায় গত বছর প্যারিসে স্বাক্ষরিত আন্তর্জাতিক চুক্তি থেকে আমেরিকাকে সরিয়ে বলবেন। এই তো ক’দিন আগে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, প্যারিস চুক্তির ব্যাপারে তার খোলা মন রয়েছে এবং মানুষের ক্রিয়াকলাপ ও জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্যে ‘কিছু না কিছু যোগসূত্র’ আছে। এ ধরনের ঘন ঘন মত পরিবর্তন আশাবাদী ও বৈষম্যবাদী উভয়দের জন্যই স্বস্তিদায়ক। নৈরাশ্যবাদীরা এখনও মনে করে যে আমেরিকা প্যারিস চুক্তি অগ্রাহ্য করবে কিংবা তা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেবে অথবা ১৯৯২ সালের জাতিসংঘ কাঠামো পরিত্যাগ করবে। আশাবাদীরা মনে করে যে নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্পের জলবায়ু প্রশ্নে ভূমিকা যা-ই থাক না কেন, ক্ষমতায় বসার পর তার ভূমিকা ভিন্ন রকম হবে। তার ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম অব্যাহতভাবে চলতে থাকবে। শেষ পর্যন্ত কোনটি হবে এখনও বোঝা যাচ্ছে না। বাস্তব পরিস্থিতিটা অনেক বেশি জটিল। প্রথমত খারাপ সংবাদটাই ধরা যাক। প্যারিস চুক্তির প্রতি আমেরিকার অঙ্গীকারের প্রতি ট্রাম্প যদি মর্যাদাশীল হনওবা তথাপি চুক্তি বাস্তবায়নে তার প্রশাসনের খুব একটা সক্রিয় না হওয়ারই কথা। শব্দের ভোটারদের এক বিরাট অংশ জলবায়ু পরিবর্তনকে গাজাখুরি বলে উড়িয়ে দিয়ে থাকেন। তাদের মতে জীবাশ্ম জ্বালানিই হলো সমৃদ্ধি ও মুক্তির প্রতীক। যারা জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর খড়গহস্ত হতে চান তারাই জলবায়ু পরিবর্তনের ধুয়া তুলেছেন বলে তারা মনে করেন। গত ২১ নবেম্বর ট্রাম্প অঙ্গীকার করেছেন যে তার প্রশাসনের প্রথম দিনটিতেই তিনি আমেকিরার জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদনের ওপর বিধিনিষেধ তুলে দেবেন। কারণ এই বিধিনিষেধের জন্য অনেকে চাকরি হারিয়েছে। ট্রাম্প যে বিষয়টা হিসাবেই নিতে চান না তা হলো আমেরিকার মানব সৃষ্ট গ্রীন হাউজ গ্যাস নির্গমনের জন্য এই জীবাশ্ম জ্বালানিই দায়ী। ট্রাম্প প্রশাসন প্রধান যে ব্যবহারিক উপায়ে প্যারিস চুমিকে দুর্বল করে দিতে পারে তা হলো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় অন্যান্য দেশকে সাহায্য করার জন্য আমেরিকার বিশাল অঙ্কের অর্থ পরিশোধ করার অঙ্গীকার এড়িয়ে যাওয়া এবং এইভাবে প্রকারান্তরে সরে আসা। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন মোকাবেলার গুরুভারটা গরিব দেশগুলোর তুলনায় ধনী দেশগুলোতে কম অনুভূত হয়। কারণ ধনী দেশগুলোতে জ্বালানির চাহিদা স্থির এবং জ্বালানি দক্ষতা বাড়ছে। অন্যদিকে জীবাশ্ম জ্বালানি যে সস্তা বিদ্যুত শক্তি যোগাতে পারে তা থেকে গরিব দেশগুলোর শত শত কোটি মানুষ এখনও বঞ্চিত। আমেরিকা ও অন্যান্য ধনী দেশের প্রতিশ্রুতি আছে যে তারা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় গরিব দেশগুলোকে বছরে ১০ হাজার কোটি ডলার দেবে। এখন আমেরিকা সেই প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসলে এই দেশগুলো মুশকিলে পড়বে। এমনকি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার কর্মকা-ে অর্থায়নের জন্য যেসব বেসরকারী বিনিয়োগকারী বিপুল অঙ্কের নগদ অর্থ হাতে নিয়ে বসে আছে তাদেরও অবস্থা হবে বেগতিক। গোটা ব্যাপারটা উদ্বেগজনক হলেও দূষণমুক্ত ভবিষ্যতের পথটা আমেরিকা তথা বিশ্বের জন্য এখনও উন্মুক্ত রয়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানি যা অর্জন করতে পারে বলে দাবি করেছেন ট্রাম্প তারও একটা সীমা আছে। ট্রাম্প আশা করছেন যে ফেডারেল সরকারের জমি থেকে ফ্রাকিং পদ্ধতিতে ট্রিলিয়নকে ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের তেল ও গ্যাস তোলা যাবে। কিন্তু ব্যাপারটা লাভজনক না হলে সেই তেল ও গ্যাস উত্তোলনে কেউ কূপ খনন করতে যাবে না। আর ব্যাপারটা লাভজনক হতে গেলে তেলের দাম এখনকার চেয়ে যথেষ্ট বেশি হতে হবে। সে সম্ভাবনা আপাতত দেখা যাচ্ছে না। নয়া প্রশাসন যদি প্যারিস অঙ্গীকার পরিত্যাগ করে তার পরও ক্যালিফোর্নিয়ার মতো আমেরিকার কিছু কিছু রাজ্য তাদের নিজস্ব বিশুদ্ধ জ্বালানি নীতি অনুসরণ করে চলবে যা অন্যান্য রাজ্যকেও অনুপ্রাণিত করবে। আমেরিকার নেতৃত্ব না থাকলেই যে অন্যান্য দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হোঁচট খাবে তা মনে করার কারণ নেই। নিজস্ব স্বার্থই তাদের সেপথে চালিত করবে। যেমন চীন তার নগরগুলোর বায়ু দূষণ সমস্যাকে জলবায়ু পরিবর্তন সমস্যার মতো সমান গুরুত্ব দিয়ে মোকাবেলা করছে। কারণ দেখা গেছে যে বায়ু দূষণের কারণে চীনে প্রতিবছর ১৬ লাখ লোক মারা যাচ্ছে। তাছাড়া বাণিজ্যিক স্বার্থ ও অন্যান্য দেশকে কার্বন হ্রাসের পথে ঠেলে দিবে। বিশুদ্ধ জ্বালানির দাম কমছে। বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারির দাম ২০০৮ এর পর থেকে ৮০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। উত্তর ইউরোপে উপকূলীয় বায়ুশক্তির খরচ তিন বছরে অর্ধেকেরও বেশি। বিদ্যুতের আকর্ষণীয় সস্তা উৎস হিসেবে সৌরশক্তি গ্যাস ও কয়লাকে প্রায় ধরে ফেলেছে। এ সবই হলো জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আশাব্যঞ্জক দিক। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×