ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

তুরস্ক আবার রক্তাক্ত

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১৮ জানুয়ারি ২০১৭

তুরস্ক আবার রক্তাক্ত

২০১৬ সালের বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলা ও হিংসাত্মক সামরিক অভ্যুত্থান টেন্ডার প্রেক্ষাপটে ইস্তাম্বুলের অধিবাসীরা বিস্ফোরণের আওয়াজ অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল। তাদের এই অভিজ্ঞতার মধ্যেই এবারের নববর্ষের শুরুতে এক নারকীয় সন্ত্রাসী হামলায় ৩৯ জন নিহত হয়। ঘড়ির কাঁটায় তখন নতুন বছর শুরু হয়ে এক ঘণ্টা পরে হয়ে গেছে কি যায়নি এমন সমগ্র নগরীর সুপরিচিত মৈশক্লাব রেইনার কাছাকাছি কোথাও বিস্ফোরণের আওয়াজে কেঁপে উঠল। কেউ কেউ ডাবল এ হলো নববর্ষের আতশবাজির উৎসব। কিন্তু না, উপরের রাতের আকাশে আতশবাজির কোন লক্ষণ দেখা গেল না। উল্টো মাটির বুকে তখন নারকীয় হত্যাযজ্ঞ ঘটে চলেছিল। বিস্ফোরণের পর নিঃসঙ্গ এক ঘাতক অকুস্থলে গুলির পর গুলি চালিয়ে হত্যা করছিল। যখন তাঁর গুলিবর্ষণ থামল ততক্ষণে কমপক্ষে ৩৯টি লাশ ঝরে পড়েছে। এদের বেশিরভাগই বিদেশী। এছাড়াও আহত হয়েছে আরও কয়েক ডজন। হতাহতদের খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়েছিল। কেউ কেউ ফসফরাসের জলরাশিতে লাফিয়ে পড়ে প্রাণ বাঁচায়। ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত হামলাকারীকে ধরতে পারা যায়নি। তবে আইএস এই ঘটনার দায়দায়িত্ব স্বীকার করেছে। এই প্রথম আইএস তুরস্কের অভ্যন্তরে অসামরিক ব্যক্তিদের ওপর হামলার কথা স্বীকার করল। গত দেড় বছরে তুরস্কে বেশকিছু হামলার জন্য সরকার আইএসকে দায়ী করলেও সংগঠনটি আনুষ্ঠানিকভাবে কোন হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেনি। তবে এবারের ঘটনার দায়দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে বুঝা যাচ্ছে যে আইএস চলতি বছর তুরস্ককে হামলার একটা প্রধান টার্গেটে পরিণত করতে চায়। নববর্ষের রাতে ইস্তাম্বুলে গণগুলিবর্ষণের ঘটনার মধ্য দিয়ে তুরস্কের সংকট আরও বৃদ্ধি পেল। ইতোমধ্যে দেশটিতে বেশকিছু সন্ত্রাসী হামলা ও এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে মধ্যপ্রাচ্য স্থিতিশীলতার পূর্ণ হিসাবে তুরস্কের ভাবমূর্তি তছনছ হয়ে গেছে। নববর্ষের হামলার ১১দিন আগে এক পুলিশ অফিসার আঙ্কারায় এক অনুষ্ঠানে রুশ রাষ্ট্রদূতকে গুলি করে হত্যা করে। তার আগে ১০ ডিসেম্বর ইস্তাম্বুলের প্রধান ফুটবল স্টেডিয়ামের বাইরে দুই দুটি বোমাবাজির ঘটনায় ৪০ জনেরও বেশি নিহত হয়। তবে সর্বশেষ হামলার লক্ষ্য ছিল ইস্তাম্বুলের কসমোপলিটানবাদের প্রাণকেন্দ্র সেখানে যারা নিহত হয়েছে তারা কয়েকডজন দেশ থেকে আগত এদের মধ্যে যেমন ছিল ইসরাইলের এক কিশোর ফিলিস্তিনী তেমনি ছিল বলিউডের এক চলচিত্র প্রয়োজক। আইএস ইতোমধ্যে ইরাক ও সিরিয়ায় তার ভূখন্ড হারিয়েছে। স্বভাবতই এরা প্রচন্ড চাপের মধ্যে আছে তাই তারা তুরস্কে নিজেদের ফায়দা লোটার জন্য এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। ২০১৫ সালে আইএস’য়ের পরিচালিত হামলার কারনে কুর্দী জঙ্গী ও তুর্কী সশস্ত্রবাহিনীর মধ্যে নতুন করে যুদ্ধের আগুন জ্বলে উঠেছিল। হামলার দ্বিতীয় জোমারে তুরস্কের পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বাস্তুদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। এবার তৃতীয় দফা হামলার মধ্য দিয়ে তুরস্কের ইসলামপন্থী ও সেকুলার শক্তির মধ্যে উত্তেজনার সঞ্চার হয়েছে। সেকুলার তুর্কীদের মধ্যে অনেকেই দেখে উগ্রবাদের বিস্তারের জন্য ইসলামপন্থী সরকারকে দায়ী করে থাকেন। সূত্র টাইম
×