ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আকিল জামান ইনু

ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন রাজনীতির নতুন মেরুকরণ

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১৮ জানুয়ারি ২০১৭

ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন রাজনীতির নতুন মেরুকরণ

ডোনাল্ড ট্রাম্প নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাকে মূল্যায়নের সময় এখনও আসেনি। কিন্তু সকালের সূর্য যদি দিনের ইঙ্গিত হয় তবে এ কথা বলাই যায়, নতুন যুগে প্রবেশ করছে মার্কিন রাজনীতি। ট্রাম্প হিসাব বদলে দেয়া মানুষ। নিজের নিয়মে চলেন। যেই প্রাক-বাছাই পর্ব থেকে নিজের নিয়মে চলে পাল্টে দিয়েছেন রাজনীতির সব হিসাব। ঝানু রাজনৈতিক বিশ্লেষক আর জরিপ সংস্থাগুলো অবাক চোখে তাকিয়ে দেখেছে রাজনীতিতে এক নবাগতের সব হিসাব উল্টে দেয়া। তার প্রতিষ্ঠা প্রচলিত ধারার গণমাধ্যমে। অথচ নির্বাচনপূর্ব বিরোধে জড়িয়েছেন প্রচলিত ধারার গণমাধ্যমের সঙ্গে গলা খুলে। এখনও তাকে গণমাধ্যম বান্ধব বলার উপায় নেই। প্রেসের সামনে উপস্থিতিতে তার অনীহা এখনও বিদ্যমান। তবে যখন আসেন ঝড় হয়েই আসেন। গত জুলাই থেকেই তিনি এড়িয়ে চলছেন প্রেস কনফারেন্স। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে ১১ জানুয়ারি প্রথম এলেন অফিসিয়াল কোন প্রেস কনফারেন্সে এবং যথারীতি ঝড় তুলেছেন বিভিন্ন ইস্যুতে। প্রেসিডেন্ট সুলভ কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও কোন লিখিত নোট ছাড়াই তিনি এক হাত নিয়েছেন অনেক মহলকেই। এক কথায় তিনি ধুয়ে দিয়েছেন ওষুধ শিল্প সংস্থাগুলোকে। আবারও হুমকির মুখে মেক্সিকো। নিজের বাণিজ্যিক মেধা নিয়ে ছিলেন উচ্চকিত। নিদারুণ অবজ্ঞায় পানি ঢেলে দিয়েছেন তার ও তার নির্বাচনকালীন সহযোগীদের ওপর প্রকাশিত রাশিয়ান গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে। কিন্তু এর সবই ছিল কেবল ভূমিকা। নানা বক্তব্যের মধ্য থেকে প্রধান হয়ে উঠেছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিয়ে তার অসহিষ্ণু মন্তব্য। রাজনীতির প-িতেরা বলছেন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বিষয়ে তার এই মনোভাব হুমকির মুখে ফেলবে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা। সম্পর্কের গ্রাফ পূর্ব থেকেই নিম্নগামী। বিশেষ করে নির্বাচন পূর্ব গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যখন জানায় রাশিয়ান হ্যাকারদের ভূমিকা তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটনের ইমেজকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। বেশিরভাগ গোয়েন্দা সংস্থার মতে রাশিয়ার এই ভূমিকা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত যার লক্ষ্য ছিল ট্রাম্পের বিজয় নিশ্চিত করা। এ বিষয়ে ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া ছিল ইটের জবাবে পাথর। যিনি সরাসরি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে মনে করিয়ে দেন ২০০৩-এ ইরাকে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্রের বিষয়ে তাদের ব্যর্থতার কথা। আর সম্প্রতি ট্রাম্পকে দেয়া গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এক রিপোর্ট ফাঁসকে কেন্দ্র করে বিষয়টি কুৎসিত রূপ নেয়। এক টুইটে ট্রাম্প বিষয়টিকে তুলনা করেন ‘নাজি জার্মানিতে বসবাসের সঙ্গে।’ প্রেস কনফারেন্সে তিনি তথ্য ফাঁসের জন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে অভিযুক্ত করেন। তাদের আচরণবিধি ও আনুগত্য নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। সম্ভবত ডোনাল্ড ট্রাম্পই প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি শুরু থেকেই এ ধরনের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়লেন। ট্রাম্প, বারাক ওবামার রাশিয়া-চীন প্রশ্নে ধীরে চলার নীতির বিরোধিতা করে আসছেন। এ ছাড়াও স্পাই ক্যাচিং কার্যক্রমে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ভূমিকায় মোটেও সন্তুষ্ট নন। এ রকম হাজারো অভিযোগ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতি তার অবিশ্বাসকেই প্রকাশ করছে। যেখানে সম্পর্কের মূলমন্ত্রই হলো বিশ্বস্ততা। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মূল কাজ মার্কিন প্রেসিডেন্টকে যুক্তরাষ্ট্রের সামনে সম্ভাবনার নতুন ক্ষেত্রগুলোর চিত্র তুলে ধরা সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য যে কোন হুমকির বিষয়ে সতর্ক করা। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যোগ্যতায় সারা বিশ্বে অপ্রতিদ্বন্দ্বী বিবেচিত হলেও তাদের কাজ তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে প্রেসিডেন্টের সামনে চিত্র তুলে ধরা। কোন নিশ্চিয়তা দেয়া নয়। আর এটি করতে গিয়ে তাদের অনেক সময় দুঃসংবাদও জানাতে হয়। তারা ঝুঁকির কথা বলেন। তার পরও মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাদের গুরুত্বের সঙ্গে নেন। কারণ এই তথ্য যুক্তরাষ্ট্রকে আগামী দিনের মোকাবেলায় প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে যে বার্তাটি দিয়েছেন তার অন্তর্নিহিত অর্থ এই যে, তিনি কোন দুঃসংবাদ শোনাতে আগ্রহী নন। তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন প্রতিদিনের প্রেসিডেন্টশিয়েল ব্রিফিং নিয়েও তেমন আগ্রহী নন। তার ভাষায় এটি তেমন কোন গুরুত্ব রাখে না। তার মতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর রয়েছে নিজস্ব রাজনৈতিক এজেন্ডা তার কর্মীরা অনেক বেশি রাজনীতি প্রভাবিত। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর উদ্দেশ্য নিয়ে এ ধরনের প্রশ্ন উত্থাপন নিশ্চিতভাবেই জনগণের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। এডওয়ার্ড স্নোডেনের কারণে এই গ্রহণযোগ্যতা এমনিতেই প্রশ্নের মুখে। আর কোন প্রতিষ্ঠানের পক্ষেই এই যুগে ন্যূনতম গ্রহণযোগ্যতা ব্যতীত তাদের দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন সম্ভব নয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চান তাকে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। শুরুটা তিনি করেছেন রাশিয়ার হ্যাকিংয়ের সমালোচনায়। ৯০ দিনের মধ্যে হ্যাকিং বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন তার কাছে উপস্থাপন করা হবে। প্রশ্ন হলো গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতি তার বিরূপ মনোভাব নিয়ে। তিনি তাদের কতটুকু এবং কিভাবে বিবেচনায় নেবেন। দীর্ঘদিন ধরে স্থাপিত যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অফিস আর গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বিশ্বস্ততার সম্পর্কে কি ফাটল ধরাবেন ট্রাম্প? না এ বিষয়েও তার আছে নিজস্ব ভাবনা? উত্তর পরিষ্কার নয় এখনও। তবে এ বিষয়ে প্রচলিত নিয়মের বাইরে তার যে কোন পদক্ষেপ নিশ্চিতভাবেই প্রভাবিত করবে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ভূমিকা এমন ধারণাই করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেজ্ঞরা। প্রচলিত ধারার গণমাধ্যম, বিতর্কিত মন্ত্রিপরিষদ, তার বিজয়ে বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্্র, বাণিজ্য, রাজনীতি থেকে শুরু করে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি মার্কিন রাজনীতিতে এক নতুন মেরুকরণের বার্তাই দিচ্ছে। সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×