ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ওয়েলিংটন টেস্টে বাংলাদেশ;###;শ্রাবণী আক্তার সান

সাকিব-মুশফিকের দ্যুতিময় ব্যাটিংই বড় অর্জন

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১৮ জানুয়ারি ২০১৭

সাকিব-মুশফিকের দ্যুতিময় ব্যাটিংই বড় অর্জন

দারুণ ইঙ্গিত দিয়েও শেষ পর্যন্ত ওয়েলিংটন টেস্টে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যটিং ব্যর্থতাই টাইগারদের ডুবিয়েছে। তবে প্রায় ছয় শ’ রানে (৫৯৫/৮) প্রথম ইনিংস ডিক্লেয়ার, সাকিব আল-হাসানের ডাবল সেঞ্চুরি (২১৭), অধিনায়ক মুশফিকের দেড় শ’ (১৫৯), দু’জনের রেকর্ড পার্টনারশিপের জন্য বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমী মানুষ টেস্টটির কথা অনেক দিন মনে রাখবেন। শেষ দিনে ম্যাচ হার, চতুর্থ দিনের বিপর্যয় বাদ দিলে প্রথম দুই দিনের গল্পটা ছিল বেলই সাকিব-মুশফিক, তামিম ইকবাল ও মুমিনুল হকদের ব্যাটিং-দ্যুতিতে ভাস্বর। সাকিব ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন একদিনেই, প্রথম দিন শেষে ৫ রানে অপরাজিত ছিলেন, অর্থাৎ ২৭১-এর মধ্যে কেবল দ্বিতীয় দিনেই করেছেন ২১২! যা বাংলাদেশের আর কোন ব্যাটসম্যানই পারেননি, কারণ দেশের পক্ষে এটি সবেমাত্র তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরি। আর অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম আউট হন ১৫৯ রানে। দু-জনের মধ্যে পঞ্চম উইকেটে ৩৫৯ রানের যে জুটি হয়েছে সেটা অনেক রেকর্ডের জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে যে কোন উইকেট জুটিতে এটিই সর্বাধিক রান। শুধু নিউজিল্যান্ড-বাংলাদেশ সিরিজের ক্ষেত্রে দুই দলের খেলা টেস্টে সেরা জুটিরও রেকর্ড এটি। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এটি পঞ্চম উইকেটের চতুর্থ সেরা জুটির মর্যাদা দখল করেছে। আর নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে পঞ্চম উইকেটে এত রানের জুটি গড়ার রেকর্ডও নেই অন্য কোন দলের। কিউইদের বিরুদ্ধে যে কোন উইকেট জুটির দিক থেকেও এটি চার নম্বরে। মুমিনুল দ্বিতীয় দিনের প্রথমেই সাজঘরে ফেরার পর শঙ্কা মাথাচাড়া দিয়েছিল হয়ত বিপর্যয়টা ঘনীভূত হবে। কিন্তু নিউজিল্যান্ড বোলারদের ওপর পুরোপুরি ছড়ি ঘুরালেন এরপর সাকিব-মুশফিক। তাদের সাবলীল ও স্বাচ্ছন্দ্য ব্যাটিং বিস্ময়ের জন্ম দিল। দু’জনই হাঁকালেন সেঞ্চুরি। সাকিব তো শতক পেরিয়ে পেয়ে গেলেন ক্যারিয়ারের প্রথম আর বাংলাদেশের পক্ষে তৃতীয় টেস্ট ডাবল সেঞ্চুরি। তারা পঞ্চম উইকেটে যে ৩৫৯ রানের জুটি হলো সেটাকে ভেঙ্গে ফেলেন পেসার ট্রেন্ট বোল্ট। আরেকটি ডাবল সেঞ্চুরির দিকে এগোতে থাকা মুশফিক দিনের প্রায় শেষভাগে একমাত্র ভুলটা করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন। তখনও সাকিব ডাবল থেকে ১৪ রান দূরে। সারাদিনের জুটির সঙ্গী মুশফিককে হারিয়েও বিচলিত হননি সাকিব। পেয়ে গেছেন ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি। টেস্টের ইতিহাসে ম্যাচের একদিনেই ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানোর রেকর্ড আছে ৪১ জনের। তার মধ্যে ঠাঁই করে নেন সাকিবও। অনেকটাই ধীরস্থির খেলা মুশফিক ২৬০ বলে ২৩ চার ও ১ ছক্কায় ১৫৯ রান করেন। আর সাকিব থামেন মাত্র ২৭৬ বলে ৩১ চারে ২১৭ রান করে। ৩৫৯ রানের বিশাল জুটি ভেঙ্গে যাওয়ার পরও তাই বিশাল এক সংগ্রহে পৌঁছে বাংলাদেশ। এমন কীর্তির পেছনে ওই ৩৫৯ রানের পঞ্চম উইকেট জুটি। এর আগে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে পঞ্চম উইকেটে ১৯৭৬ সালের অক্টোবরে লাহোরে জাভেদ মিয়াদাদ ও আসিফ ইকবালের ২৮১ ছিল আগের সর্বোচ্চ। পঞ্চম উইকেটে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের আগের সেরা জুটিতেও ছিলেন মুশফিক। ২০০৮ সালে চট্টগ্রামে তার সঙ্গে ১৪৪ রানের জুটি গড়েছিলেন মেহরাব হোসেন জুনিয়র। তবে এটি বাংলাদেশের পক্ষে যে কোন উইকেটেরই সেরা জুটির রেকর্ড। তামিম ইকবাল-ইমরুল কায়েস ৩১২ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েছিলেন ২০১৫ সালে খুলনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে। সেটাকেও টপকে গেছেন দু’জন। আর টেস্ট ইতিহাসে সাকিব-মুশফিকের জুটি পঞ্চম উইকেটে চতুর্থ সর্বোচ্চ। ৪০৫ রান নিয়ে ১৯৪৬ সালের ডিসেম্বর থেকে রেকর্ডটা দখলে রেখেছেন অস্ট্রেলিয়ার ডন ব্র্যাডম্যান ও সিডনি বার্নস। নিউজিল্যান্ডে এটাই বাংলাদেশের সেরা জুটি। এখানে তাদের আগের সেরা ছিল ২০০৮ সালে ডানেডিনে জুনায়েদ সিদ্দিকের সঙ্গে তামিমের ১৬১ রান। ওয়েলিংটনে পঞ্চম উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি ছিল মাত্র ২৬ রানের। বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড সিরিজেও দুই দল মিলিয়ে সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়েন সাকিব-মুশফিক। পেছনে ফেলেন মার্টিন গাপটিল ও ব্রেন্ডন ম্যাককুলামকে। নিউজিল্যান্ডের এ দুই ব্যাটসম্যান ২০১০ সালে হ্যামিল্টনে ষষ্ঠ উইকেটে গড়েছিলেন ৩৩৯ রানের জুটি। রেকর্ড হয়েছে নিউজিল্যান্ডের মাটিতেও। পঞ্চম উইকেটে নিউজিল্যান্ডে সর্বোচ্চ রানের জুটি ছিল ১৯৯৪ সালে এই মাঠেই ইনজামাম-উল-হক ও সেলিম মালিকের ২৫৮। তার চেয়ে ১০১ রান বেশি করেছেন সাকিব-মুশফিক। যে কোন উইকেটে এটি বাংলাদেশের পক্ষে সেরা জুটি। এর আগে পঞ্চম উইকেটে মুশফিক ও মোহাম্মদ আশরাফুল ২০১৩ সালে গলে করেছিলেন ২৬৭ রান। সেটাই ছিল সেরা। আরেকটি মাইলফলক ছুঁয়েছেন সাকিব-মুশফিক। তামিম-ইমরুলের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় জুটি হিসেবে টেস্টে দুই হাজার রানের মাইলফলক অতিক্রম করেন সাকিব-মুশফিক জুটি। টেস্টে তিনটি শতক, ১৪টি অর্ধশতকসহ তাদের রান ২ হাজার ১৭। তামিম-ইমরুল জুটির রান ২ হাজার ২২৯ (পরিসংখ্যান প্রথম ইনিংস পর্যন্ত)। মুশফিকের কথা আলাদা করে বলতে হবে। আঙুলের চোট নিয়েই প্রথম ইনিংসে দেড় শ’র ওপরে রান করেছেন। নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের সময় আর কিপিং করতে পারেনি বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ক। পরিবর্তে উইকেটের পেছনে ছিলেন ইমরুল কায়েস। দলের ভরাডুবির মাঝে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামেন মুশফিক। কিন্তু দুর্ভাগ্য পিছু ছাড়েনি। এবার প্রতিপক্ষ পেসারের বল তার হেলমেটের পেছনে লাগলে ১৩ রান করে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন! সরাসরি হাসপাতালে যেতে হয় তাকে। পরে অবশ্য জানা যায় অবস্থা গুরুতর কিছু নয়। মুশফিক-ইমরুলদের এই ইনজুরি বাংলাদেশকে বেশ ভুগিয়েছে। প্রতিপক্ষ অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনও সেটি বলেছেন, ‘ওদের দুর্ভাগ্যই বলতে হবে। একে তো ওয়েলিংটনের বিরুপ কন্ডিশন। তার ওপর মুশফিক একাধিকবার আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। ইমরুলের অবস্থাও তাই। এরপরও বাংলাদেশ যেভাবে খেলেছে তাদের প্রশংসা করতেই হয়। ম্যাচটিতে প্রমান হয় তাদের ক্রিকেট অনেদূর এগিয়েছে।’
×