ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

যেভাবে বদলে গেলেন কোহলি

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৮ জানুয়ারি ২০১৭

যেভাবে বদলে গেলেন কোহলি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘দ্য রান মেশিন’- ক্রিকেটে এটা এখন বিরাট কোহলির ট্রেন্ড বিশেষণ। টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি২০, ব্যাট হাতে রানের ফল্গুধারা বইয়ে দিচ্ছেন। চলতি ইংল্যান্ড সিরিজের প্রথম ওয়ানডেটি ছিল তার তিন ভার্সনে পাওয়া নেতৃত্বের প্রথম ম্যাচ। পুনেতে সেদিন সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে রান টপকে জয়ে অবদান রাখার ক্ষেত্রে গ্রেট শচীন টেন্ডুলকরকেও ছাড়িয়ে গেছেন। অথচ মাত্র আড়াই বছর আগের কথা, ২০১৪ সালের জুলাই-আগস্টে ইংল্যান্ড সফরে ১০ ইনিংসে করেছিলেন ১৩৪ রান, গড় ১৩.৪০। একটা হাফ সেঞ্চুরিও ছিল না। ওই বছরই ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়া সফরে ঝলসে উঠলেন, ৮৬.৫০ গড়ে করলেন ৬৯২ রান। ৮ ইনিংসে সেঞ্চুরি ৪ ও হাফ সেঞ্চুরি ১টি। দুই সফরের মাঝে হঠাৎ করে ইন্ডিয়ান উইলোবাজ কিভাবে বদলে গিয়েছিলেন? সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক নাসের হুসেইনকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে সেই রহস্য জানিয়েছেন কোহলি। স্রেফ মানসিকতা আর ব্যাট হাতে স্ট্যান্সে পরিবর্তন এনে এই সাফল্য। পরের গল্পটা তো সবার জানা। ঘরোয়া আইপিএল অথবা আন্তর্জাতিক অঙ্গন, প্রতিটি ভার্সনে রানের বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন। গড়ছেন একের পর এক রেকর্ড। কোহলি বলেন, ‘সেবার ইংল্যান্ডে যাওয়ার আগে নিজের ওপর অনেক বেশি চাপ দিয়ে ফেলেছিলাম যে আমাকে সেখানে রান করতেই হবে। জানি না কেন উপমহাদেশের খেলোয়াড়দের সামনে সবসময় শর্ত জুড়ে দেয়া হয় নির্দিষ্ট দেশগুলোতে পারফর্ম করলেই তবে আপনি ভাল খেলোয়াড়, না হলে নয়। আমি নিজেই অবশ্য ভাল করার জন্য মরিয়া হয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে শুরুতে ভাল করতে না পারলে মানসিকভাবে আপনি আরও নেতিয়ে পড়বেন।’ ক’দিন পরে অস্ট্রেলিয়া সফরে তাই নির্ভার হয়ে খেলার জন্য মনস্থির করেন, ‘দেখবেন, টেকনিক ভাল নয় এমন অনেকেই ক্রিকেটে ভাল করছে কেবল ইতিবাচক মানসিকতার কারণে। আমার সমস্যা যেটা ছিল, আমি ধরে নিয়েছিলাম ওরা বেশি ইনসুইঙ্গার দেবে, ফলে আমার পেছনের দিকটা বেশি সামনে চলে এসেছিল। সবসময়ই ইনসুইঙ্গারের অপেক্ষায় ছিলাম বলে শরীর আউটসুইং খেলার মতো অবস্থায় ছিল না।’ ভুলটার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কোহলি যোগ করেন, ‘সাধারণত আমি মাঝের স্টাম্পে দাঁড়াই। দেখলাম, আমার পায়ের পাতা পয়েন্টের দিকে না গিয়ে কাভার পয়েন্টের দিকে যাচ্ছে। আর পেছনের দিকটা আরও বেশি উন্মুক্ত হচ্ছে। বলটা বেশি দেখতে চাওয়ার জন্যই এমনটা হচ্ছিল। এ কারণে অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলে ভুগছিলাম।’ মানসিকতা ও স্টান্সে পরিবর্তন আনতে অবশ্য তাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছিল, ‘এখন এই পরিবর্তনটাকে মনে হচ্ছে সহজ। কিন্তু শুরুতে তা ছিল না। দিনে তিনঘণ্টার মতো করে রোজ ব্যাটিং করেছি। সপ্তাহের শেষে আমার হাতের পেশিতে টান পড়ে যেত। তবু টানা দশদিনের মতো এভাবেই ব্যাটিং করে আমার জন্যও তাই এটা ছিল অনুশীলন আর অনুশীলন। নিজের মাথার ভেতরে সব ঠিক করে নিতে চেয়েছিলাম।’ কোহলির বয়স মাত্র ২৮ বছর। ৫৩ টেস্টে ১৫ ও ১৭৭ ওয়ানডেতে হাঁকিয়েছেন ২৭ সেঞ্চুরি। পুনের ম্যাচ দিয়ে ওয়ানডেতে রান তাড়া করতে নেমে হাঁকিয়েছেন ১৭টি সেঞ্চুরি, যার মধ্যে ১৫টিতেই জিতেছে ভারত। এক্ষেত্রে গ্রেট শচীন টেন্ডুলকরকে ছাড়িয়ে গেছেন হালের এই রান মেশিন। শচীন তার ৫১ ওয়ানডে সেঞ্চুরির ১৭টি রান তাড়া করতে গিয়ে পেলেও তারমধ্যে ভারতের জয় ১৪টিতে। কোহলি নিজেকে কোথায় নিয়ে যান, সেটিই দেখার অপেক্ষা।
×