ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রাইস্টচার্চে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল;###;বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড

এবার দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের মিশন

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৮ জানুয়ারি ২০১৭

এবার দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের মিশন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ক্রাইস্টচার্চে খেলা দিয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সিরিজের মিশন শুরু হয়েছিল। সেই ক্রাইস্টচার্চেই শেষ হচ্ছে বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড সফর। এবার দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের মিশনে নামবে বাংলাদেশ। এ ম্যাচটি নিউজিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশ দলের শেষ ম্যাচও হতে যাচ্ছে। শুক্রবার ক্রাইস্টচার্চের হাগলি ওভালে ভোর ৪টায় বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট ম্যাচটি শুরু হবে। এ স্টেডিয়ামেই প্রথম ওয়ানডে দিয়ে বাংলাদেশ দলের পুর্ণাঙ্গ সিরিজের মিশন শুরু হয়েছিল। ক্রাইস্টচার্চে শেষ খেলা। এজন্য মঙ্গলবার দুপুরেই বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা ক্রাইস্টচার্চে পৌঁছে গেছেন। আজ অনুশীলনেও নামবেন ক্রিকেটাররা। এখন পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের কোন জয় নেই। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এবারের সিরিজেতো টানা সাত ম্যাচ হেরেছে বাংলাদেশ দল। প্রস্তুতি ম্যাচ ধরলে হার হয়ে দাঁড়াচ্ছে আট ম্যাচে। এই আট ম্যাচের মধ্যে তিন ওয়ানডে ও তিন টি২০ এবং একটি প্রস্তুতি ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি বাংলাদেশ। জেতার খানিক সুযোগ তৈরি করা গেছে। কিন্তু সেটি মুহূর্তেই মিলিয়ে যায়। প্রস্তুতি ম্যাচ দিয়ে শুরু হয় নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এবার বাংলাদেশের মাঠে নামা। সেই ম্যাচ থেকে বাংলাদেশের হারেরও শুরু হয়। বৃষ্টি বিঘিœত প্রস্তুতি ম্যাচে ৩ উইকেটে হারে বাংলাদেশ। এরপর তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে ৭৭ রানে, দ্বিতীয়টিতে ৬৭ রানে ও তৃতীয় ওয়ানডেতে ৮ উইকেটে হারে বাংলাদেশ। ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজেও একই দশা হয়। প্রথম টি২০তে ৬ উইকেটে, দ্বিতীয় টি২০তে ৪৭ রানে ও তৃতীয় টি২০তে ২৭ রানে হেরে হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ। এ পর্যন্ত শুধু হারই হয় সঙ্গী। নির্ধারিত ওভারের সিরিজ শেষ হয়। শুরু হয় দীর্ঘপরিসরের খেলা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে খেলতে নামে বাংলাদেশ। নির্ধারিত ওভারের ম্যাচগুলোতে বাংলাদেশ দলের যে অবস্থা হয়, তাতে ধরেই নেয়া হয়েছিল, টেস্টে আরও খারাপ করবে বাংলাদেশ। অথচ টেস্টে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখায়। চতুর্থদিনের শেষ সেশনের আগ পর্যন্ততো দাপটেই খেলে বাংলাদেশ। ম্যাচের লাগামও টেনে ধরে রাখে। সাকিবের দ্বিশতক, মুশফিকের শতকে প্রথম ইনিংসে আবার এগিয়েও থাকে বাংলাদেশ। এমন নৈপুণ্য মিলে, টেস্ট ড্র অন্তত হবে; সেই আশায় সবাই বুক বাঁধে। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে যে ৫৯৫ রান করে, তাই প্রথম ইনিংসে অতিক্রম করতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। ৫৩৯ রান করতে পারে। ৫৬ রানে এগিয়ে থেকেই চতুর্থদিনের শেষ সেশনে খেলতে নামে বাংলাদেশ। এই সেশনেই যেন সব ‘ওলট-পালট’ হয়ে যেতে থাকে। ইমরুল কায়েস ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়েন। বাঁ উরুতে ব্যথা পেয়ে স্ট্রেচারে করে মাঠ থেকে হাসপাতালে যেতে হয় ইমরুলকে। যেন বাংলাদেশের বিপদও শুরু হয়ে যায়। এক এক করে ৬৬ রানে তিন উইকেটের পতন ঘটে যায়। প্রথম ইনিংসে শতক করার সময় আবারও ইনজুরিতে পড়েন মুশফিক। শরীর ও আঙ্গুলে বলের আঘাতে ভোগেন। ইমরুল ‘রিটায়ার্ড হার্ট’ হন। মুশফিক আগে থেকেই ইনজুরিতে। বোঝাই যাচ্ছিল, তামিম, মাহমুদুল্লাহ, মিরাজের আউটের পর হাল ধরতে হবে মুমিনুল, সাকিব, সাব্বিরকেই। বিশেষ করে সাকিবকেই লম্বা সময় ধরে খেলতে হবে। তা না হলে পঞ্চমদিনে হারের সম্ভাবনাই জেগে উঠবে। তাই হলো। সাকিব ব্যাট হাতে নেমেই এগিয়ে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে আউট হয়ে গেলেন। মুমিনুলও বেশিদূর এগিয়ে যেতে পারলেন না। সাব্বির ৫০ রানের ইনিংস খেলেন। কিন্তু লিড বেশি নেয়া গেল না। মুশফিক ব্যথা নিয়েই ব্যাট করতে নামেন। টিম সাউদির বাউন্সারে আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়েন। এ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে যেতে হয়। আর ব্যাট হাতে নামতে পারেননি। ইমরুল ব্যাট হাতে নামলেন। শেষ পর্যন্ত ৩৬ রানে অপরাজিতও থাকলেন। কিন্তু তাতে কাজ হলো না। ইনজুরি নিয়েই মুশফিক ব্যাট হাতে লড়াই করার চেষ্টা করলেন। পারলেন না। ইমরুলও চেষ্টার ত্রুটি করলেন না। কিন্তু যাদের বিশেষ করে সাকিবের টিকে থাকার দরকার ছিল, তিনিইতো রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফিরলেন। যেন বাংলাদেশও তখনই হারের ছবিও দেখতে পেল। শেষ পর্যন্ত হারলো। ২১৭ রানের টার্গেট ৩ উইকেট হারিয়েই অতিক্রম করে ফেলল নিউজিল্যান্ড। দাপট দেখিয়েও শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেটে হারল বাংলাদেশ। টেস্টের প্রথম ইনিংসে এত বিশাল রান করে হারের পর রেকর্ডে ঢুকল বাংলাদেশ। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৫৯৫ রান করেও হার দেখেছে। এরআগে এমন রেকর্ডের মালিক ছিল অস্ট্রেলিয়া। সর্বশেষ ১৮৯৪ সালে সর্বোচ্চ ৫৮৬ রান করেও ইংল্যান্ডের কাছে হার দেখতে হয়েছিল অসিদের। প্রায় ১২৩ বছর পর সেইরকম হলো। সেটি বাংলাদেশের হলো। এটি লজ্জার রেকর্ডই বটে। এমন হারের পর টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম বোলারদেরই দোষ দিয়েছেন। বলেছেন, ‘ব্যাটসম্যানরা যেভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন বোলাররা সেভাবে তা পারেননি। প্রথম ইনিংসে এত বড় রেকর্ড রান সংগ্রহের পরও এভাবে হেরে যাওয়াতে আমি বেশ হতাশ।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আমাদের কিছু চোট সমস্যা ছিল। কিন্তু বোলিংয়ের কারণে আমরা ম্যাচটা হেরেছি। বোলিং দিয়ে দুই পাশ থেকে যে চাপ সৃষ্টি করা দরকার ছিল আমরা তা পারিনি। আমাদের বোলিং অনভিজ্ঞ। ওরা এখনও শিখছে। আশাকরি ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে এরা আরও ভাল করবে।’ সহঅধিনায়ক তামিম ইকবাল আবার ম্যাচ হারের পর চোট আর ভুল শটকেই হারের জন্য দায়ী করেছেন। বলেছেন, ‘তার (সাকিবের) আরেকটু সতর্ক খেলা উচিত ছিল। টেস্টে সেশন বাই সেশন খেলা হয়। একটা সেশনে উইকেটে জুটি গড়তে পারাটা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একটি জুটি ভেঙ্গে গেলে নতুন আরেকজনকে ক্রিজে এসে সেট হতে সবকিছু আবার নতুন করে শুরু করতে হয়। জুটি গড়তে পারায় আমরা প্রথম ইনিংসে রেকর্ড রান করতে পেরেছি। দ্বিতীয় ইনিংসে আমাদের শুরুটাও ভাল হয়েছিল। কিন্তু ইমরুল ইনজুরিতে পড়াতেই সঙ্কটের শুরু। এরপর দুই-তিন বল খেলে আমি আউট হয়ে গেলাম। তখন মাত্র দিনের ৩২ বল বাকি। ওইভাবে তিন উইকেট না হারালে অন্য কিছু হতে পারতো।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘টেস্টের পঞ্চমদিনে এসে সাকিব আউট হয়ে গেল। মুশফিক চমৎকার শুরু করেছিল। কিন্তু সে ইনজুরিতে পড়ায় আবার জুটি ভাঙলো। এরপর সাব্বির ছাড়া আমাদের স্বীকৃত কোন ব্যাটসম্যান ছিল না। সব মিলিয়ে পুরো বিষয়টি হতাশার ছিল। এ অবস্থা থেকে দলকে বের করে আনতে আমাদের কাজ করতে হবে।’ ওয়ানডে ও টি২০ সিরিজ হারের চেয়ে প্রথম টেস্টে হারের দুঃস্মৃতিই যেন ক্রিকেটারদের বেশি পোড়াচ্ছে। হতাশা ঘিরে ধরছে। এ হতাশা এখন দূর করে ক্রাইস্টচার্চে দ্বিতীয় টেস্টে খেলতে নামতে হবে। বাংলাদেশের সামনে এখন নিউজিল্যান্ড সফরে দ্বিতীয় টেস্টের মিশনই আছে।
×