ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

বাঙালীর রাষ্ট্র নির্মাণের আখ্যান বহ্নি বিসর্জন ব-দ্বীপ

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৮ জানুয়ারি ২০১৭

বাঙালীর রাষ্ট্র নির্মাণের আখ্যান বহ্নি বিসর্জন ব-দ্বীপ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নাটকের গল্পের তিন অধ্যায়ে উঠে এসেছে বাঙালীর রাষ্ট্র নির্মাণের আখ্যান। ধরা দিয়েছে বিট্রিশ ঔপনিবেশিক আমল থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের খরস্রোতা সময়। বর্ণিত হয়েছে বাঙালীর লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের কথা। সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের নির্বাচিত তিনটি সৃষ্টিকর্মের সংশ্লেষে নির্মিত এ নাটকের শিরোনাম ‘বহ্নি বিসর্জন ব-দ্বীপ’। লেখকের ‘নূরলদীনের সারাজীবন’, ‘নিষিদ্ধ লোবান’ ও ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ অবলম্বনে প্রযোজনাটি মঞ্চে এনেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার এ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের ষষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থীরা। বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আহমেদুল কবির নির্দেশিত প্রযোজনাটির কারিগরি মঞ্চায়ন হয় মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটম-লে। একই মঞ্চে আজ বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় দর্শকদের জন্য মঞ্চস্থ হবে নাটকটি। প্রযোজনাটি প্রসঙ্গে নির্দেশক আহমেদুল কবির বলেন, বাঙালীর সংগ্রামের আবহমান ধারা এবং মুক্তিযুদ্ধের রক্তস্তানে অর্জিত বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের আখ্যান হচ্ছে বহ্নি বিসর্জন ব-দ্বীপ। এই নাট্য কেবল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার উদ্দেশই পূরণ করে না, এই শিক্ষার অন্তঃসলিলা প্রবাহে আছে বাংলাদেশ সত্ত্বার গঠনে শাসকগোষ্ঠীর নিষ্পেষণ, জনগণের আর্তনাদ ও আত্মবলিদান এবং দ্রোহের অগ্নি। নাটকটির বুনন ও বিন্যাসে প্রথমেই গৃহীত হয়েছে সৈয়দ হকের কাব্যনাটক নূরলদীনের সারাজীবন। বাংলা ১১৮৯ সনে ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠী ও এই ভূমির রক্তচোষা চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে সৃষ্ট ইংরেজদের এদেশীয় দোসর জমিদারদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে উত্তরবঙ্গের নিধুয়া পাথারে কৃষক বিদ্রোহের মৃত্যুঞ্জয়ী নেতা নূরলদীন লড়াইয়ের ডাক দিয়েছিলেনÑ‘জাগো বাহে কোনঠে সবায়’। সেই ডাকে নিষ্পেষণের শিকল ভেঙ্গে গর্জে উঠেছিল কৃষকরা। নিপীড়িতের লড়াকু সত্তার প্রতীকরূপে কৃষক চিত্রিত হয়েছে ‘লালকোরাস’ নামে। বাংলার ভূমির শস্য ও সৌন্দর্য শোষণকারী ইংরেজ ঔপনিবেশিক শোষকগোষ্ঠী ও তাদের বশংবদ জমিদার শ্রেণী রূপায়িত হয়েছে ‘নীলকোরাস’ নামে। লালকোরাস ও নীলকোরাসের দ্বন্দ্বের ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ায় বাংলার মানুষের মুক্তির স্বপ্নের রূপকার নূরলদীন লড়াকু চেতনার এক নির্ভুল ও অব্যর্থ প্রতীক হয়ে যেন এদেশের সাড়ে সাত শ’ নদীর প্রবাহে প্রবাহে বহমান। বাংলার ইতিহাসের এই রক্তপ্রপাত থেকে, বিদ্রোহের বহ্নিশিখায় দ্যুতিময় অতীতের জঠর ছিঁড়ে বিস্ফোরিত সংগ্রামী চৈতন্যের উত্তরণ সম্ভাবনায় তপ্ত ও উত্তুঙ্গ হয়ে ওঠে ১৯৭১ সাল। এই নাট্যের দ্বিতীয় বুননশীল উপাদান হলো এ সৈয়দ হকের উপন্যাস নিষিদ্ধ লোবান উপন্যাস। কাহিনীর জলেশ্বরী গ্রাম মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে রূপান্তরিত সমগ্র বাংলাদেশের দ্যোতনা হয়ে ওঠে। গল্পের বিলকিস যেন একাত্তরের সম্ভ্রম হারানো সাহসিকা সকল নারীর বিক্ষুব্ধ প্রতীক। সিরাজ নামের আড়ালে থাকা প্রদীপ যেন মুক্তিযুদ্ধে সকল ধর্মসম্প্রদায়ের ত্যাগ-তিতিক্ষার অনুপম চরিত্র। এভাবে ১১৮৯ বঙ্গাব্দ থেকে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ, নূরলদীনের সারাজীবন থেকে নিষিদ্ধ লোবানÑকালের ¯্রােতে ইতিহাসের এক যুগন্ধর বাঁকেÑস্বাধীনতার ঘ্রাণে আমাদের অস্তিত্ব ভরে যায়। একটি রাষ্ট্রিক পরিণতির সম্ভাবনায়, একটি জাতিগত আত্মপরিচয় নির্মাণের আসন্নতায় আমাদের যৌথ অস্তিত্ব পরিপ্লুত হয়ে যায়। এই নাট্যের তৃতীয় বুননশীল উপাদান হলো কাব্যনাটক পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের প্রাক্কালে পাকবাহিনীর দোসর মাতবর একদিকে পাক-ক্যাপ্টেনের কাছে নিজের কন্যাকে তুলে দেয়। আরেকদিকে গ্রামবাসীকে পাকবাহিনীর বিক্রম দিয়ে সুরক্ষার মিথ্যে প্রবোধ দেয়। গ্রামবাসী সেই দিন মাতবরের আঙিনায় সমবেত হয়। মাতবরের মেয়েও উন্মোচন করে শত্রুর কাছে আত্মবিক্রয়কারী পিতার মুখোশ। অবশেষে পাক হানাদার ক্যাপ্টেন দ্বারা ধর্ষিতা মেয়েটি আত্মোৎসর্গ করে আর মিথ্যা প্রবোধের লাঞ্ছনা ভেদ করে গ্রামবাসী ফুঁসে ওঠে। এই গ্রামবাসী, এই জনগণ শুনতে পায়Ñবীরবিক্রমে এগিয়ে আসতে থাকা যুদ্ধে জয়ী মুক্তিযোদ্ধাদের পায়ের আওয়াজ। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাগীব নাঈম, সাদিয়া মাহবুব সারা, কীর্তি বিজয়া, মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান রিপন, সজীব রানা, রফিকুল ইসলাম সবুজ, এহসানুল আবেদীন, আব্দুল্লাহ আল জাবির, তামান্না ইসলাম, মোঃ শামীম মিয়া, নাছুমা হক, মারিয়া খানম মিম, এসএম লাতিফুল খাবীর, রিয়াজ তারেক, নুসরাত জাহান এবং ১ম বর্ষ ২য় সেমিস্টারের শিক্ষার্থীবৃন্দ। বাংলাদেশ-ত্রিপুরা সাংস্কৃতিক উৎসব শুরু কাল ॥ মুক্তিযুদ্ধের সময় অকৃত্রিম বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের জনগণ। সেই ক্রান্তিলগ্নে এদেশের লাখো লাখো মানুষ পেয়েছিল ত্রিপুরার মানুষের ভালবাসা ও সহযোগিতা। এছাড়া দুই ভূখ-ের মানুষের মাঝে রয়েছে সাংস্কৃতিক সাদৃশ্য। তাদের সঙ্গে আমাদের সংস্কৃতিরও মিলটা অপূর্ব। বাংলাদেশ ও ত্রিপুরার সেই সাংস্কৃতিক বন্ধনকে আরও প্রসারিত করতে অনুষ্ঠিত হবে উৎসব। কাল বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকায় শুরু হবে ‘বাংলাদেশ-ত্রিপুরা সাংস্কৃতিক উৎসব ২০১৭’। ১৯ থেকে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নন্দনমঞ্চ, জাতীয় নাট্যশালা, পরীক্ষণ থিয়েটার হল, স্টুডিও থিয়েটার হল, সেমিনার রুম, চারুকলা গ্যালারি ও নন্দনমঞ্চে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ত্রিপুরা থেকে ৬০ সদস্যের সাংস্কৃতিক দল আজ বুধবার ঢাকা আসছে। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় শিল্পকলা একাডেমির নন্দনমঞ্চে এই উৎসবের উদ্বোধন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। মঙ্গলবার সকালে এই উৎসবের বিস্তারিত জানাতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয় রাজধানীর তোপখানা রোডের একটি হোটেলে। এতে উৎসবের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ-ত্রিপুরা সাংস্কৃতিক উৎসব পর্ষদের চেয়ারম্যান নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। এতে উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত প্রমুখ। আলোচনা করবেন ভূপাল সিনহা, মোজাহিদ রহমান, সেলিম শাহ ও অধ্যাপক শফি আহমেদ। একই দিন বিকেল সাড়ে পাঁচটায় জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সন্ধ্যা ৬টায় পরীক্ষণ থিয়েটার হলে ত্রিপুরার রুপম নাট্যগোষ্ঠী মঞ্চায়ন করবে ‘হারুন অল রশীদ’ শিরোনামের বাংলা নাটক। এটি পরিচালনা করেছেন কুমার শংকর পাল। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এখন থেকে প্রতিবছরই এই উৎসব আয়োজনের চেষ্টা থাকবে। আগামী বছরের আয়োজনটি হবে ত্রিপুরায়। সার্জে র‌্যাজ্যিকের প্রদর্শনী ‘লেডিস কাম ফ্লাইং’ ॥ খ্যাতিমান রাশিয়ান চিত্রশিল্পী সার্জে র‌্যাজ্যিক। মহাখালীর নিউ ডিওএইচএসের কসমস গ্যালারিতে শুরু হলো এই শিল্প প্রদর্শনী। লেডিস কাস ফ্লাইং শীর্ষক এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয় মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। প্রদর্শনী আয়োজনে সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশে রাশিয়ান ফেডারেশনের ঢাকার দূতাবাস। প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর। প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে মোট ২৮টি চিত্রকর্ম। চার দিনের এ প্রদর্শনী চলবে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে। বাংলাদেশ-চায়না গ্রুপ সিরামিক প্রদর্শনী ॥ মৃৎশিল্পের সৌন্দর্যে এখন দীপ্যমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ১ নং জয়নুল গ্যালারি। মঙ্গলবার থেকে এ প্রদর্শনালয়ে শুরু হলো বাংলাদেশ-চায়না গ্রুপ সিরামিক প্রদর্শনী। চারুকলা অনুষদের মৃৎশিল্প বিভাগের এ আয়োজনে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশ ও চীনের ১১ শিল্পী। মঙ্গলবার দুপুরে যৌথভাবে প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ও ডিবিএল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুর রহিম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চারুকলার ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন। সভাপতিত্ব করেন মৃৎশিল্প বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম শেখ। চার দিনের এই প্রদর্শনী চলবে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
×