ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দ্রুত ৭ খুনের বিচার হওয়ায় বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা বেড়েছে ॥ প্রধান বিচারপতি

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৮ জানুয়ারি ২০১৭

দ্রুত ৭ খুনের বিচার হওয়ায় বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা বেড়েছে ॥ প্রধান বিচারপতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, সুপ্রীমকোর্টের সময়োপযোগী হস্তক্ষেপের ফলে নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার অপরাধীদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করা হয়। অপরাধী যত বড়ই হোক না কেন সে দায় মুক্তি পাবে না। চাঞ্চল্যকর সাত খুনের মামলার প্রভাবশালী আসামি র‌্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা রোমহর্ষক হত্যাকা- ঘটিয়েছেন, যা সমগ্র জাতিকে স্তম্ভিত করেছে। স্বল্পতম সময়ের মধ্যে ওই মামলার বিচার নিষ্পত্তি করায় বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা আরও বেড়েছে। একইসঙ্গে তিনি বলেন, অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ সংক্রান্ত বিধিমালা গেজেটে প্রকাশের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে সামান্য বিষয়ে দ্বিমত থাকলেও আশা করছি অচিরেই তা দূরিভূত হবে। বিচারকরা স্বতন্ত্র আচরণ ও শৃঙ্খলা বিধিমালা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হলে বিচার বিভাগ পৃথককরণের উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হবে। প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের ২ বছর পূর্তিতে মঙ্গলবার বিকালে এক বাণীতে এসব কথা বলেন তিনি। প্রধান বিচারপতি তার বাণীতে বলেন, রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগের মধ্যে ভারসাম্য নীতির প্রতিফলন হচ্ছে মূল চেতনার অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিচার বিভাগের সীমার বাইরে গিয়ে অন্য বিভাগের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না। প্রত্যেক বিভাগকে দেশের প্রচলিত আইন ও সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে থেকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে অপরিহার্যভাবে সৃষ্ট শীতল সম্পর্ককে ইতিবাচক দৃষ্টিতে গ্রহণ করলে প্রত্যেক বিভাগের সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটবে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও সমগ্র জনগোষ্ঠীর প্রভূত কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। রাষ্ট্রের ক্রান্তিলগ্নে বিচার বিভাগের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত দেশে-বিদেশে নন্দিত হয়েছে। অধিকন্তু, গণতন্ত্র সুসংহত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বিচার বিভাগের স্বাধীন মতামত ও সিদ্ধান্ত প্রদান দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘আইনের নিরন্তর সংস্কার দ্রুত বিচার নিষ্পত্তির জন্য অপরিহার্য। সে লক্ষ্যে শত বছরের অধিক পুরনো দেওয়ানী ও ফৌজদারি কার্যবিধি, সাক্ষ্য আইন, সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, এনআই এ্যাক্ট একেবারেই সেকেলে। ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল, স্টেট এ্যাকুইজিশন এ্যান্ড টেনান্সি আইন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এবং অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩-এ অনেক ত্রুটি রয়েছে। ওই আইনগুলোর দুর্বলতার কারণে মামলার সংখ্যা অযথা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সঙ্গত কারণে এসব আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার অপরিহার্য। তিনি বলেন, শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও গরিব-অসহায়, হতদরিদ্র বিচারপ্রার্থীসহ আপামর বিচারপ্রার্থী জনগণকে বিচার সেবা প্রদানে সর্বস্তরের বিচারকগণ আর বেশি সংবেদনশীল ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলে বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ক্রমশ বাড়বে। বাংলাদেশের বিচার বিভাগ এশিয়ার একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হবে। সবার জন্য ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে সরকার তথা সংশ্লিষ্ট সবার আরও বেশি সহযোগিতা কাম্য। আগামীদিনে বিচার বিভাগ আরও সমুজ্জ্বল ও গতিশীল হবেÑ এ আমার হৃদয়ের গভীরতম স্থান থেকে অনুরণিত নির্মল প্রত্যাশা।
×