ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ট্রেন থেকে ফেলে হত্যা

মালয়েশিয়া থেকে ফিরলেও স্বজনের কাছে যাওয়া হলো না

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৮ জানুয়ারি ২০১৭

মালয়েশিয়া থেকে ফিরলেও স্বজনের কাছে যাওয়া হলো না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সুদূর মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরলেও স্বজনদের কাছে যাওয়া হয়নি প্রবাসী শফিকুল ইসলামের (৩৮)। বিমান থেকে নেমে ট্রেনে চড়তেই ডাকাতের কবলে পড়েন তিনি। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে তিনি ট্রেনে চেপে নিজ এলাকা সিরাজগঞ্জ রওনা হন। তারপর ডাকাতরা মালামাল লুট করে চলন্ত ট্রেন থেকে তাকে ফেলে হত্যা করেছে। মঙ্গলবার সকালে রেলওয়ে পুলিশ গাজীপুর মহানগরের হায়দারাবাদ এলাকায় ঢাকা-রাজশাহী রেলরুটের রেল লাইনের পাশ থেকে তার মরদেহটি উদ্ধার করেছে। এ সময় তার সঙ্গে একটি ব্যাগ পাওয়া গেছে। টঙ্গী রেলওয়ে জংশন ফাঁড়ির দারোগা আলাউদ্দিন ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের স্থানীয় কাউন্সিলর মাসুদুল হাসান বিল্লাল সাংবাদিকদের জানান, ঘটনা রহস্যজনক। নিহতের সঙ্গে থাকা পাসপোর্ট থেকে জানা যায়, নিহত শফিকুল ইসলাম সিরাজগঞ্জ সদরের মাঝুয়াইল গ্রামের আলতাফ হোসেনের ছেলে। তিনি সোমবার রাত ৭টার দিকে কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর থেকে দেশের উদ্দেশে বিমানে চড়েন। স্থানীয় কাউন্সিলর ও এলাকাবাসীর ধারণা, তিনি সোমবার রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন। পরে বিদেশ থেকে আনা মালামাল নিয়ে ট্রেনে চড়ে বাড়ি যাওয়ার পথে ডাকাতদের কবলে পড়েন। ডাকাতরা তার মালামাল লুট করে তাকে হত্যার পর হায়দারাবাদ এলাকায় ট্রেন থেকে ফেলে দেয়। স্থানীয়রা মঙ্গলবার সকালে রেল লাইনের পাশে মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে কাউন্সিলর মাহমুদুল হাসান বিল্লাল ও পুলিশকে খবর দেয়। এলাকাবাসী লাশের পাশ থেকে একটি ব্যাগও উদ্ধার করে। পুলিশ ওই ব্যাগ থেকে শফিকুল ইসলাম এবং তার মালয়েশিয়ান স্ত্রী সিতি হাজার বিনতির দুটি পাসপোর্ট উদ্ধার করে। পাসপোর্টে থাকা মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করে তার পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। এ বিষয়ে শফিকুলের মা রাজু বালা বেগম সাংবাদিকদের জানান, ২০০৭ সালে চাকরির উদ্দেশে শফিকুল মালয়েশিয়া যায়। সেখানে গিয়ে সে মালয়েশিয়ান এক মেয়েকে বিয়ে করে। সোমবার সফিকুল মালয়েশিয়া থেকে তার স্ত্রীর কাগজপত্র ঠিকঠাক করতে বাংলাদেশে আসে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে বিমানবন্দর স্টেশন থেকেই ট্রেনে ওঠে সিরাজগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। মঙ্গলবার সকালে হায়দরাবাদ এলাকায় রেলপথের পাশে তার লাশ পাওয়া যায়। টঙ্গী রেলওয়ে জংশন ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) আলাউদ্দিন জানান, খবর পেয়ে বেলা ১১টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তার গলায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। অপর এএসআই দেলোয়ার বলেন, সফিকুলের লাশের পাশে একটি ব্যাগ পাওয়া গেছে। সেখানে তার স্ত্রীর পাসপোর্টও পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, ছিনতাইকারীরা সফিকুলের সঙ্গে থাকা মালপত্র ছিনিয়ে নিয়ে তাকে ট্রেন থেকে ফেলে দেয়। এতে মাথায় আঘাত পেয়ে তার মৃত্যু হয়। তার শরীরে অন্য কোথাও আঘাতের তেমন চিহ্ন ছিল না। ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার পর ধাক্কা দিয়ে ট্রেন থেকে ফেলে দেয়া হয়েছে নাকি জীবিত অবস্থায় ফেলে দেয়ায় তার মৃত্যু ঘটেছে। এদিকে ঢাকা রেলওয়ে থানার ওসি ইয়াসিন ফারুক জনকণ্ঠকে বলেন, ভোরের দিকে ঢাকা থেকে যে ট্রেনগুলো যায় সেগুলোরই যাত্রী ছিলেন সফিকুল। তাকে ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া হয়েছে নাকি নিজেই দুর্ঘটনাবশত পড়ে গেছেন এটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলেই আপাতত একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর যদি দেখা যায় এটা দুর্ঘটনা নয়-তাহলে মার্ডার কেস করা হবে। সুরতহাল রিপোর্টে দেখা যায়, সফিকুলের মাথা থেতলে গেছে, পাঁজরের হাড় ভেঙ্গে গেছে।
×