ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সংশোধিত হচ্ছে ‘শিশু আইন ২০১৩’

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ১৮ জানুয়ারি ২০১৭

শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সংশোধিত হচ্ছে ‘শিশু আইন ২০১৩’

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ দেশে শিশু নির্যাতন বেড়েই চলছে। মহিলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে মোট ৪ হাজার ৯৩৭ নারী ও শিশু নির্যাতিত হয়েছে। যার মধ্যে ৭৫ ভাগই শিশু। এবং যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে। শিশু হত্যা, ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন ও শিশুদের ভিক্ষাবৃত্তিতে বাধ্য করার ঘটনা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে শিশু সুরক্ষায় ও শিশু নির্যাতনকারীদের শাস্তির আওতায় আনার জন্য ‘শিশু আইন ২০১৩’ সালে নতুন বেশ কিছু ধারা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে কোন শিশুকে আঘাত, উৎপীড়ন বা অশালীন ব্যবহার করলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে শাস্তি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া ভিক্ষার উদ্দেশ্যে কোন শিশুর অঙ্গহানি বা বিকলাঙ্গ করলে তাকেও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে শাস্তি দেয়া হবে। শিশুদের সুরক্ষার জন্য ২০১৩ সালে শিশু আইন তৈরি করা হয়। কিন্তু এই আইনের বিভিন্ন ধারা-উপধারাতে অস্পষ্টতা থাকায় উচ্চ আদালতের নির্দেশের পর ‘শিশু আইন’ সংশোধন করছে সরকার। ২০১৩ সালের শিশু আইনের অস্পষ্টতা দূর করাসহ নতুন ধারা-উপধারা যুক্ত হচ্ছে প্রস্তাবিত আইনে। এছাড়া খসড়া আইনে আলাদা শিশু আদালত গঠনসহ এটি সর্বক্ষণিক চালু রাখার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। পাশাপাশি থানায় নারী পুলিশ কর্মকর্তা নিয়োগ, ‘শহর শিশু কল্যাণ বোর্ড’, অধিদফতর ও বিভাগীয় পর্যায়ে শিশু অধিকার সুরক্ষা অধিশাখা গঠন করার বিধান রাখা হয়েছে খসড়ায়। শিশু সুরক্ষায় দেশের প্রতিটি ওয়ার্ডে সমাজভিত্তিক কমিটি গঠন করবে সরকার। সমাজভিত্তিক ওয়ার্ডে একজন কাউন্সিলর, একজন শিক্ষক, ইউনিয়ন বা পৌর স্বাস্থ্যকর্মী, আনসার-ভিডিপি নেত্রী, অবসরপ্রাপ্ত একজন সরকারী কর্মকর্তা, একজন ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, একজন কিশোর ও একজন কিশোরী, দুজন স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তি একজন এনজিওকর্মী এবং একজন সমাজকর্মী থাকবেন বলে সংশোধিত আইনের খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির সঙ্গে ‘শিশু অপরাধী’র বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া যাবে না। পাশাপাশি একই মামলায় শিশু ও প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তিকে আসামি করা হলে, সেক্ষেত্রে শিশু আদালতেই শিশুদের বিচার করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া, সংশোধিত আইনের খসড়ায় শিশুর বয়স অন্তত একদিন কমিয়ে নির্ধারণ করা হচ্ছে। বিদ্যমান আইনে ১৮ বছর পর্যন্ত সব ব্যক্তিকে শিশু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সংশোধিত আইনে ‘১৮ বছরের নিচে’ সব ব্যক্তিকে শিশু বলে গণ্য করা হবে। পাবলিক পরীক্ষার নিবন্ধন সনদ, টিকা গ্রহণের কার্ড, জন্ম সময়ের হাসপাতালের ছাড়পত্র, পাসপোর্ট ইত্যাদি বিবেচনা করে শিশুর বয়স নির্ধারণে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। শিশু আইনের খসড়া প্রস্তুত করেছে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়। আগামী ১৬ জানুয়ারি খসড়াটিতে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়, নারী সংগঠন, বেসরকারী সংস্থা (এনজিও), ইউনিসেফ, বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিসহ সংশ্লিষ্ট সবার অভিমত চাওয়া হয়েছে। সব পক্ষের অভিমত পাওয়ার পর খসড়াটি চূড়ান্ত করা হবে। এরপর মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে অনুমোদনের জন্য। শিশু আদালত নির্ধারণ করার বিষয়ে ২০১৩ সালে শিশু আইন ১৬ ধারার ১ উপধারায় ‘ক’ সংযোজন সংশোধন খসড়ায় বলা হয়, ‘শিশু আদালত’ সর্বক্ষণিক আদালত হিসেবে গণ্য হবে। অবকাশকালীন, সরকারী ছুটি বা অন্যকোন বন্ধের দিন সংশ্লিষ্ট জেলা ও দায়রা জজ অথবা মহানগর দায়রা জজ, অতিরিক্ত দায়রা জজ পদমর্যাদার এক বিচারক শিশু আদালতের দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত থাকবেন। ২০১৩ সালের শিশু আইনের ১৩ ধারার ১ উপধারার শেষে শর্তে বলা হয়েছে, ধারা ৫৪-এর উপধারা (২)-এর শর্ত প্রতিপালনের উদ্দেশ্যে প্রতি থানায় একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তার পদায়ন নিশ্চিত করতে হবে। বিদ্যমান আইনের সংশ্লিষ্ট ধারার শর্তে বলা রয়েছে, নারী সাব-ইন্সপেক্টর কর্মরত থাকলে ওই ডেস্কের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
×