ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং দিবস উদ্যাপন

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ১৮ জানুয়ারি ২০১৭

দেশের প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং দিবস উদ্যাপন

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ ॥ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার জৈনসার ইউপির ভবানীপুর গ্রাম। মাঘের সকালে আসতেই গ্রামীণ এই জনপদটির কর্মচঞ্চল মানুষের আনাগোনা দেখে সহজেই অনুমেয় গ্রামটি বেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এই গ্রামের বাজারে প্রবেশ করতে আরও ভাল লেগেছে। মফস্বলের এই বাজারে মানুষের কেনা-কাটায় রয়েছে আলাদা বৈশিষ্ট্য। গ্রামের উৎপাদিক সতেজ নানা সবজিসহ কৃষি সামগ্রী কেনা-বেচার ধুম। রয়েছে কুটিরশিল্পের নানা সামগ্রীও। আর এই বাজারই বাংলার প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং শুরু হয়। ১৭ জানুয়ারির এই দিনটিতেই ব্যাংক এশিয়া এজেন্ট ব্যাংকিং যাত্রা শুরু করে এই বাজার থেকে। তাও তিন বছর গত। সেই তৃতীয় বর্ষ উদযাপনে তাই নানান আয়োজন। এখানে বিশেষ এক পরিবেশ বিরাজ করছিল। বাজারের মাঠে মঞ্চ এবং প্যান্ডেল করে উৎসবটি আয়োজন করে। ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিং দিবস উদযাপন শুরু হয় কেক কেটে। তখন মঙ্গলবার সকাল। কুয়াশা কেটে রোদের আলো ছড়িয়ে পড়ছে। তবে মাঠের ঘাস তখনও শিশির ভেজা। আর মাঠের পাশের কুটিরশিল্পের পসরা বেশ আকর্ষণীয়। কুটিরশিল্পের এই পসরা মান কাড়বে যে কাউকেই। এমনই এক চমৎকার পরিবেশে কেক কাটার পরই উৎসবের আলোচনা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সিরাজদিখান উপজেলা চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ। ব্যাংকের এশিয়া এসইভিপি মোঃ আদিল রায়হানের সভাপতিত্বে এতে অংশ নেন জৈনসার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম দুদু, মুন্সীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুত এজিএম দেব কুমার মালো, এজেন্ট ব্যাংকিং ডিভিশনের ভিপি মোঃ আহসান উল আলম, ব্যাংক এশিয়ার হেড অব এডিসি মোঃ মনিরুজ্জামান খান, সিরাজদিখান থানার ওসি মোঃ ইয়ারদৌস হাসান, ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপক শংকর কুমার রায় প্রমুখ। পরে অতিথিরা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের গত তিন বছরের আর্থিক আওতায় অর্জিত সাফল্যের কথা তুলে ধরেন এবং পৃথক পৃথক বাণীতে দেশের প্রতিটি অঞ্চলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। প্রধান অতিথি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিং বাংলাদেশ চিত্র পাল্টে দিচ্ছে। অনগ্রসর এবং গ্রামের মানুষ এই ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে যে কি উপকার পাচ্ছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। যারা গ্রামে বসবাস করেন তৃণমূল মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন শুধু তারাই বুঝতে পারবেন এর বাস্তবতা। ব্যাংক এশিয়ার স্থানীয় শাখার ব্যবস্থাপক শংকর কুমার রায় জানান, ব্যাংক এশিয়া ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের ৪৯টি জেলার ২২২টি উপজেলায় ১২০০ উপরে এজেন্ট আউটলেট এবং ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের ১৯.১৫ লাখ লেনদেনের মাধ্যমে ২,৮৪৩ কোটি টাকার সেবা প্রদান করেছে। বর্তমানে সারাদেশে এজেন্ট গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার। এ সেবা দ্রুত সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ব্যাংক এশিয়া ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারসহ সরকারী ও বেসরকারী ইউনিয়ন সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং এ২আই প্রকল্পসহ উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপি, ডব্লিউএফপি, সিএআরই, সুইসকন্টাকট, ইউএসএআইডি এবং মাস্টার কার্ডসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি সেবা এগিয়ে নিচ্ছে। দেশের ব্যাংকিং সেবা বহির্ভূত বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নে ২০১৩ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নীতিমালা অনুসরণ করে ব্যাংক এশিয়া বাংলাদেশে সর্ব প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং প্রবর্তন করে। আনুষ্ঠানিকভাবে এজেন্ট আউটলেট চালু করা হয় ২০১৪ সালের এই দিনে। তাই জানুয়ারি মাসের ১৭ তারিখটি বাংলাদেশের ব্যাংকিং জগতের স্মরণীয় একটি দিন। এই দিনটিকে স্মরণ করতেই তৃতীয় বছর পূর্তিতে প্রথম এই ব্যাংকের গ্রামেরই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়। ব্যাংক এশিয়ার জনসংযোগ কর্মকর্তা ফাস্ট এ্যাসিস্টেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট রুহুল মতিন বলেন, জৈনসারের ভবানীপুরে গ্রামটিতে এসে আমার নিজেরই ধারণা পাল্টে গেছে। গ্রামীণ মানুষ যে কত মমতা দিয়ে কুটিরশিল্পকে এগিয়ে নিচ্ছেন না দেখলে তা ধারণা করা যেত না।
×