ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মেরকেল

ইউরোপের ভাগ্য নিজেদের হাতে

প্রকাশিত: ০৪:০০, ১৮ জানুয়ারি ২০১৭

ইউরোপের ভাগ্য নিজেদের হাতে

ইউরোপ সম্পর্কে আগামী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন মন্তব্যের পর সোমবার ইউরোপীয় নেতারা ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের আশঙ্কা, ট্রাম্পের মন্তব্য ইউরোপের সংহতি ও ট্রান্স-আটলান্টিক জোটের (ন্যাটো) প্রতি ওয়াশিংটনের কয়েক দশকের সমর্থনের অবসানের ইঙ্গিত হতে পারে। খবর ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল অনলাইনের। জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেল বার্লিনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ইউরোপীয়দের ভাগ্য আমাদের নিজেদের হাতেই। তিনি বলেন, মার্কিন নীতির অনিশ্চয়তার মুখে কন্টিনেন্টের রাজধানীগুলোর ঘনিষ্ঠভাবে মিলে-মিশে কাজ করা এবং ভবিষ্যতের দিকে তাকানো উচিত। পত্রপত্রিকার সঙ্গে ট্রাম্পের এক সাক্ষাতকারের পর মেরকেলের মন্তব্য ও ইউরোপের রাজনীতিকদের অনুরূপ অন্যান্য প্রতিক্রিয়া প্রকাশিত হয়। ঐ সাক্ষাতকারে ট্রাম্প উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থাকে (ন্যাটো) এর বর্তমান আকারে সেকেলে’ বলে ঘোষণা করেন এবং অন্যান্য দেশ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগে ব্রিটেনের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপ নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকিয়েছে। সোমবার নেতারা ট্রাম্পের সঙ্গে মতৈক্যে পৌঁছানোর চেষ্টা চালাতে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। কিন্তু তারা বলেন যে, ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে শুরু করে বাণিজ্য নীতি পর্যন্ত বিভিন্ন ইস্যুতে ওয়াশিংটনের সঙ্গে গভীর মতপার্থক্যের মধ্যে দেশগুলোর আরও আত্মশক্তি প্রদর্শন করা এবং স্বনির্ভর হওয়া প্রয়োজন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বহু ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। যুক্তরাজ্যের গণভোটের মাধ্যমে ইইউ ত্যাগ, ইউরোজোনের ঋণ সঙ্কট এবং মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা থেকে বিশাল সংখ্যক শরণার্থীর আগমন ব্লকের দিকে থাকার সামর্থ্যরে এক পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শরণার্থী-স্রোত ইউরোপের দেশে-দেশে জাতীয়তাবাদী ও এস্টাব্লিশমেন্টবিরোধী রাজনীতির উদ্ভব ঘটিয়েছে। এ ছাড়াও, কন্টিনেন্টের উদীয়মান রাশিয়াকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে। রাশিয়া পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলোকে দুর্বল করে দিতে বদ্ধপরিকর বলে কর্মকর্তারা মন্তব্য করেন। গত দেড় বছরে ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও জার্মানিতে কয়েকটি বড় হামলার পর ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী তৎপরতাও কন্টিনেন্টের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। জার্মানির বিল্ড ও লন্ডনের টাইমস পত্রিকার সঙ্গে ট্রাম্প ঐ সাক্ষাতকারে তার ইতিপূর্বে বলা মন্তব্যই বহুলাংশে পুনর্ব্যক্ত করেন। কিন্তু তার কথাবার্তা সোমবার ব্রাসেলসে সমবেত ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বিচলিত করে তোলে। ট্রাম্প তার দায়িত্ব নেয়ার প্রস্তুতি গ্রহণের সময় তার অবস্থানকে নরম করবেন বলে তারা আশা করেছিলেন। ফরাসী পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাঁ মার্ক আরো বলেন, ইউরোপীয়দের যে একতাবদ্ধ হওয়া উচিত, ট্রাম্পের মন্তব্য সেটিই স্পষ্ট করে তোলে। তিনি বলেন, ব্রেক্সিটের ক্ষেত্রে যেমন সত্য, ইউরোপকে রক্ষা করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো ট্রাম্প আমাদের যা করতে আমন্ত্রণ করেছেন, তার বদলে ঐক্যবদ্ধ থাকা। অন্যদিকে ইইউকে দুর্বল করতে বা ভেঙ্গে দিতে চান এমন রাজনীতিকরা ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রশংসা করেন। ফ্রান্সের কড়া ডানপন্থী অভিবাসীবিরোধী ন্যাশনাল ফ্রন্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট লুই অলিও বলেন, ইউরোপ যে তার কাজ করছে না, তা ট্রাম্প দেখতে পাচ্ছেন। সব বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন রাজনীতিক বুঝতে পারছেন যে, আমাদের অবশ্যই ইউরোপীয় মডেল পাল্টাতে হবে এবং কোন ফেডারেল ইউরোপ নয়, দেশসমূহের এক ইউরোপ গড়তে হবে। এরই মধ্যে ইইউ কর্মকর্তারা ট্রাম্পের কোন কোন নীতিগত প্রস্তাব প্রতিহত করবেন বলে ইঙ্গিত দেন। ব্রাসেলসে ইইউর পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোগারিনি অঙ্গীকার করেন যে, ব্লক ইরান পরমাণু চুক্তির প্রতি মর্যাদা দেখানো ও তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাবে।
×